ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা অবশেষে রূপ নিয়েছে খোলাখুলি সংঘাতে। গতকাল রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে আচমকা বিমান হামলা চালায় ভারত, যার জবাবে পাল্টা আক্রমণ চালায় পাকিস্তানও। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে যাওয়া বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

এবারের পিএসএলে বাংলাদেশ থেকে তিন ক্রিকেটার অংশ নেন। তবে করাচি কিংসের হয়ে নাম লেখালেও ইনজুরির কারণে দেশে ফিরে গেছেন লিটন দাস। আর লাহোর কালান্দার্সের হয়ে ইতোমধ্যে পাঁচ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৯ উইকেট নেওয়া রিশাদ ও পেশোয়ার জালমির হয়ে এখনো অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা পেসার নাহিদ রানা রয়েছেন পাকিস্তানে।

ভারতের হামলায় পাকিস্তানের নয়টি স্থানে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ধ্বংস করেছে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে অবস্থানরত দুই বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

বিসিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রিশাদ ও নাহিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বস্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বোর্ড। বিসিবি সভাপতি ফরুক আহমেদও বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি পিএসএল সিইও সালমান নাসের ও রিশাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। পাশাপাশি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবং ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বিসিবি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পিসিবি ও হাইকমিশনের সহযোগিতায় আমরা কৃতজ্ঞ। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি এবং বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

রিশাদের দল লাহোর কালান্দার্সের হাতে রয়েছে আর মাত্র একটি ম্যাচ, আর নাহিদের পেশোয়ার জালমির রয়েছে দুটি ম্যাচ। দল প্লে-অফে উঠলে বা ফাইনালে গেলে এই দুই ক্রিকেটারের পাকিস্তানে থাকতে হতে পারে মে মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত। তবে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতির অবনতি হলে হয়তো আগেই ফিরতে হতে পারে তাদের।

এদিকে চলতি মাসের শেষদিকে পাকিস্তানে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের। মিরপুরে সেই সিরিজকে সামনে রেখে চলছে প্রস্তুতিও। তবে যুদ্ধাবস্থায় পড়ায় সেই সফর নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও বিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিরিজ নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টির সম্মেলন কাল, ইসির প্রতিনিধি চেয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে

আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হবে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করে প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জি এম কাদেরবিরোধী অংশের প্রধান নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

কাউন্সিল উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আজ শুক্রবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ কথা বলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিল করে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।’

গত ৩০ জুলাই জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশ। এরপর তিনি শনিবার দলের সম্মেলন আহ্বান করেন।

এর উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদ শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল, সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য বা স্থবির থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়। এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

মুজিবুল হক বলেন, এই ধারার ক্ষমতাবলে ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সভা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতি দ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।

মুজিবুল হক আরও বলেন, উপরন্তু দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে এটি (কাউন্সিল) সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে, এই দল কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশাহারা ভাব বিরাজ করছে, তখন জাতীয় পার্টি ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম, জিয়াউল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন, শফিকুল ইসলাম, জামাল রানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ