১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক বৈরী। এরপর থেকে কাশ্মীর প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছে দুই দেশ। 

বুধবার (৫ মে) বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে দুই দেশের বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধ ও সংঘর্ষে জড়ানোর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। 
 
দেশভাগের মাত্র কয়েক মাস পরেই প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। যা ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। 

কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে সীমান্ত লঙ্ঘন, গেরিলা অনুপ্রবেশ ও পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬৫ সালে। যুদ্ধ স্থায়ী হয় প্রায় এক মাস, কোনো পক্ষই স্পষ্ট জয় পায়নি। উভয় দেশই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং রাশিয়ার মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধটি শেষ হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণমাত্রার একটি যুদ্ধ হয়। ভারতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে পাকিস্তান বিপর্যস্ত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। 

১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘাতে পাকিস্তানি সেনারা ভারত-শাসিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করেছিল; এটি ছিল পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ। যা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের জন্ম দেয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, জঙ্গি হামলার পর উত্তেজনা বেড়েছে। ২০১৬ সালে ভারত প্রথম ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ শুরু করে। তাদের সর্বশেষ হামলাটি হয় ২০১৬ সালে।

ওই বছর উরিতে সশস্ত্র যোদ্ধাদের হামলায় ১৭ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর সীমান্ত পার হয়ে ‘লঞ্চ প্যাড’ নামে ওই হামলা চালায় নয়া দিল্লি। ওই সময় নয়া দিল্লি অভিযোগ করে, হামলাকারীরা নতুন করে আক্রমণের ছক কষছিল।

অভিযানের পর ভারতের তৎকালীন সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর-জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “হামলাকারীরা যেন ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষতি করার সুযোগ না পায়, সে জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে।”

পাকিস্তান তাদের নিজস্ব বিমান আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা কার্গিলের পর থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক উত্তেজনার একটি।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির ৪০ আধা-সামরিক সেনাকে হত্যা করেন এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী।

ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ওই হামলা হয়। হামলার দায় স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জয়শ-ই-মুহাম্মদ।

ওই সময় তীব্র ক্ষোভের মধ্যে পড়ে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী।

হামলার পর নয়া দিল্লি দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানায় আঘাত হেনেছে এবং কয়েক ডজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের যুদ্ধবিমান একটা বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং এতে কারো মৃত্যু হয়নি।

ইসলামাবাদ দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতের বিমানকে ধাওয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ফিরে যেতে বাধ্য করে।

এ ঘটনার একদিন পর ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার সমাপ্তি ঘটে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ভারতীয় একটি বিমান ভূপাতিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ওই সময় ভারতীয় এক পাইলট আটক হন এবং কয়েক দিন পর দেশে ফেরেন।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটক হত্যার ঘটনা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় অস্থিরতা। এর মাঝেই বুধবার ভোর রাতে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সীমান্ত এলাকায় ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

পাবিপ্রবি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ২১ নাম্বার আলোচ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

আরো পড়ুন:

জাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী ১৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর শাস্তি

টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার

বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২৪ মে পর্যন্ত তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষ করে এর রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে অন্তত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, দুইটি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং একটি অভিযোগ অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।

রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে, ১১ জনের আজীবনের জন্য সনদ বাতিল, সাতজনের ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত, ছয়জনের আজীবন বহিষ্কার এবং চারজনের ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

আজীবনের জন্য সনদ বাতিল হয়েছে- লিংকন হোসেন (বাংলা বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), মো. নুরুল্লাহ (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ), মাসুদ রানা সরকার (গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), হামিদুর রহমান শামীম (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), ইকরামুল ইসলাম (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত (সমাজকর্ম বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), রাসেল হোসেন রিয়াদ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), বিল্লাল হোসেন (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), সুরুজ মিয়া আপেল (গণিত বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), শেহজাদ হাসান (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এবং শিবু দাসের (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।

৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত হয়েছে- শাহেদ জামিন হিরা (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), নাজমুল ইসলাম আবীর (গণিত বিভাগ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ), সাব্বির হোসেন সবুজ (বাংলা বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), শেখ রাসেল (লোক প্রশাসন বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ), সোহানুর রহমান সোহান (ইংরেজি বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), জহরুল ইসলাম পিয়াস (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) ও জাহির রায়হানের (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।

এছাড়া আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে- ফরিদুল ইসলাম বাবু (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ), নাইমুর নাহিদ ইমন (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), আশিক আরমান শোভন (স্থাপত্য বিভাগ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ), তৌফিক হাসান হৃদয় (ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ), অয়ন আলমাস (বাংলা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও তানশু দাসের (ইতিহাস বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)।

৩ বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছে- আশরাফুল ইসলাম (গণিত বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), আকাশ ভূঁইয়া (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ), অনিক পোদ্দার (ইতিহাস বিভাগ,  ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ও শাহ আলমের (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ)। শাস্তি পাওয়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, “যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেসব ২৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে বারবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে কারো প্রতি অবিচার করা হয়নি।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যাপল ওয়াচের একটি মডেল থেকে প্রযুক্তি সমর্থন প্রত্যাহার করল অ্যাপল
  • সনদ বাতিল, আজীবন বহিষ্কারসহ ২৮ শিক্ষার্থীকে শাস্তির সিদ্ধান্ত
  • পাবিপ্রবি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮ নেতাকর্মী বহিষ্কার