বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় ২ শিক্ষকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 7th, May 2025 GMT
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় দুই শিক্ষকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরের তাজহাট থানায় মামলাটি করেন।
তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৬ নম্বর আসামি সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস শাখা) মোকতারুল ইসলামকে আজ বুধবার সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেন। ১১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৬ জুলাই পুলিশ ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন আসামি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, রামদা, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। পুলিশও নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসানসহ ছাত্রলীগের ৩৬ জনকে ১ থেকে ৩৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যুবলীগের রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকীসহ বহিরাগত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ১৩ জন আসামি হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানকে আসামি হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।
মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহানুর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, তাজহাট থানার তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, আমির আলী আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে সুজন চন্দ্র রায় ও আমির আলী কারাগারে আছেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ পরে সাংবাদিকদের জানানো হবে বলে জানান। তবে মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেট কমিটির অনুমোদন ও অফিশিয়াল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা করতে দেরি হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টেকনাফে ইউপি সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা
কক্সবাজারের টেকনাফর উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. ইউনুস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে নিহতের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জায়েদ নূর মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় আট জনের নাম উল্লেখ এবং ৭-৮জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
গলা কেটে বিড়াল হত্যা, থানায় জিডি
স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে হত্যা করে জহুরুলকে: পুলিশ
কোহিনুর আক্তারের অভিযোগ, তার স্বামী স্বামী ইউনুস সাবেক ইউপি সদস্য এবং টেকনাফ উপজেলা আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের সভাপতি। গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে মো. আলম নামে এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আটকে রাখা হয় ইউনুসকে। এরপর ৭০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ফেরত দেওয়ার কথা বললেও, ইউনুসের মরদেহ ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার হয়।
কোহিনুর আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে দাওয়াতের কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আলম শফুর গ্রুপ। তাদের সঙ্গে তার কোনো টাকার লেনদেন ছিল না। তারা সকালে আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত দেবে বলেছিল, কিন্তু পেলাম শুধু লাশ। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।”
গত বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ইউনুসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ