রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় দুই শিক্ষকসহ ৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরের তাজহাট থানায় মামলাটি করেন।

তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৬ নম্বর আসামি সহকারী রেজিস্ট্রার (ডেসপাস শাখা) মোকতারুল ইসলামকে আজ বুধবার সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেন। ১১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৬ জুলাই পুলিশ ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন আসামি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, রামদা, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। পুলিশও নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসানসহ ছাত্রলীগের ৩৬ জনকে ১ থেকে ৩৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যুবলীগের রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকীসহ বহিরাগত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ১৩ জন আসামি হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল এবং গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমানকে আসামি হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তাঁরা আত্মগোপনে আছেন। এ ছাড়া আসামির তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন।

মহানগর পুলিশের সাবেক উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন, অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহানুর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী পুলিশ কমিশনার আল ইমরান হোসেন, আরিফুজ্জামান, তাজহাট থানার তৎকালীন ওসি রবিউল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ রায়, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, আমির আলী আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে সুজন চন্দ্র রায় ও আমির আলী কারাগারে আছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ পরে সাংবাদিকদের জানানো হবে বলে জানান। তবে মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেট কমিটির অনুমোদন ও অফিশিয়াল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা করতে দেরি হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও জোরদার হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শিক্ষকসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

গত বছরের ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ নামে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ২১ জন কর্মচারী এবং ৩১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ সোমবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের মধ্যে ৬ জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৮ জনকে নিম্ন পদে অবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কার করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮ জনকে বরখাস্ত, ৮ জনকে অপসারণ, ৭ জনকে তিরস্কার এবং ১ জনকে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে ২ জনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিল করা হয়েছে।

ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ২১ জনকে শাস্তি

এ ঘটনার পাশাপাশি ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় আরও ২১ জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে ১৮ জন শিক্ষার্থী (১৫ জনের সনদপত্র বাতিল এবং ৩ জনকে আজীবন বহিষ্কার), ২ জন শিক্ষক (একজনকে নিম্নপদে অবনমন এবং অন্যজনের পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত) ও ১ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি বিভিন্ন আলোচনা, সাক্ষাৎকার, তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তি সুপারিশ করেছে এবং সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ মে সিন্ডিকেট সভায় এই শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সভায় পরিসমর্থন হয়েছে। ৩ জন শিক্ষক এর মধ্যে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন যে তদন্ত কমিটি বৈধ নয়। সে রিট গতকাল খারিজ হয়েছে। আজকে থেকে তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ শিক্ষকসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা