জুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৩ কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
Published: 8th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীতে জুলাই অভ্যুত্থানে এক শহীদের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় তিন কিশোরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার দুমকি থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
জুলাই আন্দোলনে শহীদ বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দুমকির একটি গ্রামে ওই কলেজছাত্রী (১৭) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় সে বাদী হয়ে দুমকি থানায় একটি মামলা করে। পরে এজাহারভুক্ত দুই কিশোরকে আইনের আওতায় এনে যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্ত চলাকালে গত ২৬ এপ্রিল রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আটক ১১৯ মার্চ ২০২৫অভিযোগপত্র প্রসঙ্গে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সাজেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই কিশোরের নাম উল্লেখ করে বাদী থানায় মামলা করে। কিন্তু মামলার তদন্তকালে এ ঘটনায় আরেক কিশোরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তিনি জানান, ২২ মার্চ এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ২৭ মার্চ আদালত এক আসামিকে যশোর শিশু সংশোধনাগারে তিন দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরেক কিশোরের জড়িত থাকার কথা জানায়।
আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার২১ মার্চ ২০২৫পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্ত ওই কিশোরকে আইনের আওতায় আনতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু আত্মগোপনে থাকায় সম্ভব হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাজেদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালে ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার আদাবর থানা এলাকায় বাদীর (কলেজছাত্রী) আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এসব কারণে পুলিশ মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।
আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে শহীদ বাবার কবরের পাশে শায়িত কলেজছাত্রী, কান্না থামছে না মায়ের২৭ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার২৬ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আবাসিক হোটেলে আটকে রেখে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, পরে বিক্রি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সাতক্ষীরার এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় নোয়াখালীর এক কিশোরীর (১৭)। সেই পরিচয় গড়ায় প্রেমে। সেই সূত্রে মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে ঢাকায় আনে কথিত প্রেমিক। যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে আটকে চালানো হয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। পরে ওই কিশোরীকে বিক্রি করে দেওয়া হয় দেহব্যবসায়ী চক্রের কাছে। মাসখানেক পর উদ্ধার হয়েছে মেয়েটি।
করুণ পরিণতির শিকার ওই কিশোরী এখন নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সপ্তাহখানেক আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। আজ রোববার দুপুরে মেয়েটির মা সুধারাম মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দম আইনে মামলা করেন। এতে দু’জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।
মেয়েটি নোয়াখালী সদরের একটি ফাজিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্বজনেরা জানায়, টেলিগ্রামে কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মজবুখালী গ্রামের এক তরুণের (২০)। এর সূত্র ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ মে সকালে নোয়াখালীর মাইজদী থেকে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে যায় কথিত প্রেমিক। এ সময় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল সে। দু’জন যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে।
মেয়েটি জানায়, ঢাকা যাওয়ার পর পানি চেয়েছিল সে। তার কথিত প্রেমিক চেতনানাশক মেশানো পানি দিলে সে পান করে জ্ঞান হারায়। এ সময় সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। চেতনা ফিরে দেখতে পায়, তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। মোবাইল ফোন ফেরত চাইলে নির্যাতন শুরু হতো। তার কথিত প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে দিনে ৭-৮ বার ধর্ষণ করেছে। এভাবে ২১ দিন চলার পর তাকে বিক্রি করে পালিয়ে যায় ওই তরুণ।
যে চক্রের কাছে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়, সেখানে আরেক তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। তার মা জানান, একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় ঢাকার জুরাইন থেকে ১৫ জুন বিকেলে মেয়েকে উদ্ধার করেন। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
সুধারাম থানার ওসি কামরুল ইসলামের ভাষ্য, ভুক্তভোগী কিশোরী মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করে। সাতক্ষীরার ওই ছেলের সঙ্গে টেলিগ্রামে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে ধর্ষণ ও দেহ ব্যবসায়ী চক্রের কাছে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।