শিক্ষক পরিবারের আর্তনাদ “বাঁচতে চাই, ন্যায়ের বিচার চাই”
Published: 24th, October 2025 GMT
সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে জাতীয় পার্টির নেতা মকবুল হোসেন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এক নিরীহ শিক্ষক পরিবারের পৈতৃক সম্পত্তি দখল, চাঁদাবাজি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, মৃত হাসমত আলীর চার পুত্রের নামে থাকা ২৩ শতাংশ জমি (চরগোবিন্দপুর মৌজার এস.
পরিবারটি বিষয়টি লিখিতভাবে সোনারগাঁ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সালিশি উদ্যোগ নিলে মকবুল ও তার সহযোগীরা স্থানীয় ব্যক্তিদেরও অপমান ও লাঞ্ছিত করেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “মকবুল জাতীয় পার্টির নেতা হলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যবহার করে বহুদিন ধরে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। তার অন্যায়, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ।”
আরেক স্থানীয় মো. শফিউল্লাহ বলেন, “সে যুব উন্নয়ন অফিসে চাকরি করে। রাজনৈতিক প্রভাব ও কিছু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় সব অপকর্ম করে বেড়ায়।”
প্রত্যক্ষদর্শী জাকারিয়া জানান, “মকবুল ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় ভয়ভীতি ছড়িয়ে রেখেছে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মকবুল শুধু ভূমিদস্যুই নয়, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভয়ভীতি ও হামলার শিকার হন। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনের সময় সে তার লোকজন নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করত এবং অনেককেই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে।”
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মকবুলের দোসররা প্রায়ই দোকান ও বাড়িঘরে গিয়ে চাঁদা দাবি করে; না দিলে হুমকি দেয় বা মারধর করে। এতে সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্লাবন বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায়ের বিচার চাই। যেন মকবুল ও তার দোসরদের অন্যায় দখল, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অবসান ঘটে এবং এলাকায় শান্তি ফিরে আসে।”
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদটি শূন্য থাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ব চ ছ স বক ল গ স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ মকব ল ও ত র পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে সিপিজের চিঠি
বাংলাদেশে কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছে। সিপিজের ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে সিপিজের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিচালক বেহ লি ইয়ি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠিটি লিখেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, সিপিজের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে হত্যার অভিযোগে চার সাংবাদিক কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ঘাটতি আছে। মনে হচ্ছে, তাদের সংবাদ প্রতিবেদন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে প্রতিহিংসামূলকভাবে এসব মামলা করা হয়েছে।
সিপিজের চিঠিতে নাম উল্লেখ করা চার সাংবাদিক হলেন ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। এতে বলা হয়েছে, বারবার এই সাংবাদিকদের জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ে যে ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে বন্দীদের মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা (বন্দী সাংবাদিকেরা) ৩৬ বর্গফুট (৩ দশমিক ৩৪ বর্গমিটার) আকারের অত্যন্ত ছোট কক্ষে বন্দী আছেন। কক্ষগুলোতে দরজার পরিবর্তে ধাতব বেষ্টনী দেওয়া। এতে তাঁদের ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে হয়, সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রব। তাঁরা কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমান, কোনো ম্যাট্রেস নেই। কারাগার থেকে সরবরাহ করা খাবারের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। প্রায়ই সেগুলো খাওয়ার উপযোগী থাকে না।
কারাগারের চিকিৎসাসেবা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে চিঠিতে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, কারাগারে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই, নিয়মিত পরীক্ষার সুবিধা নেই এবং পরিবার থেকে সরবরাহ করা না হলে বন্দীরা ওষুধ পান না। যাঁরা ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা) মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কয়েক মাস ধরে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারকে মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর সরকার তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অথচ গত বছর প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরই ওই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টির উল্লেখ করে সিপিজের চিঠিতে বলা হয়, বিচারব্যবস্থা বারবারই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার–সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছে সিপিজে।
আরও পড়ুনসাংবাদিকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার আহ্বান সিপিজের১৭ জুলাই ২০২৪চিঠিতে মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যা বাংলাদেশে কারাবন্দী সব সাংবাদিককে তাঁদের পরিবারের কাছে ফেরার এবং নতুন করে কাজ শুরু করার সুযোগ দেবে।’
সিপিজে মনে করে, বাস্তব সংস্কার নিশ্চিত করার জন্য অতীতের চর্চাগুলো থেকে একেবারে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। অতীতের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, তখন সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের অধিকারের প্রতি সম্মান রাখাটা সব রাজনৈতিক দলের জন্য জরুরি।
আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে০১ আগস্ট ২০২৫