কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ, ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য যত নির্দেশনা
Published: 8th, May 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এ, বি এবং সি ইউনিটের বিভাগসহ প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিবাগত রাত ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ভর্তি–ইচ্ছুকরা নিজ নিজ প্যানেলে প্রবেশ করে তাঁদের ফল দেখতে পারবেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানানো হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে আগামী ১ জুলাই।
আজ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে চার বছর পর এবার নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এবং সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২২ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ এবং সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।
ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য যত নির্দেশনা*বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ১২ থেকে ১৫ মের মধ্যে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট অনুষদ থেকে অফিস চলাকালে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা) সশরীর উপস্থিত হয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে বিভাগের মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। ভর্তির জন্য পূরণ করা ফরমের সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের মূল কপি প্রদর্শন সাপেক্ষে এক কপি ফটোকপি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল নম্বরপত্র/ট্রান্সক্রিপ্ট, সদ্য তোলা পাসপোর্ট আকারের চার কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি বাবদ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া ডিন অফিসের উন্নয়ন ফি ও বিভাগের উন্নয়ন ফি প্রদান করতে হবে।
*ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশন অন/অফের (চালু/বন্ধ) শেষ সময় ১৬ মে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত। তবে মাইগ্রেশন অফ করলে পরবর্তী সময়ে অন করার কোনো সুযোগ থাকবে না। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে আগামী ১ জুলাই। ভর্তি–সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানা যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএর ওপর ৩০ নম্বর কমিয়ে ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের মেধাতালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা ১০০ নম্বরের এবং বাকি ২০ নম্বর থাকবে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৩০টি আসনের বিপরীতে এবার এ, বি এবং সি—তিনটি ইউনিটে মোট আবেদন জমা পড়েছে ৬৬ হাজার ৪০২টি। সে হিসাবে এবার প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৪।
এ ইউনিটে ৩২ হাজার ৬৫৭ জন আবেদনকারীর মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন ২১ হাজার ৯৯৪ শিক্ষার্থী। শতাংশ হিসাবে যা উপস্থিতির হার ৬৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এই ইউনিটে মোট আসন রয়েছে ৩৫০টি। এ ইউনিটে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ হাজার ৪৮৯ জন, পাসের হার ৩৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ নম্বর ছিল ৭৭।
বি ইউনিটে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২৩ হাজার ৭৯৩ জন। পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন ১৬ হাজার ৭৫৮ জন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮ হাজার ৩৩২ জন। এর মধ্যে কলা ও মানবিকে ৬ হাজার ৮৫৬ জন, বিজ্ঞানে ১ হাজার ৫২ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৪২৪ জন। জিপিএ ছাড়া সর্বোচ্চ নম্বর কলা ও মানবিকে ৮৬ দশমিক ২৫, বিজ্ঞানে ৭০ দশমিক ২৫ এবং বিজনেস স্টাডিজে ৭২ দশমিক ৫০ পেয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। পাসের হার ৪৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯ হাজার ৯৫২ জন আবেদনকারীর মধ্যে ৭ হাজার ৬৪৬ জন পরীক্ষা দিয়েছেন, যা শতাংশ হিসাবে উপস্থিতির হার ৭৬ দশমিক ৮৩। সি ইউনিটে মোট ২৪০টি আসন রয়েছে। সি ইউনিটে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৫ হাজার ৩৩৩ জন। পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭৫ এবং সর্বোচ্চ নম্বর ৮৮।
আরও পড়ুনকম খরচ এবং সহজে ভিসার কারণে উচ্চশিক্ষায় বেছে নিতে পারেন এই ৫ দেশ৬ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের রুটিন প্রকাশ, পরীক্ষা ৮ জুলাই শুরু, প্রতিদিন ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারার পরামর্শ পরীক্ষার্থীদের০৬ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ দ র পর ক ষ য় উপস থ ত র জন য দশম ক আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
হোটেল বয় থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিল্লাল, মাসে আয় লাখ লাখ টাকা
একসময় হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন শেরপুরের নকলার বিল্লাল হোসেন। বেতন ছিল মাসে ১০ হাজার টাকা। সেই বিল্লালের এখন মাসিক আয় কয়েক লাখ টাকা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও তৈরি করে এই আয় করেন।
বিল্লাল এখন ফেসবুকে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাঁর পেজের নাম ‘থটস অব বিল্লাল’, অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। ছন্দে ছন্দে কথা বলে বানানো ভিডিও তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। সেসব ভিডিওর লাখ লাখ ভিউ হয়। সেই ভিউর ভিত্তিতেই তিনি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করেন।
উপজেলার হুজুরীকান্দা গ্রামের মৃত কৃষক আবুল কালামের ছেলে বিল্লাল। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এসএসসি পাস করেছেন ২০১৩ সালে, এইচএসসি ২০১৫ সালে। এরপর তিনি বিএসসিতে ভর্তি হন। খরচ চালাতে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। পরে ২০১৯ সালে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভর্তি হন।
পরের বছর চাকরির খোঁজে কক্সবাজারে গিয়ে বিল্লাল একটি হোটেলে কাজ পান। মাস শেষে পেতেন ১০ হাজার টাকা। করোনার প্রকোপ শুরু হলে চাকরি হারান তিনি। এরপর তাঁর মনে হয়, তিনি বিদেশে যাবেন। এক দালালকে ৬০ হাজার টাকাও দেন। তবে তিনি প্রতারণার শিকার হন। ২০২১ সালে আবার কক্সবাজারে গিয়ে একটি হোটেলে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। সেই সময় তিনি হোটেলের অতিথিদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া ও আদবকেতা শেখার চেষ্টা করতেন।
হোটেলে চাকরির সময়টায় বিল্লাল মন দিয়ে পত্রিকা পড়তেন। ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখতেন। নিজে রান্না করে নতুন স্বাদের খাবার তৈরির চেষ্টা করতেন। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ‘থটস অব বিল্লাল’ নামের ফেসবুক পেজ খুলে তিনি ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন। ভিডিওতে থাকত নিজের রান্না, জীবনের কথা ও মানবিক নানা গল্প। যখন থেকে বিল্লাল ছন্দে ছন্দে ছোট ছোট ভিডিও বা রিলস তৈরি করা শুরু করলেন, তখন থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল।
২০২৪ সালের আগস্টে বিল্লাল হোটেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি কনটেন্ট তৈরির কাজে মন দেন। মাত্র কয়েক মাসে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ৩ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০ লাখের কাছাকাছি। বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ফেসবুক থেকে তাঁর আয় ছিল আট লাখ টাকা। ডিসেম্বরে তাঁর আয় দাঁড়ায় ১৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৪ লাখ ৬৭ হাজার, মার্চে ৪ লাখ ১৪ হাজার ও এপ্রিলে ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।
ভিডিও তৈরির কাজে বিল্লালকে সহযোগিতা করেন রাকিবুল হাসান। তিনিও হোটেলে কাজ করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এখন বিল্লালের সঙ্গেই আছেন। মাসে বেতন পান ৫০ হাজার টাকা। বিল্লালের পেজে গিয়ে দেখা গেল, অসহায় অনেক মানুষের গল্প তিনি তুলে ধরেছেন। ফলোয়ারদের কেউ কেউ তাঁদের জন্য সাহায্য পাঠালে তিনি সেগুলো পৌঁছে দেন। ভিডিও প্রকাশ করে সেই কথাও সবাইকে জানিয়ে দেন।
বিল্লাল তাঁর সফলতার জন্য মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এসব কাজ শুরুর জন্য তাঁর একটি স্মার্টফোনের দরকার ছিল। তাঁর মা একটি বাছুর বিক্রি করে তাঁকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা দেন। সেই টাকায় তিনি একটি স্মার্টফোন কেনেন। এই ফোন দিয়েই বদলে যেতে থাকে বিল্লালের জীবন। বিল্লাল স্বপ্ন দেখেন, আরও বড় পরিসরে কিছু করার। তাঁর চাওয়া, গ্রামের ছেলেরা যেন তাঁকে দেখে উৎসাহ পান, তাঁরা যেন প্রতিজ্ঞা করেন—‘আমিও পারব’।