ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের আবহে রাফালসহ পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার যে দাবি পাকিস্তান করেছে, সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না। এ বিষয়ে পাকিস্তানের দাবি ও প্রচার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ বৃহস্পতিবার ব্রিফিংয়ে সরাসরি কোনো উত্তর দিলেন না। তিনি কেবল বললেন, ঠিক সময়ে সরকারিভাবে এর উত্তর নিশ্চয় দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে দ্বিতীয়বার গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক ঘাঁটিতে পাকিস্তানের হামলা ভারত কীভাবে প্রতিহত করেছে তা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, বৃহস্পতিবার ভারতীয় বিমানবাহিনী লাহোরের এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা নষ্ট করে দিয়েছে।

ব্রিফিংয়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা দাবি করেন, পাকিস্তান আক্রমণ করেছিল অবন্তীপুরা, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, অমৃতসর, কাপুরথালা, জলন্ধর, লুধিয়ানা, আদমপুর, বাটিন্ডা, চণ্ডীগড়, নাল, ফালোদি, উত্তরলাই ও ভুজের সামরিক ঘাঁটি। এই কাজে তারা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ভারত তা সাফল্যের সঙ্গে প্রতিহত করেছে। পাকিস্তানের আক্রমণের এসব চিহ্ন জড়ো করা হচ্ছে।

এই ঘোষণার পর বিক্রম মিশ্রি সংঘাত পরিস্থিতি, নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর ভারতের আক্রমণ এবং সেই আক্রমণের লক্ষ্য পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদীদের ডেরা ছিল দাবি করে বলেন, প্রথম উত্তেজনা পাকিস্তানই ছড়িয়েছে ২২ এপ্রিল পেহেলগামে। দুই সপ্তাহ পর ভারত যা করেছে তা প্রত্যাঘাত। সেই অধিকার ভারতের আছে এবং তা প্রয়োগ করা হয়েছে।

বুধবারের ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব কাউকে কোনো প্রশ্ন করার অনুমতি দেননি; তবে বৃহস্পতিবার কিছু প্রশ্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই সংঘাত পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন বলে খবর রটেছে, এর সত্যতা কতখানি। জবাবে বিক্রম বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো খবর নেই।

মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের খবরের পাশাপাশি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা রাফালসহ পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ফেলে দিয়েছে। তাদের সেই দাবি বা প্রচার আদৌ সত্য কি না, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, যখন সময় হবে তখন এই সব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চয় তথ্য জানানো হবে।

পাশাপাশি মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের সময় থেকেই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানি বাহিনী জম্মু–কাশ্মীর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তা তারা অস্বীকার করে চলেছিল। তখন থেকেই তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আসছে। জাতিসংঘকেও তারা ওই আক্রমণ নিয়ে মিথ্যা বলেছিল এবং সেই মিথ্যা ধরাও পড়েছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে সর্বদলীয় বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যাঘাতে শতাধিক সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি জানিয়েছিলেন। হতাহতের এই সংখ্যা এবং নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা আছে কি না, জানতে চাওয়া হলেও পররাষ্ট্রসচিব নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তাঁর কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে গণমাধ্যমে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এত তথ্য ছড়াচ্ছে, যাতে মনে হয় এই সংঘাত যেন অনেক দিনের পুরোনো। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, মাত্র ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। পুরো তথ্য জানার জন্য একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রসচ ব

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনার সামনে এনসিপি, আপ বাংলাদেশ, শিবির, জুলাই ঐক্য, ইনকিলাব মঞ্চ

আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রাত দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জুলাই ঐক্য, শিবির, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থী, ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র পক্ষের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন উপস্থিত হচ্ছেন। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে মিছিল। 

এ দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশ-র‍্যাব অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছেন। তারা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। তারা 'ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামীলীগ নো মোর', খুনি লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে, ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা' ইত্যাদি স্লোগান দেন। 

কর্মসূচিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আপ বাংলাদেশের আলী আহসান জুনায়েদ, রাফে সালমান রিফাত, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, শিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদিসহ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। 

এ ছাড়া এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তাসনীম জারা, যুগ্ম আহবায়ক মনিরা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম, তাজনূভা জাবীন, সারোয়ার তুষার অংশ নিয়েছেন। 

ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান, জুলাই ঐক্যের এবি জুবায়ের, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত আছেন। 

শিক্ষার্থীদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। 

কর্মসূচিতে এনসিপির যুব উইংয়ের প্রধান তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘ সময় এখানে অপেক্ষা করবো। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগে আমরা যমুনার সামনে থেকে যাচ্ছি না। 

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে ইন্টেরিমকে আর সময় দিতে রাজি নই, লাশ হয়ে ফিরবো না হয় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। 

কর্মসূচিতে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, নয় মাস কেটে গেছে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম নেই। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি- বিচার না করে ছয়শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা দাবি জানিয়েছি, আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। 

এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

এ দিকে নাহিদ ইসলাম ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন  যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নিষিদ্ধ করার প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। আইসিটি আইনে দল হিসেবে বিচার করার বিধান যুক্ত করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ