আসল নাম বিশ্বনাথ পাটেকর। তবে নানা পাটেকর নামেই পরিচিত। ১৯৭৮ সালে ‘গমন’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন নানা। ‘সালাম বম্বে’, ‘অঙ্গার’, ‘পারিন্দা’, ‘প্রহার’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন। রুপালি পর্দার দাপুটে এই অভিনেতা বাস্তব জীবনেও কারগিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

খুব কম মানুষই জানেন ১৯৯০-২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন অভিনেতা নানা পাটেকর। ১৯৯৯ সালে যখন কারগিল যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ভারতীয় সৈন্যরা সম্মুখ সারিতে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। সেই সময় সমগ্র ভারতীয়রা আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য উল্লাস করেছিলেন। ঠিক তখন তিনবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা নানা পাটেকর অভিনয় ছেড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কেবল তাই নয়, দেশের সেবা করার জন্য সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেন।

জনপ্রিয় অভিনেতা হলেও নানা পাটেকর সামরিক বাহিনীর কেউ ছিলেন না। তাহলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কীভাবে যোগ দিলেন? এই প্রশ্ন সামনে আসাটা স্বাভাবিক। তার আগে বলে রাখা ভালো, নানা পাটেকর পরিচালিত ‘প্রহার: দ্য ফাইনাল অ্যাটাক’ সিনেমা ১৯৯১ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটিতে মেজর প্রতাপ চরিত্রে অভিনয় করেন নানা পাটেকর। সিনেমাটির কাজ শুরুর আগে সেনাবাহিনীর মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে ৩ বছর কঠোর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপরও অনেকটা কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল এই অভিনেতাকে। অমিতাভ বচ্চন সঞ্চালিত ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের ১৬ তম সিজনে সেই গল্প শুনিয়েছিলেন নানা পাটেকর।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে ভারতের হামলা: তারকারা কী বলছেন?

বেবি বাম্প নিয়ে মেট গালায় দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

কারগিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেনাবাহিনীর রিজনাল অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নানা পাটেকর। যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথাও তাদের জানান। কিন্তু তারা অপারগতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পরামর্শ দেন, এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। উনার অনুমতি মিললেই এটা সম্ভব। তারপর প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন নানা পাটেকর।

সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নানা পাটেকর বলেন, “আমি আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজকে চিনতাম। তাই আমি তাকে ফোন করি। আমার ইচ্ছার কথা শুনে তিনি বলেন, ‘এটা অসম্ভব।’ আমি তাকে বলেছিলাম, কমিশনের প্রশিক্ষণ ৬ মাস হলেও ৩ বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। তারপর আমার প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার পর জিজ্ঞাসা করেছিলেন— ‘তুমি কখন যেতে চাও?”

১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগদান করেন নানা পাটেকর। দ্রাস, কুপওয়ারা, বারামুল্লা, সোপোর, মুঘলপুরার মতো সংঘাতপ্রবণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন নানা পাটেকর। রুপালি পর্দার প্রতীকী ভূমিকা থেকে সরে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেন। নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহল থেকে শুরু করে সামরিক হাসপাতালে সহায়তা করা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এই অভিনেতা।

যুদ্ধে অংশ নিয়ে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নানা পাটেকরের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি যখন শ্রীনগরে পৌঁছাই, তখন আমার ওজন ছিল ৭৬ কেজি। যখন আমি বাড়ি ফিরে আসি, তখন আমার ওজন ছিল ৫৬ কেজি।” ৬২ বছর বয়সে ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন নানা পাটেকর।

১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় কারগিল যুদ্ধ। পাকিস্তান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী কারগিল পর্বতের বরফাচ্ছাদিত উঁচু ভূমিতে ভারতীয় সামরিক পোস্ট দখল করে নেয়। ইসলামাবাদ সংঘাতের সময় তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কিছু অংশ মোতায়েন করেছিল— গোয়েন্দাদের এমন তথ্য জানার পর ওয়াশিংটনের প্রবল চাপে পাকিস্তান সেখান থেকে পিছু হটে। ১০ সপ্তাহের ওই সংঘাতে অন্তত ১ হাজার মানুষ নিহত হন।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া টিভি

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রগ ল য দ ধ কর ন ন ন কর ছ ল প ট কর

এছাড়াও পড়ুন:

লিওনেল মেসির আজ জন্মদিন: এমন মানবজনম আর কি হবে

শুরুটা হয়েছিল একটা স্যুটকেস থেকে কিংবা একটা ন্যাপকিন পেপার অথবা একটা বাইসাইকেল থেকে। সেসব তখন ছিল বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। ধীরে ধীরে ঘটনাগুলো জোড়া লেগে রূপান্তরিত হলো একটা পূর্ণাঙ্গ গল্পে। স্মৃতির সেসব পাথরখণ্ড এখন গল্পের জগৎ পেরিয়ে মিথ বা কিংবদন্তিতে রূপ নিয়েছে। কে জানে, হয়তো কোনো এক মনোরম মনোটোনাস সকালে কফির মগ হাতে মনে মনে সেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন রূপকথার সেই মহানায়ক, যাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এই অনবদ্য গল্পগাথা।

রূপকথার সেই গল্পের মহানায়কের নামটা যে লিওনেল মেসি, তা বোধ হয় আলাদা করে না বললেও চলে। আজ ৩৮তম জন্মদিনে মেসি কি আরেকবার সেসব রূপকথার দিকে ফিরে তাকাবেন? হয়তো তাকাবেন, হয়তো না। কিন্তু আমরা তো কাঁটায় হেঁটে মুকুটের সন্ধান পাওয়া সেই গল্পটার দিকে ফিরে তাকাতেই পারি।

একজন মানুষের দেবদূত হয়ে ওঠার যাত্রাটা আরেকবার দেখে নিয়ে বলতে পারি, ‘এমন মানবজনম আর কি হবে।’ নাহ, এমনটা সব সময় হয় না। কখনো কখনো হয়, কদাচিৎ কেউ কেউ আসেন প্রকৃতির বর নিয়ে। যাঁর হাতে প্রকৃতি তুলে দেয় হ্যারি পটারের সেই জাদুর ছড়ি, যা মুহূর্তেই মাটিকে বদলে দিতে পারে হীরকখণ্ডে।

আরও পড়ুনফ্রি–কিকের সময় কী ভাবেন মেসি? গোল হয় কোন কৌশলে২১ জুন ২০২৫

‘মেসি’ নামের এই মহাকাব্যটা লেখা শুরু হয়েছিল ৩৮ বছর আগে আজকের এই দিনে। কিন্তু এই গল্প যেন আর কখনোই শেষ হওয়ার নয়। অনন্তকাল ধরে বিনি সুতার মালায় গাঁথা হতে থাকবে সেই গল্পটা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে বেড়াবে এক অলৌকিক জাদুকরের গল্প, যে গল্পে একজন মানুষ ভীষণ কঠিন এক লড়াই শেষে পান করবেন অমরত্বের সঞ্জীবনী।

কিন্তু অমরত্বের পর আর কী? আর্জেন্টাইন সাহিত্যিক রবার্তো ফুনতানারোজার ‘এন আর্জেন্টাইন’স হেভেন’ নামক গল্পে একদল মানুষ মৃত্যুর পরে কীভাবে ফুটবল খেলা দেখার মধ্য দিয়ে স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন সেটা দেখিয়েছিলেন। ‍ফুটবলীয় সেই স্বর্গ কাতারে আড়াই বছর আগেই পেয়ে গেছেন মেসি। আঙুলের ইশারায় পুরো পৃথিবীকে একাই নাচিয়ে তুলেছিলেন ট্যাঙ্গোর তালে। কিন্তু এরপর? অমরত্বের পর সত্যিই কি কিছু থাকে? হ্যাঁ থাকে। অমরত্বের পর থাকে উপভোগ। অমরত্বের পর থাকে বয়ে যাওয়া।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে লিওনেল মেসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ