যেদিকে তাকাই, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দেখি: লুৎফে সিদ্দিকী
Published: 10th, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেছেন, ‘যেদিকে তাকাই, ব্যবসায়ীদের কোনো না কোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় দেখি। আমরা যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না, তার অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায়ী মহলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে গোপনে সমঝোতায় যান।’
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ২০৩০: অংশীদারত্বমূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে’ শীর্ষক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও নিমফিয়া পাবলিকেশন।
অনুষ্ঠানে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ের পক্ষে, কারণ আমি আমার পেশাগত জীবনের বেশির ভাগ সময়ই বেসরকারি খাতে কাটিয়েছি। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হোক বা অন্য কোনো খাত, আমরা যেসব কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারছি না, তার অন্যতম কারণ হলো ব্যবসায়ী মহলের অনেকেই সরকারের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে গোপনে সমঝোতায় যান।’
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, অনেকে সেমিনারে এসে বড় বড় কথা বলেন, বলেন কীভাবে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। অথচ পরে দেখা যায়, তাঁরা নিজেরাই কোনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গোপনে চুক্তিতে গেছেন, যা পুরো পরিবর্তনের প্রয়াসকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অনুষ্ঠানে বই নিয়ে আলোচনা করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপাল অঞ্চলের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।
এর আগে পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বইটি পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি জানান, এই বইয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাব্য পথ নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কয়েক মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্বেতপত্রের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রকাশের পর হয়তো অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এর ফলাফলগুলো হারিয়ে গেছে বা থেমে গেছে। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমি নিজে এবং আমার অনেক সহকর্মী প্রতিদিন আমাদের কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে শ্বেতপত্র প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বিবেচনায় আনছি। প্রধান উপদেষ্টাও তা করছেন।’
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘জনসমক্ষে তেমন অগ্রগতি দেখা না গেলেও শ্বেতপত্র বা হোয়াইট পেপারের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কীভাবে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকেই আমাদের মূল মনোযোগ রয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ব তপত র অন ষ ঠ ন ব যবস য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চোরের নজর এবার জেলে নৌকায়, সীতাকুণ্ডে এক সপ্তাহে ৫ জেলের নৌকা চুরি
উপকূলে প্রতিদিনের মতো নৌকা বেঁধে বাড়ি ফিরেছিলেন জেলে রূপণ দাশ। তবে দিবাগত রাত তিনটার দিকে আবার উপকূলে গিয়ে দেখেন নৌকা নেই। টর্চ জ্বালিয়ে খালের ভেতরে বিভিন্ন জায়গা খুঁজেও তিনি সেদিন নৌকা পাননি।
জানতে চাইলে রূপণ দাশ প্রথম আলোকে বলেন,‘সাগরে যাওয়ার জন্য রাত তিনটায় ঘাটে এসে দেখি নৌকাটা নেই। টর্চ নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় খুঁজলাম। এরপরও পেলাম না। তখন বুক ধড়ফড় করছিল।’
গত ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালীতে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন আরেক জেলে শিবলু দাশেরও নৌকা চুরি হয়। এর পর থেকে দুজনেই তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকেন। গত বুধবার দুজনেই নোয়াখালীর সুবর্ণচর গিয়ে নৌকা খুঁজে পান। ওই এলাকার দুজন শ্রমিক নৌকা দুটি চুরি করেছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।
অবশ্য শুধু শিবলু বা রূপণ নন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড, ভাটিয়ারী ও কুমিরা এলাকা থেকে আরও তিনটি নৌকা চুরি হয়েছে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে সীতাকুণ্ড থেকে জেলেদের নৌকা চুরি হয়েছে পাঁচটি। এসব নৌকার দাম অনন্ত পাঁচ লাখ টাকা। জেলেরা জানান, তাঁরা এমন দিন আগে কখনো পার করেননি। হঠাৎ নৌকা চুরি শুরু হওয়ায় পুরো উপকূলের সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।
যেভাবে দুটি নৌকা উদ্ধারনৌকা চুরি হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ঘাটে খোঁজ করছিলেন শিবলু দাশ ও রূপণ দাশ। তবে পাননি। বিভিন্ন জেলে, দোকানিদেরও তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছেন। একপর্যায়ে একটি জ্বালানির দোকানে গিয়ে জানতে পারেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা দুই শ্রমিক তাদের থেকে ৩০ লিটার তেল কিনেছে। এরপরই শিবলুর সন্দেহ হয়।
শিবলু দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেলের দোকান খুললে জানতে পারি সুবর্ণচর থেকে আসা দুই শ্রমিক ৩০ লিটার তেল কিনেছে। তাদের চেহারা চিনতাম। তখন আমাদের সন্দেহ হয়।’
এ সন্দেহ থেকেই সুবর্ণচর যান শিবলু দাশ ও রূপণ দাশ। সেখানে গিয়ে নৌকা দুটিও পেয়ে যান। তবে ওই দুই শ্রমিক ৯০ হাজার টাকা দাবি করেন। উপায় না পেয়ে তাঁরা দুটি নৌকার জন্য ৬৫ হাজার দিতে রাজি হন। এরপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় নৌকা দুটি ফিরে পান।
আরও যত চুরিএকই কায়দায় গত ২৯ নভেম্বর ভাটিয়ারীর জেলে সর্দার বাদল দাশেরও নৌকা চুরি হয়। আবার ওই সপ্তাহেই বাড়বকুণ্ড থেকে একটি আর কুমিরা এলাকা থেকে একটি নৌকা চুরি হয়। এসব নৌকার একেকটির দাম অন্তত পাঁচ লাখ টাকা।
জেলেরা জানান, ইলিশ মৌসুমে ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সীতাকুণ্ডে শ্রমিক আসেন। তাঁরা জেলেদের এসব নৌকায় কাজ করেন। থাকা খাওয়া সবকিছুর ব্যবস্থাও সীতাকুণ্ডে রাখা হয়। তাঁদের ধারণা এসব শ্রমিকই মৌসুমের কাজ শেষে ফেরার পথে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ভাটিয়ারীর জেলে সর্দার বাদল দাশ বলেন, তাঁর চুরি হওয়া নৌকা কক্সবাজারের মহেশখালীতে রয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে তাঁর আশা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, ‘একসঙ্গে এত নৌকা আগে চুরি হয়নি। কাজ করতে আসা শ্রমিকদেরই সন্দেহ করছেন জেলেরা। হারিয়ে যাওয়া এসব নৌকার খোঁজ চলছে।
জানতে চাইলে নৌ পুলিশের কুমিরা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ওয়ালি উদ্দিন আকবর বলেন, ‘এতগুলো নৌকা চুরির বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। জেলেরা পুলিশকেও জানায়নি। থানায় মামলা থাকলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’