গোবিন্দগঞ্জে বর্ধনকুটি রাজবাড়ীর সরোবরে পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
Published: 12th, May 2025 GMT
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বর্ধনকুটি রাজবাড়ীর সরোবর এলাকায় সদ্য খনন করা পুকুরে গোসল করতে নেমে গর্তে তলিয়ে গিয়ে শাওন শেখ (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
রবিবার (১১ মে) বিকেলে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শাওন শেখ গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার সোনারপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাদেকুল ইসলাম শেখের ছেলে। শাওন বর্ধনকুটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, নিহত শাওন তার আপন ছোট ভাই ও চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সদ্য খননকৃত এ পুকুরে গোসল করতে নেমেছিল। খননকালে পুকুরটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। গোসল করার এক পর্যায়ে হঠাৎ করে শাওন সেই গর্তে পড়ে তলিয়ে যায়। এসময় সঙ্গে থাকা দুই ভাই উদ্ধারের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে বিষয়টি আশপাশের লোকজন ও পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির সময়কালে বর্ধনকুঠির সর্বশেষ রাজা শৈলেশ চন্দ্র ভারতে চলে যান। বর্তমানে ইতিহাসের স্বাক্ষী প্রাচীন আমলের রাজবাড়ী, সরোবর, পুকুর ও জায়গা-জমির অধিকাংশ প্রভাবশালীদের দখলে।
এরমধ্যে বর্ধনকুটি এলাকার প্রভাবশালী চার ভাই সরোবরের বিশাল এলাকার জমি দখলে নেয়। কয়েক মাস ধরে তারা পুকুর খননের নামে দখল করা জমির মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করছেন। এতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে তাতে পানি জমে। সেই গর্তের পানিতে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয় শাওনের।
গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, “পুকুরের পানিতে ডুবে স্কুলছাত্রের মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয়দের কাছে জেনেছি। তবে এ ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/লুমেন/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ব ন দগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
নানামুখী চাপে আটকে আছে জেলা প্রশাসক পদায়ন
সাড়ে পাঁচ মাস আগে শুরু হলেও জেলা প্রশাসক বা ডিসি নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। পছন্দের কর্মকর্তা খুঁজতে ও ত্রিমুখী রাজনৈতিক চাপ সমন্বয় করতে গিয়ে ডিসি পদায়নে দেরি হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ৬৪ জনকে ডিসি করার পর বাকি ৪২ কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তাদের নানা কারণে এখন গ্রহণযোগ্য মনে করছে না মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন না করার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে চার মাস পর গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এখনও সেই সাক্ষাৎকার চলছে।
এ অবস্থায় ২১ জন ডিসি তিন মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাদের জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার সম্প্রতি শরীয়তপুরের ডিসিকে নারীবিষয়ক ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হলেও সেখানে নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়নি।
ডিসি পদায়নে বিলম্ব হওয়ায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা জটিলতার মধ্যে পড়েছেন। কারণ, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে উপযুক্তার তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাছাই করে ডিসি পদে পদায়ন করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০০৬ সালের ২১ আগস্ট ২৫তম এবং ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগদান করেন। ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন ডিসি হিসেবে মাঠে আছেন। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এই ব্যাচ এখন ডিসির ফিটলিস্টে যুক্ত হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, ২১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৮তম ব্যাচের ৪০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও ডিসি ফিটলিস্টভুক্ত হওয়ার যোগ্য হয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীদের পদায়ন নীতিমালা ২০২২-এ বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পর ডিসি পদে পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট প্রণয়ন করা হবে। ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
এ অবস্থায় গত ২০ মে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভায় উপদেষ্টাদের দেওয়া বক্তব্য সামনে আনা হয়েছে। সভার সূত্র অনুযায়ী, একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। তাই তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসি হিসেবে মাঠে রাখা ঠিক হবে না। একই সভায় একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে রাখলে ভালো হতে পারে।
তবে প্রশাসন সূত্র জানায়, ডিসি পদে পদায়নের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন পক্ষের দেনদরবার ও চাপাচাপি। সেখানে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও নতুন দল এনসিপির অনুসারীরাও আছেন। মূলত তিন পক্ষের চাওয়ার সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ জন্য ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের ১৭ কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়নের জন্য চূড়ান্ত করার পরও প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল হয় সচিবালয়ে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ৯ ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় চার জেলার ডিসিকে। ডিসি পদে পদায়ন করার পরও ২৪তম ব্যাচের পাঁচজন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার পরিচালনা করা অনেক কঠিন। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে আমাদের; আর প্রশাসনে কাজ করবেন অন্যের পছন্দের কর্মকর্তারা– এটি স্বস্তিদায়ক নয়।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারাই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। তবে ডিসি হওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি, ভূমি প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে।
ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির আগের সিদ্ধান্ত
গত ২৩ ডিসেম্বর ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এক দিন অন্তর সাক্ষাৎকার নিয়ে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার। এ কার্যক্রম এক মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য সম্ভাব্য সূচিও তৈরি করা হয়। প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগের জন্য বাছাই করা হবে বলে সভায় ঠিক হয়। সেই কাজ সাড়ে পাঁচ মাস ধরে চলছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বদলের জন্য সর্বশেষ তালিকা তৈরিতে সময় খুব কম পাওয়া গিয়েছিল। তাই ভালোভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নেওয়া যায়নি। আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, এর পর তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এ জন্য এখন সর্বশেষ তালিকার কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন না করে নতুন তালিকা করা হচ্ছে।
২৪তম ব্যাচ থেকে ডিসি হয়েছেন ৬১ জন
২০ থেকে ২৭তম– এই ছয়টি ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিসি হয়েছেন ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২৪তম ব্যাচের ৩২২ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৬১ জন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরেও তারা ডিসি হিসেবে মাঠে রয়েছেন।
২০তম ব্যাচের ২৯৭ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৪৫ জন, ২১তম ব্যাচের ১৮১ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ২৬ জন, ২২তম ব্যাচের ২৮২ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৩৪ জন, ২৫তম ব্যাচের ১৯৫ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৪৬ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ২৭৭ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৩৬ জন। তবে শতকরা হারে বেশি ডিসি হয়েছেন ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। বর্তমানে ২৪তম বিসিএসের ২৬ জন, ২৫তম থেকে ২৫ জন ও ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসি পদে কর্মরত আছেন। ২৬তম ব্যাচ ছিল বিশেষ বিসিএস।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন– এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
আবার ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৪৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।