প্রকল্প তৈরির ক্ষমতার খুব অভাব মন্ত্রণালয়গুলোতে
Published: 13th, May 2025 GMT
মন্ত্রণালয়গুলোতে প্রকল্প তৈরির ক্ষমতার খুবই অভাব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যে প্রকল্পগুলো আসে, সেগুলোতে অনেক সংশোধন করতে হয়। এ ছাড়া কাগজে–কলমে পরিকল্পনা করা হলেও রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয় না।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে চতুর্থ আঞ্চলিক নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা সম্মেলনে এ কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিনের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘পরিকল্পনার উদ্দেশ্যই হলো অনেক প্রকল্প থাকবে, সেখান থেকে বাছাই করে ভালো প্রকল্পটা নেব। কিন্তু আমার যদি অনেক প্রকল্প না–ই থাকে, তাহলে বাছাই করব কোথা থেকে। একটা প্রকল্প নিয়ে এসেছে, আর সেটাই যদি নিতে হয়, তাহলে তো আর বাছাই করা হলো না।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কাগজে–কলমে আমরা পরিকল্পনা করি। কিন্তু সমস্যা হলো, রাজনৈতিক প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর কারণে অনেক কিছুই বাস্তবায়িত হয় না।’ রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে নদী দখল, বন উজাড়, পাহাড় কাটা বন্ধের অঙ্গীকার আদায় করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলেও জানান তিনি।
সব পরিকল্পনা মিলে একটি সার্বিক পরিকল্পনা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে আমাদের এত পরিকল্পনা আছে নদী, পানি, বন্যা—সবকিছুই। আমাদের আরও নগরায়ণ হতে থাকবে, শিল্পায়ন হতে থাকবে, তখন আমরা কোন পথে এগোব, সেটার একটা পূর্ণ পরিকল্পনা করা যায় কি না.
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পরিকল্পিত বাংলাদেশের পথে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। যেগুলোকে আমরা এড়াতে পারি না। যার মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বাধা হলো ব্যক্তিস্বার্থের ক্ষমতাগোষ্ঠী। এরা পরিকল্পিত বাংলাদেশ চিন্তাধারার পুরোপুরি বিরোধী। এই গোষ্ঠীগুলো এতটাই টেকসই যে রাজনীতির পালাবদলের সঙ্গে তারা টিকে থাকার রাস্তাগুলো ঠিকই খুঁজে নেয়।’
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে রাজধানীর বাহদুর শাহ পার্কে ফুড কোর্ট স্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় বাস্তবায়নের বিষয়টিকে পরবর্তী চিন্তা হিসেবে দেখি। আমাদের সব মনোযোগ থাকে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনায়। ভাবি, বাস্তবায়ন যেন একধরনের স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। কিন্তু বাস্তবায়নকেও নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’
নগরায়ণ বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নগরকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা করলে চলবে না। এই বিকেন্দ্রীকরণ কেবল কাঠামোগত নয়, হতে হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে। আমরা বৈষম্য, অন্যায় ও অসম বণ্টন নিয়ে হাঁসফাঁস করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমাদের দেশে জাতীয় পর্যায়ের অনেক প্ল্যাটফর্ম বা কাঠামো রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এর অনেকগুলোই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে বা খুব কম ব্যবহার হচ্ছে।’ এগুলোর পেছনে নীতি বা পরিকল্পনা থাকার পরও অপর্যাপ্ত বাস্তবায়নকে মূল সমস্যা মনে করেন তিনি। বলেন, ‘তবে একটা ইতিবাচক দিক হলো, এখন অন্তত আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটা সমাধানের পথে একটি বড় পদক্ষেপ।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের উপরাষ্ট্রদূত থিজ উডস্ট্রা। সমাপনী পর্বে সম্মেলনের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান। সম্মেলন শেষে পরিকল্পনা খাতে অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্মারক দেওয়া হয়।
‘ঢাকা ঘোষণা’বাংলাদেশে ন্যায্য রূপান্তরের জন্য সম্মেলনে ১৩টি স্থানিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন বিআইপির সহসভাপতি সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন। ‘ঢাকা ঘোষণা’ হিসেবে উপস্থাপন করা এসব পরিকল্পনা হলো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে স্থানিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্তি; জাতীয় স্থানিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ; জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনার আহ্বান; ন্যায্য রূপান্তর নীতিমালার প্রচার; প্রকৃতি, অর্থনীতি ও সমাজের ভারসাম্য; ভূমি, পানি ও সক্রিয় বদ্বীপ ব্যবস্থাপনা; প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি; ক্ষমতা ও সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ; সবার জন্য আবাসন; ন্যায় ও প্রমাণভিত্তিক পরিকল্পনা; স্থানিক পরিকল্পনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক ন দ র করণ র জন ত ক উপদ ষ ট প রকল প কল প ত র জন য আম দ র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
আশুগঞ্জে বিস্ফোরক মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আশুগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল ইসলামকে (৫৬) গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
শুক্রবার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একটি দল আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকায় তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার বাসা থেকে নগদ ৭ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার কবিরুল ইসলাম আশুগঞ্জ রেলগেট এলাকার মৃত আবু তাহেরের ছেলে। তিনি আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ছিলেন।
আশুগঞ্জ থানার ওসি মো. খাইরুল আলম বলেন, কবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।