সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪।

আজ বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। যে ১২ ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছে সেগুলো হচ্ছে এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক।

সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদার। এ সময় এমওইউ স্বাক্ষরকারী ১২ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারাসহ (সিইও) অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমওইউ সইয়ের সুবাদে নতুন ১২ ব্যাংক সর্বজনীন পেনশনের সব কর্মসূচির নিবন্ধনকাজে সহায়তা করতে পারবে, সেই সঙ্গে চাঁদাও গ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপকেরা এ কাজে সহায়তা করবেন। ব্যাংকের নির্ধারিত অ্যাপ ব্যবহার করেও গ্রাহকেরা নিবন্ধনের পাশাপাশি অনলাইনে চাঁদা জমা দিতে পারবেন।

এর আগেও ১২টি ব্যাংকের সঙ্গে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সমঝোতা স্মারক সই করে। সেগুলো হচ্ছে জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), প্রাইম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক।

বর্তমানে চালু থাকা সর্বজনীন পেনশন স্কিমগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস। এর মাধ্যমে কর্মজীবী, অনিয়মিত আয়ের মানুষ ও প্রবাসীরা পেনশন সুবিধার আওতায় আসার সুযোগ পাচ্ছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ, যা ২০৪১ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ১০ লাখে।

এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিতে দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করে সরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ প নশন স স ম রক ১২ ব য সমঝ ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে লবণসহিষ্ণু গমের নতুন জাত উদ্ভাবন

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ উচ্চ লবণসহিষ্ণু গমের নতুন জাত ‘জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবন করেছে। উচ্চ লবণাক্ততা  সহনশীলতার দিক থেকে দেশে এটিই গমের প্রথম জাত। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আকব্বাস উদ্দিন।

কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ময়নুল হক ও মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে  গবেষণার মাধ্যমে ‘জিএইউ গম ১’–এর উদ্ভাবন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উন্নতমানের গমের জাতটি লবণাক্ততা সহনশীল, উচ্চফলনশীল ও অধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা ৯১টিতে পৌঁছাল, যা বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

এ সম্পর্কে অধ্যাপক মসিউল ইসলাম বলেন, ‘জিএইউ গম–১ উদ্ভাবন আমাদের দীর্ঘদিনের গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার ফল। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদনের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যেই আমরা এই গমের জাতটি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করি। এটি লবণাক্ত পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে অধিক ফলন দেয়, যা কৃষকের জন্য যেমন লাভজনক।’

গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন গবেষণা ও ফলন পরীক্ষার পর ২০২১ থেকে ২০২৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল গম হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির সার্বিক তত্ত্বাবধানে দেশের ৬টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে প্রস্তাবিত ফলন পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়ার যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড গত ১৭ জুন জিএইউ গম–১–এর ছাড়পত্র দেয়। এ গমে অধিক প্রোটিন শরীর গঠন ও মেরামত, শক্তি সরবরাহ, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধে অধিক সহায়তা করে থাকে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লটেনিন থাকায় এটি উচ্চ প্রোটিন ও লো ফ্যাট হওয়ায় সহজে শরীরে শোষিত হতে পারে ডিইউএসের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসম্বলিত ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে এটি সাধারণ গম থেকে ভিন্ন গুণসম্পন্ন।

আমন মৌসুমে ধান কাটার পর এই গমের বীজ বপন করলে ৯৫–১০০ দিনে উৎপাদন পাওয়া যায়। অল্প সময়ে অধিক ফলন পেয়ে কৃষকেরা লাভবান হতে পারেন। অন্যদিকে এ গমের গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়, ফলে গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উৎকৃষ্টমানের এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪ দশমিক ৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩ দশমিক ৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। এটি লবণ সহনশীল হওয়ায় মানব শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কার্যকরভাবে পানি ও পুষ্টি শোষণ করতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীলতা ও রোগ-পোকা প্রতিরোধক্ষমতা থাকায় এটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে চাষের জন্য উপযোগী ও লাভজনক একটি জাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ