মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় একটি কবরস্থান থেকে পাঁচটি মানবকঙ্কাল চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের বাংগড়া কবরস্থান থেকে এসব কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে।

এর আগে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বোয়ালি ও ধুলুন্ডী এলাকার কবরস্থান থেকে বেশ কয়েকটি কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তবে চোর চক্রের কাউকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এলাকাবাসী ও কবরস্থান পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকালে বাংগড়া কবরস্থানে নির্মাণাধীন পানির ট্যাংক স্থাপনের কাজ করতে গিয়ে কবরস্থানের প্রধান ফটক খোলা দেখতে পান শ্রমিকেরা। এরপর তাঁরা ভেতরে গিয়ে বেশ কয়েকটি কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাঁরা বিষয়টি কবরস্থান পরিচালনা কমিটির লোকজনকে জানালে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচটি কবর খোঁড়া দেখতে পান। কবরগুলোতে কোনো কঙ্কাল ছিল না।

কবরস্থানের কঙ্কাল চুরির ঘটনায় স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বেতিলা-মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন। তিনি বলেন, যেসব কবর থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে, সেখানে গত পাঁচ থেকে সাত মাসের মধ্যে মৃত মানুষকে কবর দেওয়া হয়েছিল। চুরি যাওয়া কঙ্কালের মধ্যে চারটি পুরুষের ও একটি নারীর কঙ্কাল ছিল।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কবরস থ ন থ ক ম ন কগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ ফুট মরা খালে, ৭২ ফুট সেতু

খালের প্রশস্ত ১৬ ফুট। এর ওপর প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ ফুট দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। নির্মাণাধীন সেতুটির অবস্থান কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দরাজখোলা গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির দক্ষিণ পাশের খালে। 
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি হলে দুই গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে কয়েকটি পরিবারের বের হওয়ার পথও। তাই বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বর্তমানে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দরাজখোলা গ্রামে ভূঁইয়া বাড়ির দক্ষিণ পাশে খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০২৩ সালে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭২ ফুট দীর্ঘ ও পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৭ ফুট উঁচু গার্ডার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। একই বছরের ৩ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড সন্স। একই বছরের ২৯ মে কাজ বন্ধ রাখতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন দরাজখোলা গ্রামের মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া। অভিযোগের ভিত্তিতে একই বছরের ১৯ নভেম্বর কাজটি ছোট করে করার জন্য উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের ভিত্তিতে ছয় মাস বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। পরে এলজিইডির কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সেতুটি নতুন ডিজাইনে ছোট করে করবেন বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আগের ডিজাইনে আবার কাজ শুরু করলে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর এক মাসের স্থিতাবস্থার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। পুনরায় কাজ শুরু করলে আবার ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ছয় মাসের জন্য কাজটি স্থগিত করার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদেশ অমান্য করে কাজ শুরু করলে দাউদকান্দি থানায় ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া। পরে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এই ঘটনায় দরাজখোলা গ্রামের মুসা কলিমউল্লাহ জানান, সরকার সেতু বানায় জনগণের উপকারের জন্য, কিন্তু এই সেতু খালের তুলনায় অনেক বড় ও উঁচু। এটি নির্মাণ হলে কয়েকটি বাড়ির লোকজনের রাস্তায় উঠতে মই লাগবে। তারা সেতু চান, তবে এত বড় নয়। একই গ্রামের শরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির পশ্চিম পাশে দরাজখোলা, দক্ষিণে মোহাম্মদপুর গ্রামবাসীর সামাজিক কবরস্থান। এই সেতু নির্মাণ হলে কবরস্থানে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে কোনো নদী বা বড় খাল নেই। আগেরটির মতো ছোট একটি সেতু হলেও কোনো সমস্যা নেই।
মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া জানান, বিএস জরিপ অনুযায়ী দরাজখোলা খালের প্রশস্ত ১৬ ফুট। আগে এখানে ৪ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু ছিল। এখানে পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে পাশের জমির মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনই সরকারি অর্থের অপচয় হবে। যেহেতু ছোট খাল, তাই আগের মাপে কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করলে পাশের কৃষিজমি রক্ষা পাবে এবং সরকারি অর্থও বাঁচবে। তিনি বলেন, কাজ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্টর আদেশ অমান্য করে কাজ করায় কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন উচ্চ আদালত।
ঠিকাদার হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কাজ স্থগিত আছে। উপজেলা প্রকৌশলী কাজ করতে বললে করি, কাজ বন্ধ করতে বললে বন্ধ রাখি।’
এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদ হাসানের ভাষ্য, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করছেন। এগুলো সমাধান হলে আবার কাজ শুরু হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ ফুট মরা খালে, ৭২ ফুট সেতু