শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্বে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, বিদ্যালয় বন্ধ
Published: 21st, May 2025 GMT
রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে উপজেলার নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ আছে। বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়ালে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়টি আবার খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত সোমবার রাতে বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসে ধূমপান করছিল। তখন নবম শ্রেণির এক ছাত্রের নেতৃত্বে কয়েকজন অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রকে গালাগালের পর শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়। পরে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্ষুব্ধ হয়ে তার বন্ধুদের বিদ্যালয়ে ডেকে আনে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধর করা হয়। পরে ওই ছাত্রের বন্ধু ও স্বজনেরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, এ ঘটনার পর মীমাংসার জন্য ওই দুই ছাত্রের অভিভাবকদের সোমবার ডাকা হয়। কিন্তু এক পক্ষ উপস্থিত না থাকায় সালিস হয়নি। পরে আহত ছাত্রের স্বজনেরা স্থানীয় শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ওই দিন রাত আটটার দিকে পাশের চারা বটতলা গ্রামে অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী ও তার আরেক বন্ধুর বাড়িতে হামলা চালান। একপর্যায়ে চারা বটতলা গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন।
চারা বটতলা গ্রামে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে। অথচ আমি ভালো–মন্দ কিছুই জানি না। কিন্তু শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন এসে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো না করলে আরও বেশি ক্ষতি হতো।’
এদিকে শ্রীখন্ডী গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি জানানোর জন্য অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চারা বটতলা গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের বাবাও আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্বের কারণে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বাদ দিয়ে পাশে বিলের ধারে গিয়ে সিগারেট খায়। এখন ক্লাসরুমে খাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। এমনিতেই ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে, এর আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনায় বেশ ক্ষতি হবে।
নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি। এ জন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিদ্যালয়ে তিন দিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। নাওদাড়া গ্রামের মিঠু সরকার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করে গতকাল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ণ র ওই ছ ত র গ র ম র ল কজন নবম শ র ণ র দ বন দ ব পর স থ ত স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
রায়ের ৭ বছর পরও পলাতক মৃত্যুদণ্ডের ১৬ আসামি
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি ৭ বছর ধরে পলাতক। এর মধ্যে আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে এবং আটজন হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক। দফায় দফায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তাদের হদিস মিলছে না। ২০১৮ সালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় ৩৯ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ২৩ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন। অন্য ২২ আসামির আপিল বর্তমানে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে নিষ্পত্তির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে। শিগগির আপিলের শুনানি শুরু হবে।
এদিকে পলাতক আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া এবং হাইকোর্টে ৭ বছর ধরে আপিল ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন একরামুল হকের বড় ভাই ও মামলার বাদী জসিম উদ্দিন। তিনি সমকালকে বলেন, রায় হওয়ার পর ৭ বছর পেরিয়েছে। অথচ এক আসামিরও ফাঁসি হলো না। পলাতকরা অধিকাংশই বিদেশে অবস্থান করছেন। এরাই গডফাদার। তাদের গ্রেপ্তারে কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি দ্রুত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই জসিম উদ্দিন মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ এ মামলায় রায় দেন ফেনীর দায়রা জজ আদালত। রায়ে ৩৯ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। তবে মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনারসহ ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায়ে বলা হয়, স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণেই একরামকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বিধি অনুযায়ী বিচারিক আদালত থেকে রায়ের নথিসহ ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও জেল আপিল দায়ের করেন। মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টে কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ১৬ আসামি হলেন– জাহিদ হোসেন জিহাদ, আবিদুল ইসলাম আবিদ, নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান ওরফে ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলে উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিস, বাবলু ও টিটু।
পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ফেনী সদর মডেল থানার ওসি মো. সামসুজ্জামান সমকালকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ২০২১ সালে সর্বশেষ এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২২ জন কারাগারে। একজন কারাগারে মারা গেছেন।
এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া আসামিদের সাজা নিশ্চিতে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এর শুনানি ও ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির সময় গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী সমকালকে বলেন, আপিলটি বর্তমানে শুনানির জন্য কার্যতালিকায়। আসাসিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি শিগগির এর শুনানি হবে।’