রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে উপজেলার নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ আছে। বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়ালে গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয়টি আবার খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত সোমবার রাতে বিবদমান দুই শিক্ষার্থীর গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের একাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বেলা ১১টার দিকে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসে ধূমপান করছিল। তখন নবম শ্রেণির এক ছাত্রের নেতৃত্বে কয়েকজন অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রকে গালাগালের পর শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়। পরে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র ক্ষুব্ধ হয়ে তার বন্ধুদের বিদ্যালয়ে ডেকে আনে। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধর করা হয়। পরে ওই ছাত্রের বন্ধু ও স্বজনেরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, এ ঘটনার পর মীমাংসার জন্য ওই দুই ছাত্রের অভিভাবকদের সোমবার ডাকা হয়। কিন্তু এক পক্ষ উপস্থিত না থাকায় সালিস হয়নি। পরে আহত ছাত্রের স্বজনেরা স্থানীয় শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের সঙ্গে ওই দিন রাত আটটার দিকে পাশের চারা বটতলা গ্রামে অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী ও তার আরেক বন্ধুর বাড়িতে হামলা চালান। একপর্যায়ে চারা বটতলা গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এতে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন।

চারা বটতলা গ্রামে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়েছে। অথচ আমি ভালো–মন্দ কিছুই জানি না। কিন্তু শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন এসে আমার বাড়িতে ভাঙচুর করে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো না করলে আরও বেশি ক্ষতি হতো।’

এদিকে শ্রীখন্ডী গ্রামের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, নবম শ্রেণির ওই ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি জানানোর জন্য অষ্টম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চারা বটতলা গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রের বাবাও আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্বের কারণে নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বাদ দিয়ে পাশে বিলের ধারে গিয়ে সিগারেট খায়। এখন ক্লাসরুমে খাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। এমনিতেই ঈদের লম্বা ছুটি থাকবে, এর আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলে পড়াশোনায় বেশ ক্ষতি হবে।

নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি। এ জন্য যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিদ্যালয়ে তিন দিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে।

ওই সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান। নাওদাড়া গ্রামের মিঠু সরকার নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করে গতকাল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ র ণ র ওই ছ ত র গ র ম র ল কজন নবম শ র ণ র দ বন দ ব পর স থ ত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • দিনাজপুরে শিয়ালের কামড়ে আহত ৮
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার