চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের কক্ষে তাঁর আসন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। চলছিল বাগ্‌বিতণ্ডা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি(উপাচার্য পদে), আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’

আজ শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার ৪ মিনিটের একটি ভিডিওতে এমন কথপোকথন উঠে এসেছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পদোন্নতিকে ঘিরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপাচার্য ইয়াহইয়া আখতারের কার্যালয়ে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা হট্টগোল করেন। ভিডিওটি সেই সময় কেউ একজন মুঠোফোনে ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভিড়ে দাঁড়ানো অন্তত দুজন শিক্ষার্থী এমন কথা বলেছেন। তাঁদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন ও আরেকজন শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল গতকাল। এই সাক্ষাৎকার বাতিল ও কুশল বরণকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদকেও ওই অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। সেখান থেকেই সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে যান তাঁরা। কথোপকথনের ভিডিওটি সেই সময়কার। ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। একজন উপাচার্যকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে এসব কোনো শিক্ষার্থী এভাবে কথা বলতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নও রাখছেন অনেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব উপাচার্যকে বলছেন, ‘স্যার আপনাকে আমরা বসিয়েছি (উপাচার্য পদে)। আপনি আমাদের কথা মানতে বাধ্য।’ এরপর উপাচার্য বলেন, ‘না’ । উপাচার্যের এই কথার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা-কর্মীরা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন উপাচার্যকে বলেন, ‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ এরপর তাহসান হাবীব আবারও বলেন, ‘স্যার আপনাকে আমরা এনে এখানে বসিয়েছি। আপনি এখানে নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ তখন উপাচার্য বললেন, ‘কী করেছি আমি?’ তাহসান তার উত্তরে বললেন, ‘আপনি কেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রমোশন দিচ্ছেন। আমাদের রক্তের সঙ্গে, আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করে।’

এসব নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের যখন তর্কাতর্কি চলছিল, তখন কয়েকজন নেতাকে আঙুল উঁচিয়ে চেঁচামেচি করতেও দেখা গেছে। একপর্যায়ে উপাচার্য উপস্থিত সাংবাদিকদের মুঠোফোনের ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের মুঠোফোনে গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত ১০ বার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

উপাচার্য নিজের যোগ্যতায় পদে আসেননি, এমন কথা দিয়ে কী বুঝিয়েছেন, জানতে চাইলে সাবেক শিবির নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি উত্তেজনার বশে বলে ফেলেছেন। খুব বেশি ভেবেচিন্তে বলেননি।’

আর ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের যোগ্যতা নেই, এমনটি বোঝাতে চাননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ‘উপাচার্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসেনি। আন্দোলন পেরিয়ে, জুলাইয়ের শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে এই প্রশাসন এসেছে। এখন আমাদের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন, জুলাইকে উপেক্ষা করবেন—এই পরিস্থিতি আমরা হতে দিতে চাই না। এই অর্থেই যোগ্যতার কথাটি বলেছি। পরে ভুল বুঝতে পেরে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছি, দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে আসা শিক্ষককে ঘিরে হট্টগোল, ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ১৯ ঘণ্টা আগে

এদিকে তাহসান হাবীব এক সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন আর নেই বলে জানান সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন বলেন, অন্য একটি সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত থাকায় সংগঠন থেকে তাহসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্টের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তৎকালীন প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। এরপরই একই দিনে পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ।

পরে আবার নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা সিনেটের মাধ্যমে। তবে এই নিয়ম উপেক্ষা করেই বেশ কয়েকটি মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন য় ন উপ চ র য উপ চ র য র য গ যত য় বস য় ছ আম দ র কর ম র আপন ক স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

বিড়াল দত্তক নিলে মিলবে ফ্ল্যাট

এই পৃথিবীতে মানুষ বড় একা। আর একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য মানুষকে যেমন খুঁজে ফেরে আবার কেউ কেউ প্রাণীদের পরম যত্নে পোষেন। চীনের গুয়াংডং প্রদেশের বাসিন্দা লংয়ের (ছদ্মনাম) একজন নিঃসন্তান। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে একেবারে একা জীবন যাপন করছিলেন লং। একদিন বৃষ্টিভেজা রাস্তায় চারটি বিড়াল কুড়িয়ে পান, তারপর সেই বিড়ালগুলোকে নিজের বাড়িতে জায়গা দেন। সবশেষে একটি বিড়াল বেঁচে আছে। নিজেই বিড়ালটির দেখাশোনা করতেন। কিন্তু লংয়ের বয়স বেড়েছে। বয়সের ভারে বিড়ালটির ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারেন না।

স্থানীয় একটি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ‘‘ভালো ব্যক্তি পেলে নিজের ফ্ল্যাট ও জমানো সব অর্থ দিয়ে বিড়ালটাকে দত্তক দিতে চান লং। তবে লংয়ের পোষা বিড়াল সিয়ানবার যত্নে কোনো ত্রুটি করা যাবে না।’’

৮২ বছর বয়সী লংয়ের বিড়ালের জন্য উত্তরাধিকারী খোঁজার বিষয়টি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে অনলাইনে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। 

আরো পড়ুন:

চা দিয়ে চুলের যত্ন নেবেন যেভাবে

শেরপুরে হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার, নারী গ্রেপ্তার

একজন লিখেছেন, ‘‘যদি কেউ এ প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, চীনের মানুষেরা বিড়াল ভালোবাসতে পারে না।, নয়তো শর্তগুলো কঠিন।’’

এক নারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি বিড়ালটিকে নিতে রাজি, টাকার দরকার নেই। আমি নিজেও ভেবেছি, আমার মৃত্যু হলে বিড়ালটি কে দেখবে? যদি কাউকে বিশ্বাস না করা যায়, তাহলে উত্তরাধিকারীর জন্য অর্থ রেখে যাওয়া যেতে পারে, যাতে বিড়ালটা বোঝা না হয়ে ওঠে।’’

 উল্লেখ্য, চীনে এখন পর্যন্ত পোষা প্রাণীর প্রতি নির্যাতন ঠেকাতে নির্দিষ্ট আইন নেই। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশটির পোষা প্রাণী বাজার দ্রুত বেড়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই আন্দোলনকারীদের দেশ ছাড়তে বলা শিক্ষকদের পদোন্নতি, ক্ষুব্ধ শ
  • করোনায় একজনের মৃত্যু, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৯৪
  • করোনায় আরো এক মৃত্যু, শনাক্ত ৬
  • অমিতাভ বচ্চনের শুভেচ্ছাবার্তার পর জয়া আহসানের প্রতিক্রিয়া
  • বিড়াল দত্তক নিলে মিলবে ফ্ল্যাট
  • শরীয়তপুরে ব্যাংকের সিঁড়ি থেকে ২ নারীর আড়াই লাখ টাকা লুট
  • ফেসবুকে সখ্যতা, ডেকে এনে মুক্তিপণ আদায়, দুই নারীসহ গ্রেপ্তার ৪
  • ফেসবুকে সখ্য গড়ে ডেকে এনে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, ২ নারীসহ গ্রেপ
  • কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ