উপাচার্যকে শিক্ষার্থীরা বললেন, ‘আপনাকে আমরা বসিয়েছি, নিজের যোগ্যতায় আসেননি’
Published: 5th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের কক্ষে তাঁর আসন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। চলছিল বাগ্বিতণ্ডা। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি(উপাচার্য পদে), আপনাকে আমরা বসিয়েছি, আপনি আমাদের কথা শুনতে বাধ্য।’
আজ শনিবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার ৪ মিনিটের একটি ভিডিওতে এমন কথপোকথন উঠে এসেছে। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের পদোন্নতিকে ঘিরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপাচার্য ইয়াহইয়া আখতারের কার্যালয়ে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা হট্টগোল করেন। ভিডিওটি সেই সময় কেউ একজন মুঠোফোনে ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভিড়ে দাঁড়ানো অন্তত দুজন শিক্ষার্থী এমন কথা বলেছেন। তাঁদের একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন ও আরেকজন শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুশল বরণ চক্রবর্তীর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার ছিল গতকাল। এই সাক্ষাৎকার বাতিল ও কুশল বরণকে চাকরিচ্যুত করার দাবিতে দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদকেও ওই অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা গেছে। সেখান থেকেই সাড়ে তিনটার দিকে উপাচার্য কার্যালয়ে যান তাঁরা। কথোপকথনের ভিডিওটি সেই সময়কার। ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। একজন উপাচার্যকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে এসব কোনো শিক্ষার্থী এভাবে কথা বলতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নও রাখছেন অনেকে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব উপাচার্যকে বলছেন, ‘স্যার আপনাকে আমরা বসিয়েছি (উপাচার্য পদে)। আপনি আমাদের কথা মানতে বাধ্য।’ এরপর উপাচার্য বলেন, ‘না’ । উপাচার্যের এই কথার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা-কর্মীরা হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক নেতা শাখাওয়াত হোসেন উপাচার্যকে বলেন, ‘এখানে আপনি নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ এরপর তাহসান হাবীব আবারও বলেন, ‘স্যার আপনাকে আমরা এনে এখানে বসিয়েছি। আপনি এখানে নিজ যোগ্যতায় বসেননি।’ তখন উপাচার্য বললেন, ‘কী করেছি আমি?’ তাহসান তার উত্তরে বললেন, ‘আপনি কেন ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রমোশন দিচ্ছেন। আমাদের রক্তের সঙ্গে, আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানি করে।’
এসব নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের যখন তর্কাতর্কি চলছিল, তখন কয়েকজন নেতাকে আঙুল উঁচিয়ে চেঁচামেচি করতেও দেখা গেছে। একপর্যায়ে উপাচার্য উপস্থিত সাংবাদিকদের মুঠোফোনের ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের মুঠোফোনে গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত ১০ বার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
উপাচার্য নিজের যোগ্যতায় পদে আসেননি, এমন কথা দিয়ে কী বুঝিয়েছেন, জানতে চাইলে সাবেক শিবির নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি উত্তেজনার বশে বলে ফেলেছেন। খুব বেশি ভেবেচিন্তে বলেননি।’
আর ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তাহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্যের যোগ্যতা নেই, এমনটি বোঝাতে চাননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ‘উপাচার্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে আসেনি। আন্দোলন পেরিয়ে, জুলাইয়ের শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে এই প্রশাসন এসেছে। এখন আমাদের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন, জুলাইকে উপেক্ষা করবেন—এই পরিস্থিতি আমরা হতে দিতে চাই না। এই অর্থেই যোগ্যতার কথাটি বলেছি। পরে ভুল বুঝতে পেরে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছি, দুঃখ প্রকাশ করেছি।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে আসা শিক্ষককে ঘিরে হট্টগোল, ‘মব’ সৃষ্টির অভিযোগ১৯ ঘণ্টা আগেএদিকে তাহসান হাবীব এক সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন আর নেই বলে জানান সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক তামজিদ উদ্দিন বলেন, অন্য একটি সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত থাকায় সংগঠন থেকে তাহসানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
৫ আগস্টের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তৎকালীন প্রশাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। এরপরই একই দিনে পদত্যাগ করেন উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক, প্রক্টরিয়াল বডির ১০ সদস্য ও ১৪টি হলের প্রাধ্যক্ষ।
পরে আবার নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা সিনেটের মাধ্যমে। তবে এই নিয়ম উপেক্ষা করেই বেশ কয়েকটি মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন য় ন উপ চ র য উপ চ র য র য গ যত য় বস য় ছ আম দ র কর ম র আপন ক স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
কাজী মামুনকে ফাঁসানো হয়েছে: যুব সংহতি
মানবিক মানুষ হিসেবে আতিথিয়েতার জন্য মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় যুব সংহতি। একইসাথে তাদের সদস্য সচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেলেরও মুক্তি দাবি করে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
জার্মান রাষ্ট্রদূতের সাথে জাপা নেতাদের সাক্ষাৎ
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি মেনে নিন: জিএম কাদের
এ সময় যুব সংহতির আহ্বায়ক আবুল হাসান আহমেদ জুয়েল বলেন, “জাতীয় পার্টির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দলীয় মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে আতিথিয়েতার কারণে মহাসচিব কাজী মামুনকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় ফাঁসানো হয়। এটা অমানবিক।”
এক প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল বলেন, “জাপা মহাসচিব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে জনৈক এনায়েত করিমকে তিনি আতিথিয়েতা করেছেন। ঐ ব্যক্তির সাথে তার অন্য কোনো সম্পর্ক নাই এবং তিনি কি করেন কিংবা কেনো বাংলাদেশে এসেছেন সে সম্পর্কে জাপা মহাসচিব অবগত নন।”
যুব সংহতির আহ্বায়ক বলেন, “রিফাতুল ইসলাম পাভেল একজন চাকরিজীবী। স্বনামধন্য একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উপ-মহাব্যবস্থাপক।তিনি সম্প্রতি যুব সংহতির সদস্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। কাজী মামুনুর রশিদকে ব্যবসায়িকভাবে দুর্বল করার লক্ষ্যে তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি