পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত ১৫ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কিন্তু ঘাটাইলে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে এই প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। সমকালের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রজ্ঞাপনের পরই লাগানো হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার আকাশমনির চারা। চলছে আরও নিষিদ্ধ গাছের চারা রোপণের প্রস্তুতি। নিষেধাজ্ঞা মানছেন না বন বিভাগ, নার্সারি ও সামাজিক বনায়নের অংশীজনরা।
ঘাটাইলে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। ৯০-এর দশকে ‘সামাজিক বনায়ন’ কর্মসূচি চালু করে বন বিভাগ। এই কর্মসূচির বলি হয় এখানকার প্রাকৃতিক বন। সামাজিক বনায়নের দখলে চলে গেছে প্রায় ১৫ হাজার একর প্রাকৃতিক বনভূমি। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কৃত্রিমতার ছোঁয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বন থেকে বিলুপ্ত অর্ধ শতাধিক দেশি প্রজাতির গাছ। বিলুপ্ত পশু-পাখি।
১৫ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্রাসি প্রজাতির গাছ রোপণের পরিবর্তে দেশীয় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করতে হবে। ঘাটাইলে এই প্রজ্ঞাপন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার নিষিদ্ধ করলেও বিট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বনের জমিতে সামাজিক বনায়নে প্রতিদিন লাগানো হচ্ছে আকাশমনির চারা।
সাগরদীঘি বিট অফিসের তথ্যমতে, সামাজিক বনায়নের আওতায় ৬০টি প্লটে গাছ লাগানোর কাজ চলমান। সরেজমিন দেখা গেছে, ৩০টি প্লটেই আকাশমনির চারা রোপণ করা হয়েছে। আয়তন ভেদে কোনো প্লটে এক হাজার, কোনো প্লটে ৫০০ চারা রোপণ করা হয়েছে। সামাজিক বনের স্থানীয় সভাপতি আব্দুল মজিদের নামে একটি এবং তাঁর দুই ছেলের নামে দুটি প্লট রয়েছে। মজিদ জানান, বিট কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে একটিতে গামারি এবং দুটিতে আকাশমনির চারা রোপণ করেছেন। মোট দুই হাজার আকাশমনির চারা লাগানো হয়েছে।
দুটি প্লট বরাদ্দ পেয়ে ১০ দিন আগে এক হাজার আকাশমনির চারা রোপণ করেছেন সাগরদীঘির ফজরগঞ্জ গ্রামের আমিনুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি চারার দাম ধরা হয়েছে সাত টাকা। সাগরদীঘি বিট কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান আনসারীর দাবি, প্লটগুলোতে দেশীয় প্রজাতি গাছের চারা লাগানো হচ্ছে।
বটতলি বিটে বনের জমিতে আকাশমনির নার্সারি করেছেন স্থানীয় বনের সভাপতি রাজু মিয়া। তিনি বলেন, ‘আকাশমনির চারা নিষিদ্ধ। তবে পাবলিকের কাছে কিছু চারা বিক্রি করেছি।’
বটতলি বিটের ২২টি প্লটে চারা রোপণ প্রক্রিয়া চলমান। শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, খাগরাটা আজমল হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে সামাজিক বনায়নের অংশীদার হাবিবুর রহমান আকাশমনির চারা রোপণ করছেন। ওই এলাকার অধিকাংশ প্লটেই লাগানো হচ্ছে নিষিদ্ধ গাছের চারা। এ বিষয়ে জানতে বটতলি বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রজাতির গাছ মাটি থেকে অত্যধিক পানি শোষণ করে, ফলে মাটির আর্দ্রতা কমে যায় এবং শুষ্ক বা মৌসুমি জলবায়ু যুক্ত এলাকায় এটি ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়। এই গাছের পাতায় থাকা টক্সিন গোড়ায় পড়ে মাটিকে বিষাক্ত করে তোলে, যার ফলে উর্বরতা নষ্ট হয়। এগুলোর চারপাশে অন্য কোনো গাছ সহজে জন্মাতে পারে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেফালি বেগমের ভাষ্য, মনুষ্যসৃষ্ট কোনো বনে পাখি ও প্রাণী বাস করতে পারে না। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন করায় বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় বৃক্ষ, পাখি ও প্রাণিকুল। ধ্বংস হচ্ছে বনের বাস্তুসংস্থান চক্র। পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রাকৃতিক বনের বিকল্প নেই।
ঢাবির মৃত্তিকা, পানি পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আখতার হোসাইন খান জানান, সামাজিক বনায়নের নামে এমন কিছু করা উচিত না, যা প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করবে। সামাজিক বনায়ন করতে হবে রাস্তার আশপাশে পতিত জমিতে।
ঢাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন বলেন, প্রাকৃতিক এই বনে প্রায় ১০ প্রজাতির বৃক্ষ ছিল। ছিল বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী। সামাজিক বনায়নে প্রকৃতিকে বিবেচনা করা হয়নি। জীববৈচিত্র্যকে বিবেচনা করা হয়নি। বিবেচনা করা হয়েছে গাছগুলো বড় হলে কেটে সরকার নেবে কিছু আর স্থানীয়রা নেবে কিছু। এভাবে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করায় বাস্তুসংস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদেশি বৃক্ষ আকাশমনি গাছের পাতা পড়লে জমি অনুর্বর হয়ে যায়। ফসল নষ্ট হয়ে যায়। আকাশমনি গাছ লাগানো যাবে না। যদি সামাজিক বনায়ন করতেই হয়, তবে দেশীয় বৃক্ষ লাগাতে হবে।
ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সাব্বির হোসাইনের ভাষ্য, স্থানীয় পর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদকদের সঙ্গে সভা করে নিষিদ্ধ গাছ রোপণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এর পরও কেউ এ ধরনের গাছ রোপণ করলে বরাদ্দ প্লট বাতিল করা হবে।
ঘাটাইলে বনের সভাপতি ইউএনও আবু সাঈদ বলেন, বনের জায়গায় কেউ নিষিদ্ধ গাছ রোপণ করলে আর তাঁর সঙ্গে বন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে চিহিৃত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন সমকালকে বলেন, আকাশমনি লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোথায়ও লাগানো হলে তা তুলে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ট কর মকর ত প র ক ত ক বন বন র জ পর ব শ ব স কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গফরগাঁওয়ে ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ট্রাক ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে উপজেলার পাগলা থানার পাঁচবাগ ইউনিয়নের চৌকা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, টাঙ্গাব ইউনিয়নের বামুনখালী বটতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইকবাল হোসেন (৫৫) ও অটোরিকশা চালক ওয়াসিম (২৮)। নিহত ওয়াসিম পাঁচবাগ দিঘীরপাড় গ্রামের আবু বকরের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাব বটতলা বাজার থেকে যাত্রী নিয়ে পাঁচবাগ চৌকা বাজারে আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা এক ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং অটোরিকশা চালকসহ কয়েকজন আহত হন।
পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে পাশের হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে অটোরিকশা চালক ওয়াসিম মারা যান। একই ঘটনায় আহত অপর দুজনকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পাগলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘাতক ট্রাক চালককে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।