সরকারি আমলাদের পিএইচডির প্রায়োগিক ক্ষেত্র কোথায়: ফরহাদ মজহার
Published: 21st, May 2025 GMT
কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, জনগণের অর্থে বিদেশে গিয়ে সরকারি আমলাদের করা পিএইচডির প্রায়োগিক ক্ষেত্র কোথায়? প্রশাসন সম্পর্কে ধারণা নিতে পিএইচডির প্রয়োজন হলে তাঁরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সেটা করতে পারেন।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের আনোয়ার হোসেন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সচেতন বিজ্ঞানী ও ভাববৈঠকিরা ‘বাংলাদেশে পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণার সম্ভাবনা, সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, তাঁরা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নন। তাঁরা আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। পরাশক্তিগুলো এখন আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশির দশক পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামরিক অংশগ্রহণ থাকত। কিন্তু এখন পরাশক্তিগুলো বিভিন্ন এজেন্সি ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত করে। আমলাদের পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমণের টিকিট দিলে তাঁরা অনেক কিছু স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত থাকেন।
পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের উত্থাপিত ১০টি দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ফরহাদ মজহার বলেন, যে রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চা গড়ে তুলতে পারে না, তাদের সার্বভৌমত্ব অর্থহীন। আধুনিক রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হলে পরমাণু ও বিজ্ঞানচর্চায় স্বাধীনতার বিকল্প নেই। ৫৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের মানুষকে এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বহুবার জীবন দিতে হয়েছে।
আশির দশক পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামরিক অংশগ্রহণ থাকত। কিন্তু এখন পরাশক্তিগুলো বিভিন্ন এজেন্সি ও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত করে।ফরহাদ মজহার, কবি ও রাষ্ট্রচিন্তকরাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে বলে মত দেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, জ্ঞান উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এখনো মনোযোগী হওয়া যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করতে পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণা কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা দেওয়া জরুরি।
রাষ্ট্রকে গণসার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জানি না, প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেশ কতটা নিরাপদ। কারণ, জনগণের কাছে প্রধান উপদেষ্টাকে জবাবদিহি করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি।’
গত ৮ আগস্ট পুরোনো সংবিধানের অধীনে উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করায় চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন,‘ ছাত্ররা যে নতুন সংবিধানের কথা বলছেন, সেটা অর্জিত হলে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের স্বাধীনতা ফিরে পাবে। তাই আপনাদের রাজপথের সংগ্রামেও অংশ নিতে হবে।’
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শেখ মঞ্জুরা হক। এ সময় তিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন, বিজ্ঞানীদের উচ্চশিক্ষার অনুমতি প্রদানের এখতিয়ার পরমাণু শক্তি কমিশনকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের পদমানক্রম নিশ্চিত করাসহ ১০টি দাবি উত্থাপন করেন।
পরমাণু শক্তি কমিশন নিয়ে গত ৫৩ বছরে কেউ ভাবেননি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের আগের সেই জৌলুশ এখন মলিন হয়ে গেছে। পাশের দেশ ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের জৌলুশ দূর থেকেও বোঝা যায়।
পরমাণু শক্তি কমিশনের নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকাকে বিস্ময়কর বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু কমিশন সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে সফল হতে পারেনি। কারণ, সরকারি কর্মকর্তারা শুধু সার্টিফিকেট (সনদ) চেনেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীরা ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পেয়ে সেটা হাতছাড়া করেছেন। জ্ঞান নিয়ন্ত্রণের এই মানসিকতা কেন? আমলাদের জ্ঞানহীনতার এমন উদাহরণ লজ্জার। কমিশনের তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
আলোচনা সভায় পরমাণু শক্তি কমিশনের সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো.
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম সাইফুল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সভার প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রোমেল, পরমাণু শক্তি কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক ফারিয়া নাসরীনসহ কমিশনের বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত স ব ধ নত আমল দ র র পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ: ডিএসই পরিচালক
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল কামরুজ্জামান বলেন, ‘‘দেশের শিল্পোন্নয়ন তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম৷ পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই জনগণের সঞ্চিত ছোট ছোট সঞ্চয় বৃহৎ পুঁজির সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পায়ন গড়ে ওঠে৷ আপনারাই এই পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত নেতৃত্বদানকারী৷ তাই এই পুঁজিবাজার সম্পর্কে একটা ধারনা থাকা দরকার৷ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য পুঁজিবাজার বিষয়ক জ্ঞান অপরিহার্য। আপনাদের উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনা ভবিষ্যতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এই অঞ্চলে একটি নেতৃত্বদানকারী স্টক এক্সচেজ্ঞ হিসেবে আবির্ভূত হবে৷’’
সোমবার (১৯ মে) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিসনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন৷
পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে এ সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
ডিএসইর জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ শাহ, বিইউবিটি এর ফ্যাকাল্টি অর বিসনেস এন্ড সোশ্যাল সাইন্সেস এর অধ্যাপক ও ডিন ড. সাঈদ মাসুদ হুসাইন এবং ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন রহমান৷
ডিএসইর পরিচালক বলেন, ‘‘এ আয়োজন পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাকটিক্যালভাবে জানার একটি বড় সুযোগ। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা ডিএসই’র এই সচেতনতামূলক কর্মশালার মাধ্যমে পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে টেকনিক্যাল বিষয়ে জানতে পারবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে জানার অনেক বড় একটি সুযোগ। আজকের এই প্রোগামে যা জানা যাবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য যেমন কাজে আসবে, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের জন্যও কাজে আসবে বলে আমি মনে করি।’’
তিনি অরো বলেন, ‘‘বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ছাএ শিক্ষক সকল শ্রেণীর জন্য ডিএসই’র বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ঝুঁকি এড়িয়ে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে। জনগণের দোড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌছে দেওয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তরকাজ করে যাচ্ছে ডিএসই৷’’
কর্মশালায় পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন রহমান৷ মূল প্রবন্ধে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ঢাকা/এনটি/টিপু