অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রণয়নের আহ্বান: অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও এমপিদের চিঠি
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রণয়ন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বিলুপ্ত ঘোষণা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ৪০ জনের বেশি সিনেটর ও পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। আজ বুধবার তাঁদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন সিনেটর লারিসা ওয়াটার্স, ডেভিড শোব্রিজ, জর্ডন স্টিল-জন, ফাতিমা পায়মান, লিডিয়া থর্প, পেনি অলম্যান-পায়েন, মেহরীন ফারুকি, স্টেফ হজিনস-মে, বার্বারা পোকক, পিটার উইশ-উইলসন, ডরিন্দা কক্স, নিক ম্যাককিম ও সারাহ হ্যানসন-ইয়াং, পার্লামেন্ট সদস্য এলিজাবেথ ওয়াটসন-ব্রাউন, জেনি লিওং, তামারা স্মিথ, কোবি শেটি, টিম রিড, এলেন স্যান্ডেল, মাইকেল বার্কম্যান, গ্যাব্রিয়েল দে ভিয়েত্রি, রোজালি উডরাফ, তাবাথা ব্যাজার, সিসিলি রোজল, ভিকা বেলি, হেলেন বার্নেট, এমএলসি অ্যাবিগেল বয়ড, আমান্ডা কহিন, ক্যাথরিন কোপসি, সু হিগিনসন, কেট ফেয়ারম্যান, আনাসিনা গ্রে-বার্বেরিও, আইভ পুগলিয়েলি, সারাহ ম্যানসফিল্ড, ব্র্যাড পেটিট, ক্যাসি ও’কোনর, রবার্ট সিমস এবং এমএলএ শেন র্যাটেনবারি, অ্যান্ড্রু ব্র্যাডডক, জো ক্লে, লরা নাটাল।
অধ্যাপক ইউনূস বরাবর ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ও পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তার অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছি। এ লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ নির্বাচনী পথনকশা প্রণয়ন, ‘বর্ষা বিপ্লবে’ (মনসুন রেভল্যুশন) ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সহযোগিতা করতে আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্ষা বিপ্লব চলাকালে বাংলাদেশের জনগণ যে সাহস ও বীরত্ব দেখিয়েছে, তাকে স্বীকৃতি জানাই। এর মধ্য দিয়ে আপনার প্রশাসনের সামনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
নির্দিষ্ট ও জরুরি নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণাচিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক বৈধতা অর্জন পুরোপুরি একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনই একটি স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় বৈধতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনী স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।’
চিঠিতে সিনেটর ও পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা আমাদের বলেছেন, এই নির্বাচন চলতি বছরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করেন।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদ্যমান সব আইনি ও নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগের মাঠ নিশ্চিত করুন, যাতে কোনো পক্ষের প্রতি অন্যায় প্রভাব বা দমন-পীড়ন না হয়।’
সিনেটর ও পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ এই পরিবর্তনগুলো আনবে, জনগণকে ক্ষমতায়িত করবে এবং বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর বন্ধু ও সহযোগী দেশ হিসেবে তার যথাযথ স্থান নেবে।’
‘বর্ষা বিপ্লবে’ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতচিঠিতে বলা হয়, ‘বর্ষা বিপ্লবী হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা দেখে বিশ্বের অনেক মানুষের মতো আমরাও অনুপ্রাণিত হয়েছি। তবে এই বিজয় অর্জনের জন্য ব্যাপক মানবিক মূল্য চুকাতে হয়েছে।’
এতে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রয়টার্স এবং জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। পূর্ববর্তী সরকারের বহু বছরের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের পর এটা ঘটেছে।
সিনেটর ও পার্লামেন্ট সদস্যরা চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা আমাদের কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন, আমরা যেন আপনার সরকারকে স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আগের রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানাই। ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য সত্য উদ্ঘাটন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।’
চিঠিতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা এই আহ্বানগুলোর দৃঢ়তা ও মানবিকতাবোধকে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি জানাই।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) অবিলম্বে বিলুপ্ত ঘোষণাচিঠিতে উল্লেখ করা হয়, একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যালোচনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সাল থেকে র্যাবের হাতে ২ হাজার ৬৯৯ জন বেআইনিভাবে নিহত হয়েছেন। এই বাহিনী সম্পূর্ণ দায়মুক্তি নিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধ করেছে ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে র্যাবের নেতৃত্বের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে আমরা সমর্থন জানাই। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সরকারের প্রতিও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।’
চিঠিতে পার্লামেন্টের দুই কক্ষের সদস্যরা বলেন, ‘আবারও উল্লেখ করছি, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মানুষ আপনার প্রশাসনের কাছে র্যাব বিলুপ্তি এবং এই বাহিনীর হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অনুরোধ জানিয়েছেন।’
তাঁরা বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে ও জনসমক্ষে একটি নির্দিষ্ট, সময়সীমাবদ্ধ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে আপনার প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি জরুরি ও আপসহীন পদক্ষেপ। এই পর্যায়ে যেকোনো ধরনের বিলম্ব বা অস্পষ্টতা কেবল জনগণের আস্থাই নষ্ট করবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎকে চরম ঝুঁকির মুখে ফেলবে। বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে।’
চিঠিতে সিনেটর ও পার্লামেন্ট সদস্যরা বলেন, ‘আমরা আপনার নেতৃত্বের কাছ থেকে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ আশা করছি। গণতান্ত্রিক বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় আমরা গঠনমূলকভাবে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য ন য গণত ন ত র ক ল দ শ র জন ন শ চ ত কর আপন র প সরক র র প রক র র র জন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি মনে করি—জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু ব্যক্তি যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়বেন; তাদের জন্য হয়তো প্রয়োজন আছে।’’
শনিবার (১ নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুন, সম্পাদক রিটন
একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ চান আলাল
হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘এই ধরনের সনদের আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন–একটা পার্লামেন্ট। যেখানে আগামী দিনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। যেই পার্লামেন্ট এই সনদকে বাস্তবায়িত করবে এবং আগামী গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে সক্ষম হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রয়োজন একটি নির্বাচন। যেখানে জনগণ প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে। আমরা আশা করব, আগামীতে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। এই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন, জনগণের প্রতিনিধি হবেন; তারাই জুলাই সনদকে সমর্থন করবেন।’’
‘‘আমার দল বিএনপি জুলাই সনদকে সমর্থন করে, আমরাও এটি সমর্থন করতে বাধ্য। কিন্তু, এটার মধ্যে এমন জিনিস ঢোকাবেন না, যেটি নিয়ে আগে ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি।’’- যোগ করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশের জনগণকে জিজ্ঞেস করেন, কেউ পিআর চিনেও না। পিআর কেউ চায়ও না। আমরা শত বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আসছি। তারা (পিআর দাবি করা দলগুলো) ব্যক্তির কাছ থেকে, ভোটারের কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে সমর্পণ করতে চায়। আমরা চাই, বর্তমান যে ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে, সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে নির্বাচন হয়।’’
হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, ‘‘আমাদের একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র আছে, যারা চায় না বাংলাদেশ স্বনির্ভর হোক। নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষত থাকুক, এটা তারা চায় না। তারা আশ্রয় দিয়েছে মাফিয়া শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা সেখানে বসে কীভাবে বাংলাদেশে নাশকতা করা যায়, সে বিষয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। কলকাতায় তারা অফিস খুলেছেন। আমি তাদেরকে একটা পরামর্শ দেব। শুধু কলকাতা নয়, ভারতের প্রত্যেকটা প্রদেশে আপনারা একটা করে অফিস খুলেন। ভারতের কাছ থেকে সনদ নেন। তারপরে ভারতের রাজনীতিতে আপনারা মিশে যান। বাংলাদেশে আপনাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’’
ঢাকা/রায়হান/রাজীব