ইসি আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নেই, বিএনপির দলীয় কার্যালয় হয়েছে: নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী
Published: 21st, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নেই। এটি এখন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে এই কর্মসূচি করে এনসিপি।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘ইসি এখন আর কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক্সিস্ট করে না। এটি বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এটা বিএনপির একটা মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা দিয়েছে জনগণ, এই সরকার জনগণের রক্তের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রক্তের ম্যান্ডেটে বসে আপনারা বিএনপির পক্ষে কাজ করতে পারেন না। আপনারা বিএনপির কাছে নগর ভবন ছেড়ে দিতে পারেন না। আপনারা বিএনপির কাছে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ইলেকশন কমিশন ছেড়ে দিতে পারেন না।’
নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোক বসিয়ে বিএনপি নিজেদের ৩১ দফার কথা ভুলে গেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘৩১ দফা হলো জনগণকে বোকা বানানোর কিছু কাগজপত্র।’
ইসিসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিএনপি দখল করেছে বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। জনগণের করের টাকায় চলা এসব প্রতিষ্ঠানকে দখলমুক্ত করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, ‘যদি আপনারা না করতে পারেন, তাহলে উপদেষ্টা প্যানেলে যারা বিএনপির রয়েছে, তাদের আপনারা দ্রুত গতিতে বের করে দিন।’
‘বিএনপিপন্থী’ উপদেষ্টারা এসি রুমে বসে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘কেউ করছে বিচারালয়ে, কেউ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে, আর কেউ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।’
বিএনপি লাশের রাজনীতি শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দীন আহমেদের বক্তব্য গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। তিনি ভারতের প্রেসক্রিপশনে দেশে মুজিববাদী সংবিধান রাখার জন্য কাজ করছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু সংবিধান নিষিদ্ধ হয়নি। সংবিধান নিষিদ্ধের জন্য তারা সংবিধান পোড়ানো কর্মসূচি করবেন। বাংলাদেশে কোনো মুজিবীয় সংবিধান থাকবে না।
ইসিকে পুনর্গঠন করার পর সংস্থাটির সক্ষমতা প্রমাণে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এনসিপির এই মুখ্য সমন্বয়কারী।
আজ বেলা সোয়া দুইটার দিকে আজকের মতো কর্মসূচি শেষ হয়। এনসিপির নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দাবি আদায়ে তাঁদের কর্মসূচি চলবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ন ন স র দ দ ন প ট য় র ব এনপ র আপন র সরক র এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
আবু সাঈদ, মুগ্ধ বা ওয়াসিমরা রক্ত দিয়েছে শুধু স্থানীয় নির্বাচনের জন্য না: জাহিদ হোসেন
মানুষ গত চারটি টার্ম গেল ভোট দিতে পারেনি। জনগণ তাদের অধিকার চায়, জনগণ তার ভোটাধিকার চায়, জনগণ তার গণতন্ত্র ফেরত চায়। সে জন্যই ছিল ১৭ বছরের আন্দোলন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল ৫ আগস্ট। আবু সাঈদ, মুগ্ধ বা ওয়াসিমরা রক্ত দিয়েছে বা আমাদের চৌধুরী আলম অথবা ইলিয়াস আলীরা হারিয়ে গেছেন শুধু স্থানীয় নির্বাচনের জন্য না, দেশের মানুষের গণতন্ত্র ফেরত দেওয়ার জন্য। সেই রক্তের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাকিমপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফেরদৌস রহমান।
জাহিদ হোসেন তাঁর বক্তব্য বলেন, ‘আজকে যারা বিএনপির সমালোচনা করেন তাঁদের বলব, সমালোচনা না করে ঐক্যবদ্ধ হোন। কারণ, ঐক্যবদ্ধ জাতি ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট তৈরি করতে পেরেছিল। যদি অনৈক্য হয়, তাহলে মনে রাখবেন ওই লুটেরার দল ওরা কিন্তু ভেগে গেছে মাত্র দুই-চার-দশজন। কিন্তু ওরা আপনার আশপাশেই আছে। কাজেই স্বৈরাচারের দোসরদের পথ বা ছিদ্রি দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আজকে যারা জাতীয় নির্বাচনকে দূরে ঠেলে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলেন, তাঁরা কিসের কথা বলেন। আপনি কি চান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অবনতি হোক।’
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি ভবিষ্যৎমুখী রাজনৈতিক দল। আমাদের নেতা তারেক রহমান উনি কত সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেছেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান উনি ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ডালভাত কর্মসূচি দিয়েছিলেন। সর্বোপরি ভিশন ২০৩০। তারেক রহমান ওনাদের যোগ্য সন্তান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।’
সংস্কার প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলে। কেউ কেউ একটু বলার চেষ্টা করে। বিএনপি নাকি সংস্কারে বিশ্বাস করে না। আরে বাবারা যারা আপনারা কথা বলেন, আপনারা কি ভুলে গেছেন বিএনপি তো সেই দল, আপনারা যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থায় আটকে গিয়েছিলেন, তখন কিন্তু বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরত দিয়েছিল। সেটি মনে থাকার কথা, শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে। যখন আপনারা চারটি পত্রিকায় আটকে গিয়েছিলেন, তখন কিন্তু বিএনপি সংস্কারের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যখন এই দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ছিল, এই বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তখন কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়ে সংস্কার করেছিল। ১৯৭৪–এর কালাকানুন কে সরিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়া সরিয়েছেন।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘শহীদের এই জুলাই মাসে দাঁড়িয়ে অহেতুক অনৈক্য সৃষ্টি করবেন না। ঐক্যবদ্ধ জাতি পারে বাংলাদেশকে আগামীর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে। অনৈক্য কোনো অবস্থাতেই আপনাকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেবে না। বরং বিশৃঙ্খলা উপহার দিতে পারে। কাজেই সবাইকে বলব, দায়িত্বশীল আচরণ করুন। কথাবার্তা বলার সময় আয়নায় চেহারা দেখুন। অতীত থেকে শিক্ষা নিন, ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতি করেন এবং জাতীয়তাবাদী দলের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সব সময়ই প্রস্তুত। আগামী দিনে মানুষকে, জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিএনপি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’
অনুষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা আকরাম হোসেন মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শিল্পী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজা আহমেদ, পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ খান, পৌর বিএনপির সভাপতি ফরিদ খান, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।