চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক-সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগে বহিষ্কৃত ১০ ছাত্রীর মধ্যে ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে একজনের স্থায়ী ও তিনজনের ৬ মাস করে বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

বুধবার (২১ মে) বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া  হয়েছে।

স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা শিক্ষার্থী হলেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের আফসানা এনায়েত এমি।

আরো পড়ুন:

জকসু নির্বাচনের দাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের

গোপালগঞ্জে নার্স-মিডওয়াইফ শিক্ষার্থীদের শাটডাউন কর্মসূচি

বহিষ্কারাদেশ বাতিল হওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মেরিন সায়েন্সেস ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী এলিসা স্বর্ণা চৌধুরী, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া আহমেদ পল্লী মজুমদার, একই বর্ষের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বৃষ্টি, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা ইয়াসমিন পুতুল, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ আশফিয়া নাহার এশা এবং একই বর্ষের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাইসারা জাহান ইশা। তাদের প্রত্যেককেই ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল।

অন্যদিকে, ৬ মাসের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা শিক্ষার্থীরা হলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী রওজাতুল জান্নাত নিশা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একই বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া মিথিলা এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিকদার। তাদের বহিষ্কারাদেশ ২ বছর থেকে কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। 

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ৫৫৯তম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় যেসব ছাত্রীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আত্মপক্ষ সমর্থনের পর বিষয়গুলো পূনরায় তদন্তের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা ছাত্রীর স্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকবে। এছাড়া নয়জনের মধ্যে ছয়জন ক্ষমা চাওয়ায় তাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং বাকি তিনজন ক্ষমা না চাওয়ায় ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তাদের বহিষ্কারাদেশ দেড় বছর কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো.

কামাল উদ্দিন বলেন, “সিনিয়র প্রক্টর অধ্যাপক ড. কোরবান আলীর গায়ে আঘাত করার কারণে একজনের স্থায়ী বহিষ্কার বহাল রয়েছে। বাকি বহিষ্কৃত নয়জনের মধ্যে নিজ ভুলের লিখিত ও মৌখিক ক্ষমা চাওয়ায় ছয়জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর ক্ষমা না চাওয়ায় তিনজনের ৬ মাসের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানের মতো। তারা অনেকসময় অনেক ভুল করে। শিক্ষার্থীরা ভুলের ক্ষমা চাইলে আমরা সেটি ইতিবাচকভাবেই দেখি। শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। তবুও কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, সে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তি দিতে হয়।”

গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের (বর্তমান নাম বিজয়-২৪ হল) নামফলক ও হলের সামনে কংক্রিট নির্মিত নৌকা ভাঙতে গেলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত আফসানা এনায়েত এমি সিনিয়র প্রক্টর অধ্যাপক ড. কোরবান আলীকে থাপ্পড় দেন।

এছাড়া ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া এক সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেওয়া ও অন্য সাংবাদিকদের হেনস্তার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আফসানা এনায়েত এমিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও তার সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নয়জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ বহিষ্কারাদেশ প্রহসনমূলক বলে দাবি করে এর বাতিল চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষ বর ষ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের সবচেয়ে চাকচিক্যপূর্ণ এলাকায় একটি যৌন ব্যবসা এবং অসহায় নারীদের শোষণ–নির্যাতনের মূল হোতাকে চিহ্নিত করেছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল।

চার্লস মোসিগা নামের ওই ব্যক্তি পরিচয়-গোপনকারী বিবিসি প্রতিবেদককে বলেন, এক সেক্স পার্টির জন্য তিনি ন্যূনতম এক হাজার ডলার দরে নারী সরবরাহ করতে পারবেন। তাঁরা অনেকেই গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে ‘প্রায় সবকিছুই’ করতে পারবে। মোসিগা লন্ডন শহরের সবেক একজন বাসচালক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্মত্ত ‘সেক্স পার্টি’ নিয়ে বহু বছর ধরেই নানা কথা চালু আছে। টিকটকে এ-সংক্রান্ত একটি হ্যাশট্যাগ ৪৫ কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়েছে। এটা ধরে অনেক ব্যঙ্গাত্মক ও জল্পনামূলক তথাকথিত অনুসন্ধানী কনটেন্ট ছড়িয়েছে। সেগুলোতে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে অর্থলোভী কিছু নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারের ভূমিকা নেন এবং তাঁরা গোপনে মানুষের যথেচ্ছ যৌন চাহিদা মিটিয়ে বিলাসী জীবনযাপনের খরচ জোগান।

বিবিসির অনুসন্ধানী দলকে বলা হয়েছে, বাস্তবতা আরও ভয়াবহ।

উগান্ডার কয়েকজন তরুণী বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি, মোসিগার অধীনে তাঁদের যৌনকর্ম করতে হবে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, তাঁরা সুপার মার্কেট বা হোটেলের মতো কোনো জায়গায় কাজ করার জন্য আরব আমিরাতে যাচ্ছেন।

‘মিয়া’ (ছদ্মনাম) বলেন, মোসিগার আনা গ্রাহকদের অন্তত একজন নিয়মিত মেয়েদের গায়ে মলত্যাগ করতে চান। তিনি বলেন, মোসিগার চক্র তাঁকে ফাঁদে ফেলে এ কাজে জড়িয়েছে।

মোসিগা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি শুধু বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে নারীদের বাসা পেতে সহায়তা করেন। আর তাঁরা মোসিগার সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে যান, কারণ তাঁর সঙ্গে দুবাইয়ের অনেক ধনাঢ্য মানুষের যোগাযোগ আছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে উন্মত্ত ‘সেক্স পার্টি’ নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। অভিযোগ আছে, অনেক অর্থলিপ্সু নারী ইনফ্লুয়েন্সার তাঁদের বিলাসী জীবনযাপনের জন্য গোপনে অর্থের জোগান মেটাতে অস্বাভাবিক ও বিকৃত যৌন চাহিদা মেটানোর কাজও করছেন।

অনুসন্ধানে বিবিসি আরও জানতে পেরেছে, মোসিগার সঙ্গে যোগসূত্র থাকা দুই নারী দুবাইয়ের সুউচ্চ ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন। যদিও তাঁদের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের স্বজন ও বন্ধুরা মনে করেন, পুলিশের আরও তদন্ত করা উচিত ছিল।

মোসিগা বলেন, ঘটনা দুটি দুবাই পুলিশ তদন্ত করেছে। এ–সংক্রান্ত তথ্যের জন্য তিনি বিবিসিকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

মারা যাওয়া দুই নারীর একজন মোনিক কারুঙ্গি। তিনি পশ্চিম উগান্ডা থেকে দুবাইয়ে আসেন। মোসিগার জন্য কাজ করা আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে মোনিকের ঠাঁই হয়।

একজন নারী বলেন, তিনি ২০২২ সালে মোনিকের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থেকেছেন। বিবিসি এই নারীর নাম দিয়েছে কেইরা।

কেইরা বলেন, ‘(মোসিগার) ওই ফ্ল্যাটটি ছিল বাজারের মতো। সেখানে প্রায় ৫০টি মেয়ে একসঙ্গে থাকত। সে (মোনিক) খুশি ছিল না। কারণ, সে যা চেয়েছিল, তা পায়নি।’

মোনিকের বোন রিতা বলেন, একটি সুপার মার্কেটে কাজ করবেন ভেবে তাঁর বোন দুবাই গিয়েছিলেন।

মোনিকের সঙ্গে মিয়ারও পরিচয় ছিল। বিবিসিকে মিয়া বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরেতে চাইলে তিনি (মোসিগা) সহিংস হয়ে ওঠেন। তিনি জানান, দুবাই আসার পর মোসিগা তাঁকে বলেছিলেন—তিনি ইতিমধ্যে মিয়ার কাছে ২ হাজার ৭১১ ডলার পান। ঠিক সময়ে পরিশোধ না করলে দুই সপ্তাহের মধ্যে এটা দ্বিগুণ হবে।

মিয়া বলেন, ‘বিমান টিকিট, ভিসা খরচ, বাসা ভাড়া, খাবার খরচ মেটাতে তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পুরুষদের কাছে অনুনয় করতে হবে, যাতে তারা কাছে আসে ও শয্যাসঙ্গী হয়।’

ট্রয়ের দাবি, মোসিগা এত দিন এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন কারণ, তিনি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে কখনো নিজের নাম ব্যবহার করতেন না। গাড়িচালক, গাড়ি ও বাড়ি ভাড়াসহ সব কাজে ট্রয় এবং তাঁর মতো অন্যদের নাম ব্যবহার করা হতো।

মাইকেল (ছদ্মনাম) নামে মোনিকের এক আত্মীয় বিবিসিকে বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মোসিগার কাছে মোনিকের প্রায় ২৭ হাজার ডলার ঋণ জমে গিয়েছিল। মোনিকে প্রায়ই মাইকেলকে কাঁদতে কাঁদতে ভয়েস নোট পাঠিয়ে এ কথাগুলো বলত।

মিয়া বলেন, তাঁদের গ্রাহকদের বেশির ভাগই ছিলেন ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ মানুষ। এদের অনেকের চরম বিকৃত যৌন চাহিদা ছিল। নিচু গলায় তিনি বলেন, একজন গ্রাহক মেয়েদের ওপর মলত্যাগ করে সেটা খেতে বলতেন।

লেক্সি নামের (ছদ্মনাম) আরেক নারী বলেন, অন্য একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে তিনি এই কাজে জড়িয়েছেন। তিনিও বলেন, গ্রাহকেরা প্রায়ই এমনটা করতে চাইতেন। একজন গ্রাহকের অমানুষিক ঘৃণাপূর্ণ বিকৃত চাহিদা বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, এমন অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর বিশ্বাস জন্মেছে যে, এসব চরম বিকৃত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষের ব্যাপার থাকতে পারে।

লেক্সি বলেন, ‘প্রতিবার যখন আমি বলতাম, এগুলো করতে চাই না, তাঁরা আরও মজা পেত। তাঁরা এমন কাউকে চাইত, যে কিনা কাঁদবে, চিৎকার করবে ও পালাতে চাইবে। এমন কেউ, যে হবে কৃষ্ণাঙ্গ।’

লেক্সি বলেন, তিনি পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে বলেছিল, ‘তোমরা আফ্রিকানরা একে অপরের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছ। আমরা এতে জড়াতে চাই না। তারপর তাঁরা ফোন কেটে দেয়।

মোনিকের পরিবার তাঁর লাশ পায়নি। বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, তাঁকে দুবাইয়ে আলকুসাইস কবরস্থানের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অংশে দাফন করা হয়েছে।

দুবাই পুলিশের কাছে বিবিসি এই অভিযোগ তুলে ধরলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি।

পরবর্তী সময়ে অবশ্য লেক্সি উগান্ডায় ফিরতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি এ ধরনের চক্রের ফাঁদে পড়া নারীদের উদ্ধার ও সহায়তায় কাজ করছেন।

চার্লস মোসিগাকে খুঁজে পাওয়ার কাজটি সহজ ছিল না। বিবিসির অনুসন্ধানকারী দলটি শুধু অনলাইনে তাঁর একটি ছবি পেয়েছিল। সেটিও ছিল পেছন থেকে তোলা, তা ছাড়া, নানা নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন মোসিগা।

উন্মুক্ত উৎস থেকে নেওয়া তথ্য, ছদ্মবেশে অনুসন্ধান এবং মোসিগা চক্রের এক সাবেক সদস্যের দেওয়া তথ্য—সব মিলিয়ে অনুসন্ধানকারী দল তাঁকে দুবাইয়ের মধ্যবিত্ত এলাকা জুমেইরাহতে খুঁজে পায়।

আরও পড়ুনদুবাইয়ের যৌনপল্লি থেকে তরুণী উদ্ধার, আসামিদের অব্যাহতি চায় পুলিশ২৭ মার্চ ২০২২

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছিল, মোসিগার ব্যবসা মূলত অবমাননাকর যৌনকর্মের জন্য নারীদের সরবরাহ করা। বিষয়টি যাচাই করতে অনুসন্ধানী দল একজন ছদ্মবেশী প্রতিবেদককে পাঠায়। তিনি নিজেকে একজন অনুষ্ঠান আয়োজক হিসেবে পরিচয় দেন, যিনি বিলাসবহুল পার্টিগুলোর জন্য নারী খুঁজছেন।

অনুসন্ধানকারী দল যখন মোসিগার সঙ্গে তাঁর ব্যবসার বিষয়ে কথা বলছিল, তখন তাঁকে শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী বলে মনে হচ্ছিল।

মোসিগা বলেন, ‘আমাদের কাছে ২৫ জনের মতো মেয়ে আছে। এদের অনেকেই মুক্তমনা…তারা প্রায় সবকিছুই করতে পারে।’

খরচের ব্যাপারে মোসিগা বলেন, রাতপ্রতি একেকজনের জন্য এক হাজার ডলার থেকে শুরু। তবে অস্বাভাবিক কাজের জন্য বেশি অর্থ দিতে হবে। তিনি বিবিসির রিপোর্টারকে একটা নমুনা রাতের দাওয়াত দেন।

মোসিগা বলেন, এই ব্যবসা তাঁর অতি প্রিয়। লটারিতে ১০ লাখ পাউন্ড জিতলেও তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এটি এখন আমারই একটি অংশ হয়ে গেছে।’

ট্রয় নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি মোসিগার চক্রের অপারেশনস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। চক্রটি কীভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে তিনি বিবিসির অনুসন্ধানী দলকে তথ্য দেন।

ট্রয় বলেন, মোসিগা বিভিন্ন নৈশক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীদের টাকা দেন, যাতে তাঁর পাঠানো নারীরা ভেতরে ঢুকে গ্রাহক খুঁজতে পারে।

আরও পড়ুনদুবাইয়ে ধর্ষণের শিকার নরওয়েজীয় নারীর কারাদণ্ড২১ জুলাই ২০১৩

ট্রয়ের দাবি, মোসিগা এত দিন এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পেরেছেন কারণ, তিনি আনুষ্ঠানিক কাগজপত্রে কখনো নিজের নাম ব্যবহার করতেন না। গাড়িচালক, গাড়ি ও বাড়ি ভাড়াসহ সব কাজে ট্রয় এবং তাঁর মতো অন্যদের নাম ব্যবহার করা হতো।

২০২২ সালের ২৭ এপ্রিলে দুবাইয়ে প্রবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয় আবাসিক এলাকা আল বারশায় একটি সেলফি তুলে পোস্ট করেছিলেন মোনিক। এর চারদিন পরই তিনি মারা যান। দুবাইয়ে আসার চার মাসের মাথায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মিয়ার বলছেন, মোনিক যত দিন ছিলেন, মোসিগার সঙ্গে তাঁর নিয়মিত ঝগড়া হতে দেখেছেন। মোনিক মোসিগার চাহিদা পূরণ করতে অস্বীকার করছিলেন এবং চক্র থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে পেয়েছিল।

মিয়া বলেন, মোনিক একটি চাকরি পেয়েছিলেন। তিনি উচ্ছ্বসিত ছিলেন। ভেবেছিলেন, অবশেষে ঘৃণ্য জীবন থেকে মুক্তি পাবেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

মোসিগার ভাড়া করা ফ্ল্যাট ছেড়ে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটা দূরত্বে অন্য একটি ফ্ল্যাটে চলে যান মোনিক। ২০২২ সালের ১ মে ওই বাসার বারান্দা থেকে তিনি নিচে পড়ে যান।

মোনিকের আত্মীয় মাইকেল তখন দুবাইতে ছিলেন। তিনি বলেন, মোনিকের মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ তাঁকে বলেছিল, তারা তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ, মোনিকের বাসা থেকে মাদক ও অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। বারান্দায় শুধু মোনিকের আঙুলের ছাপ ছিল।

আরও পড়ুনদুবাইয়ের ড্যান্স বারে বাংলাদেশ থেকে তরুণী পাচার, বাধ্য করা হচ্ছে যৌন পেশায়২২ নভেম্বর ২০১৯

মাইকেল হাসপাতাল থেকে মোনিকের মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু এতে উল্লেখ ছিল না, তিনি কীভাবে মারা গেছেন।

মোনিকের পরিবারের জন্য এখন শোকের সঙ্গে ভয় মিলেমিশে গেছে। ভয় অন্য পরিবারগুলোর জন্য, যারা একই ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বিবিসি চার্লস অ্যাবি মোসিগার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চায়। তিনি অবৈধ যৌন ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা।’

এদিকে মোনিকের পরিবার তাঁর লাশ পায়নি। বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, তাঁকে দুবাইয়ে আলকুসাইস কবরস্থানের ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অংশে দাফন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • পুলিশের ৯ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর
  • কুয়েটের গবেষণা: ইজিবাইকে পূর্ণ যাত্রী বহন করলে যানজট কমবে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সাবেক অতিরিক্ত সচিবসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান