কক্সবাজার-১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জাফর আলমের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়ার কারণে এক আইনজীবীকে চকরিয়া আদালতে দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই ঘটনা ঘটে। অবরুদ্ধ ওই আইনজীবীর নাম মো.

তৌহিদুল এহেসান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শতাধিক ব্যক্তি আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আইনজীবী তৌহিদুল এহেসান কোর্ট পরিদর্শকের কক্ষে আশ্রয় নেন। পরে সেনাবাহিনীর দুটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তাঁকে উদ্ধার করে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাফর আলমকে চকরিয়া ও পেকুয়া থানার ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে ১৮ মে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন ঢাকার অন্য একটি মামলায় হাজিরা থাকায় তাঁকে আনা সম্ভব হয়নি। তবে সেদিন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন।

আইনজীবী তৌহিদুল এহেসান বলেন, ‘আগামী ২৭ মে শ্যোন অ্যারেস্ট শুনানির জন্য জাফর আলমকে আদালতে হাজির করার আদেশ রয়েছে। ১৮ মের ঘটনার আলোকে আদালতে একটি দরখাস্ত করেছিলাম, যাতে ভবিষ্যতে মব জাস্টিসের ঝুঁকি এড়ানো যায়।’

তৌহিদুল এহেসান আরও বলেন, ‘আজ শুনানি শেষে আদালত চত্বরে চকরিয়া পৌর বিএনপির সদস্য মো. হেলাল ও স্থানীয় যুবক মামুনের নেতৃত্বে এক দল লোক আমাকে ঘিরে ধরে। তাঁরা অশালীন ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন। বিচারকের নির্দেশে কোর্ট পরিদর্শকের কক্ষে আশ্রয় নিই। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল আমাকে উদ্ধার করে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া পৌর বিএনপির সদস্য মো. হেলাল বলেন, ‘শতাধিক নেতা–কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। আমি বরং তাঁদের সরিয়ে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে চকরিয়া অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘একজন আসামির ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাঁর পক্ষে আদালতে দাঁড়ানো আইনজীবীর ওপর হামলার চেষ্টা নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব চকর য়

এছাড়াও পড়ুন:

‘ছেলেকে নিয়ে বাড়ি তো যেতে পারিই না, তার বাবার কবরও দেখাতে পারি না’

একমাত্র ছেলে নীলাভের (ছদ্মনাম) বয়স যখন আট মাস, তখন স্বামীকে হারান আফসানা খাতুন (ছদ্মনাম)। এরপর জীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন তিনি। চাকরি, লেখালিখি আর ছেলেকে নিয়েই পথ চলতে চেয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্তে সব সময়ই তাঁর পাশে ছিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। মেয়ের মতোই ভালোবাসা ও আস্থা দিয়ে পাশে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের নিজেদের দুটি বাড়ির মধ্যে একটি নীলাভকে লিখে দিয়ে গেছেন, করে যান অসিয়তনামাও।

বিপত্তি বাধে শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যুর পর। তখন এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে একমাত্র ছেলের নিরাপত্তার শঙ্কায় গত তিন বছর স্বামীর কবর জিয়ারত করতেও শ্বশুরবাড়ির এলাকায় যেতে পারছেন না আফসানা। কারণ, তিন বছর আগে এক ঈদের রাতে প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন তাঁর দেবর।

আফসানা বলছিলেন, ঠাকুরগাঁও শহরে তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির দুটি বাড়ি ছিল। একতলা দালানে তাঁরা থাকতেন। এর পাশেই আছে আরেকটি টিনশেড বাড়ি, যেটা ভাড়া দেওয়া ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর টিনশেড বাড়িটি তাঁর ছেলের নামে এবং একতলা বাড়িটি তাঁর দেবরের নামে লিখে দেন শ্বশুর-শাশুড়ি। তাঁদের মৃত্যুর পর অন্য একটি জমি বিক্রির কথা বলে দেবর তাঁর সই চান। কিন্তু বৃত্তান্ত না জেনে তিনি সই করতে চাননি। যেহেতু তাঁর ছেলে নাবালক, তাই কোনো জমি সম্পর্কে না জেনে তো তিনি আর সই করতে পারেন না।

তখন সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে এক ঈদের রাতে আফসানা ও তাঁর ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। এরপর তিন বছর পেরিয়েছে, আর শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেননি আফসানা। করতে পারেননি স্বামীর কবর জিয়ারত। কেবল যে বাড়িটির দলিল আছে, সেখান থেকে অনলাইনে ভাড়া তুলে নেন।

কেবল আফসানাই নন

আমাদের দেশে স্বামী বা বাবার মৃত্যুর পর দাদাবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়া, সম্পদে অধিকার না দেওয়া, বাড়িতে প্রবেশের অধিকার হরণসহ নানা ঘটনা অহরহই ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির নাবালক সন্তান, মেয়েসন্তান ও স্ত্রী এ ধরনের দুর্ভোগের মুখে পড়েন। আইন না জানা, যথাযথ আইনজীবীর পরামর্শ নিতে না পারা এবং আদালত নিয়ে একধরনের নেতিবাচক ধারণা থাকায় তাঁরা অধিকারবঞ্চিত থাকেন।

তবে বাংলাদেশের আইনে এসব ঘটনার সুস্পষ্ট বিধান আছে। কেউ চাইলেই কারও অধিকার কেড়ে নিতে বা নষ্ট করতে পারে না বলে জানালেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা আফরিন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন খুবই নির্দিষ্ট। প্রথমেই যেটা করতে হবে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদ বের করতে হবে। সেখানে লেখা থাকবে যে কে কে তার বৈধ ওয়ারিশ। আর এই বৈধ ওয়ারিশকে কোনোভাবেই তাঁর অধিকার থেকে বা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

আরও পড়ুনমেয়ের কবরের পাশে থাকতে বাবা তৈরি করলেন এই বাড়ি০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আইনজীবীর পরামর্শ

এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনজীবী ফারজানা আফরিনের পরামর্শ হলো, স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে সম্পত্তির দাগ ও খতিয়ান নম্বর খুঁজে মূল দলিল বের করতে হবে। যদি সেসবের মধ্যে কোনোটি তাঁদের না জানিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়, তাহলে দেওয়ানি মামলা করা যাবে। যদি অন্য ওয়ারিশ কোনো জমি বিক্রিও করে থাকেন, তাহলে নতুন আইন অনুযায়ী, তাঁর নিজের সম্পদ বিক্রি করে হলেও বাকি ওয়ারিশদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

ফারজানা আফরিন বলেন, সন্তানকে তার দাদার বাড়িতে যেতে না দেওয়া, সন্তানের মাকে সেখানে যেতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে সিভিল কোর্টে মামলা করা যেতে পারে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মামলার আরজিটা কত ভালোভাবে লেখা হলো। আরজি ঠিকঠাক লেখা হলে অবশ্যই বাড়ি যাওয়ার অধিকার ফিরে পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

যথাযথভাবে আদালতের শরণাপন্ন হলে প্রতিকার মেলে জানিয়ে ফারজানা আফরিন বলেন, ‘কারও আইনি অধিকার অন্য কেউ চাইলেই খর্ব করতে পারে না। আদালতে সবকিছুরই প্রতিকার মেলে। আপনাকে শুধু ভালো একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে এবং আপনার পক্ষের সব কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুনসবার চেয়ে এগিয়ে থাকতে যে ৯টি এআই দক্ষতা আপনার এখনই অর্জন করা উচিত০৩ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মারা গেছেন বাদী ও চার আসামি, ৩৫ বছরেও শেষ হয়নি অস্ত্র মামলার বিচার
  • দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না জ্যাকুলিন
  • রংপুরে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে মানসিক-যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতের মামলা
  • ভোটাররা ২০০ টাকায় ভোট বিক্রি করেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • আমাদের দেশের ভোটাররা ২০০ টাকায় ভোট বিক্রি করেন: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর ওপর আক্রমণের অভিযোগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ গ্রেপ্তার
  • ‘ছেলেকে নিয়ে বাড়ি তো যেতে পারিই না, তার বাবার কবরও দেখাতে পারি না’