আম পাড়ার সময়সূচি নির্ধারিত ছিল নওগাঁয়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার থেকে গুটি আম পাড়া যাবে। সে অনুযায়ী আজ থেকে নওগাঁর কিছু কিছু বাগানে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। তবে শুরুর দিনটা তেমন জমেনি নওগাঁর আমের হাটগুলোয়।

নওগাঁ শহরের পৌর কাঁচাবাজার–সংলগ্ন পাইকারি আমের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে তেমন ভিড় নেই। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক। সকাল ৯টা পর্যন্ত আম বিক্রির পরিমাণ মাত্র কয়েক মণ।

জান্নাত ফল ভান্ডারের মালিক মারুফ হোসেন বলেন, নওগাঁর বাণিজ্যিক বাগানগুলোয় এখনো আম পাড়া শুরু হয়নি। বাসাবাড়ির আশপাশে চাষ হওয়া বিভিন্ন জাতের গুটিজাতের আম পাকতে শুরু হয়েছে। ওই সব চাষি বিক্রি করতে আনছেন, তবে পরিমাণে খুব কম। গুটি আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁতে ভালো জাতের সুমিষ্ট আম এখনো পাড়া শুরু হয়নি। তবে সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপালভোগ ও হিমসাগর আম পাড়া শুরু হয়েছে। ওই সব এলাকার আম নওগাঁর বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।

নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার আমের হাট। বেলা ১১টার দিকে সাপাহার আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, আম বেচাকেনা তেমন জমেনি। আড়তে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। দু-একজন করে আম বিক্রেতা সাইকেল ও ভ্যানে করে আম বিক্রি করতে আসছেন। প্রথম দিনেই ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ কারণে আমচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাপাহার আমের হাটের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নওগাঁয় আগাম জাতের গুটি জাতের আম, গোপালভোগ ও হিমসাগর তেমন চাষ হয় না। বাণিজ্যিক বাগানগুলোতে নাক ফজলি, আম্রপালি, বারি আম-৪, হাঁড়িভাঙা ও গৌড়মতি আম বেশি চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় আম্রপালি। জেলায় যে পরিমাণ আম চাষ হয়, তার প্রায় ৬০ শতাংশই আম্র্রপালি। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, এই আম বাজারে আসবে আগামী ১৮ জুন থেকে। আম্রপালি বাজারে আসা শুরু করলে সাপাহার আমের হাট জমজমাট হবে। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে নাক ফজলি, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে, তখন হাট ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠবে।

৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম কেনার বিষয়ে ইমাম হোসেন বলেন, আম একটা কাঁচা পণ্য। এই ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আম বেচাকেনার ক্ষেত্রে ঢলতা প্রথা চলে আসছে। এবার আম ব্যবসায়ী ও আমচাষিদের সঙ্গে সভা করে প্রশাসন ক্যারেটসহ ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম বেচাকেনার নির্দেশনা দিয়েছে। ৪৮ কেজির মধ্যে ক্যারেটের ওজন ৩ কেজি। সে হিসাবে ঢলতা নেওয়া হচ্ছে ৫ কেজি করে।

সাপাহার ছাড়াও পোরশার মিনাবাজার, নোচনাহার ও বদলগাছী সদরে আমের হাট বসে। এসব হাট এখনো জমেনি।

১২ মে নওগাঁ জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেই ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, আজ থেকে গুটিজাতের আম এল বাজারে। ২৮ মে থেকে গোপালভোগ ও আগামী ২ জুন থেকে ক্ষীরশাপাতি বা হিমসাগর আম বাজারে আসবে। জিআই পণ্য স্বীকৃতি পাওয়া ‘নওগাঁর নাক ফজলি’ আম সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙা, ১৮ জুন আম্র্রপালি, ২৫ জুন ফজলি ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো এবং ১০ জুলাই থেকে বারি আম-৪, গৌড়মতি, আশ্বিনা ও কাটিমন আম সংগ্রহ করা যাবে।

জেলা প্রশাসক আবদুল আউয়াল বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে কোনোভাবেই অপরিপক্ব আম সংগ্রহ কিংবা বাজারে তোলা যাবে না। তবে সময়ের আগে আবহাওয়ার কারণে আম পরিপক্ব হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমচাষিরা তারিখ পুনর্নির্ধারণ করে সময়ের আগে আম সংগ্রহ করতে পারবেন। আম পাকানো ও সংরক্ষণ বা বাজারজাতে কোনো রাসায়নিক মেশানো যাবে না। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার উপজেলা সদর বাজার, পোরশার নোচনাহার, সারাইগাছিসহ বিভিন্ন বাজারে বিশেষ নজরদারি রাখবে প্রশাসন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প হ র আম র হ ট আম ব চ ক ন অন য য় আম প ড় চ ষ হয় ৪৮ ক জ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর তীরে আজ বৃহস্পতিবারের বিকেলটা ছিল রং, ঢোলের তালে উল্লাস ও হাজারো মানুষের আনন্দমুখর উপস্থিতিতে ভরপুর। আকাশজুড়ে কালো মেঘ—এমন পরিবেশে সন্ধ্যা নদীর বুকজুড়ে ঢেউখেলানো পানিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল মাঝিদের ‘হা-দে-রে-ও’ কোরাস। অনেক দিন পর নদী ও গ্রামের মানুষ একসঙ্গে ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো ঐতিহ্য—নৌকাবাইচ।

বিকেল চারটার দিকে উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর কলেজের সামনে থেকে শুরু হয় ‘উজিরপুর নৌকাবাইচ ২০২৫’। প্রতিযোগিতা চলে সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এম এ জলিল সেতু পর্যন্ত। পুরো নদীপাড় তখন উৎসবে পরিণত হয়। দুই তীরে মানুষের ভিড়, ঢোলের আওয়াজ, উৎসাহ আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠে সন্ধ্যা নদীর একূল-ওকূল।

উজিরপুর উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ‘আভাস’-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দীন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের জনশিক্ষা বিভাগের পরিচালক আসমা ফেরদৌসি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলী সুজা। এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও ইউনেসকো।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের প্রতীক। নদী ও নৌকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উৎসব আমাদের ঐক্য, সহযোগিতা ও আনন্দের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখে। তাই আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা, লালন করা সবার কর্তব্য।’

এ বছর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ছয়টি ‘বাচারি’ নৌকা। প্রতিটি নৌকার নামকরণ করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের নামে—শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, কবি জীবনানন্দ দাশ, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, কবি সুফিয়া কামাল ও জুলাই শহীদ।

গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার অভিজ্ঞ নৌকাবাইচ প্রতিযোগী কালিপদ তালুকদার, লাজারেস ফলিয়া, কিরণ মৃধা, সঞ্জয় রায়, শংকর বাড়ৈ ও সৈকত রায় তাঁদের দল ও নৌকা নিয়ে অংশ নেন এই প্রতিযোগিতায়।

গোপালগঞ্জের প্রতিযোগী লাজারেস ফলিয়া বলেন, ‘এর আগে আমরা উজিরপুরের হারতায় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু সন্ধ্যা নদীতে এবারই প্রথম। এত মানুষের ভালোবাসা ও উৎসাহ আমাদের দলকে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’

নদীর তীরে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করছিলেন বৃদ্ধ সিরাজ মিয়া। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বসিত আট বছরের নাতি। সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের সময় নৌকাবাইচ ছিল গ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব। আজ নাতিকে নিয়ে এসেছি যেন সে দেখতে পারে আমাদের সেই ঐতিহ্য। আগে আমাদের এলাকায় বৈশাখে কিংবা কালীপূজার সময় প্রতিবছর নৌকাবাইচ হতো। সেই উৎসব ঘিরে মানুষের কত আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু এখন আর তেমনটা হয় না। অনেক দিন পর এই উৎসবে এসে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’

নৌকাবাইচের আয়োজক উন্নয়ন সংস্থা ‘আভাস’-এর প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম বলেন, এটি ইউনেসকো প্রস্তাবিত ঐতিহ্যবাহী উৎসব। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের আগ্রহে নৌকাবাইচটি এক উৎসবে রূপ নিয়েছে। সামনেও এমন উৎসবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে।

প্রতিযোগিতা শেষে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। বিজয়ী দল ছিল শেরেবাংলা ফজলুল হক দল (মাদারীপুরের লাজারেস ফলিয়া দল)। প্রথম রানার্সআপ সেক্টর কমান্ডার এম এ জলিল দল (কালিপদ তালুকদার দল) এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ জুলাই শহীদ দল (কিরণ মৃধা দল)।

স্থানীয় তরুণ মো. মাহফুজ বলেন, ‘এই আয়োজন শুধু বিনোদন নয়, বরং বরিশাল অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্য, লোকজ ক্রীড়া ও নদীসংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছে। আমরা চাই, প্রতিবছর এই আয়োজন অব্যাহত থাকুক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • ট্রাম্প কি রাজার শাসন চালাচ্ছেন
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক
  • বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করল রোবট নাও
  • ‘ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসবে’ আলোয় ভাসল গারো পাহাড়
  • গৌহাটি টেস্টে ‘লাঞ্চের আগে টি-ব্রেক’! জানুন কেন এই ব্যতিক্রম
  • টোকিওতে জমেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • সন্ধ্যা নদীর দুকূলে উৎসবের ঢেউ, উজিরপুরে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো মানুষ