‘প্লেনে, গাড়িতে কইরা আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না’
Published: 22nd, May 2025 GMT
প্রায় ২০ বছর আগে কাজের উদ্দেশে৵ স্বামীর সঙ্গে ভারতের গুজরাটে পাড়ি দিয়েছিলেন এক নারী (৫৫)। সেখানে তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। তিনি জানান, এক পর্যায়ে তাঁদের দুই ছেলেও বিয়ে করে স্ত্রীদের নিয়ে ভারতে যান। ছেলেরা সেখানে শাড়ির দোকানে কাজ নেন। পারিবারিক কলহে স্বামী অন্যত্র চলে গেছেন। সম্প্রতি স্ত্রী–সন্তানদের রেখে বাংলাদেশে আসেন বড় ছেলে। এরই মধ্যে ভারতে এক ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও চার নাতি–নাতনিসহ ওই নারী গুজরাট পুলিশের হাতে আটক হন।
এরপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গতকাল বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তাঁদের পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন)। সীমান্ত অতিক্রম করে এপাশে আসার পর ওই নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মোট ২১ জনকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। যদিও বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসএফ।
আটক ২১ জনকে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি। এ সময় ৫৫ বছর বয়সী ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পুলিশ (ভারতীয়) আমাদের ধইরা আট দিন চৌকিতে আটকে রাখছে। কালকে (বুধবার) প্লেনে (উড়োজাহাজ) কইরা আমাদের নিয়া বিকেল পাঁচটায় কোন জায়গায় নামায় দিছে বলতে পারি না। পরে আবার গাড়িতে করে রাত ১২টা সাড়ে ১২টার দিকে আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না। আমরা তো পথ চিনি না, পরে হাঁটতে হাঁটতে ভোরে যখন আজান দেয়, তখন এ পাশে আমাদের আটক করছে।’ ওই নারী আরও বলেন, ‘ওখানে (গুজরাট) সব তাড়িয়ে দিচ্ছে, বলছে ‘‘বাঙালি একটাও রাখবো না, তোমরা সব চলে যাও।’’’
আরও পড়ুন৬ জেলার সীমান্তে ১০৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ৩ ঘণ্টা আগেআটকদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী একজন তরুণ, তিন মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ জন শিশু-কিশোর এবং ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী ছয়জন নারী আছেন। তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলায় বলে পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৫৭ নম্বর মেইন পিলারে ১০ নম্বর সাবপিলার–সংলগ্ন সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ী এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বলে খবর পায় বিজিবি। পরে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে আটক করে। ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে (পুশ ইন করে) বলে জানা গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো.
পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিজিবি সীমান্তে আটক নারী–শিশুসহ ২১ জনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।
আরও পড়ুনবিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনকে কোস্টগার্ডে হস্তান্তর, কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনপুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫আরও পড়ুনঢাকার অনুরোধে সাড়া নেই, ২৪৬১ জনকে ফেরতে দিল্লির চিঠি১০ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর বয়স ২১ জনক ব এসএফ ওই ন র প শ ইন
এছাড়াও পড়ুন:
৪ জেলার সীমান্তে ৮৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
দেশের ৪ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ অন্তত ৮৫ জন জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার ও ফেনী জেলায় এসব ঘটনা ঘটে। পরে এই ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে বিজিবি।
বিজিবি জানিয়েছে, ঠেলে পাঠানো ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আর প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকাংশই আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন কাজ করছিলেন। তাঁদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
পঞ্চগড়পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আজ ভোরে নারী, শিশুসহ ২১ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন শিশু-কিশোর, ৬ জন নারী ও ১ জন তরুণ।
আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ বদরুদ্দোজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আটক ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি জানান, গতকাল বিকেলে ভারতের গুজরাট এলাকা থেকে ওই ২১ জনকে আটক করে দেশটির পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা ভারতে ছিলেন এবং প্রাপ্তবয়স্করা সেখানে বিভিন্ন কাজ করতেন। গতকাল প্রথমে তাঁদের উড়োজাহাজ ও পরে বাসে করে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিএসএফের সদস্যরা তাঁদের সীমান্তে নিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে পাঠান।
গতকাল রাতে পাটগ্রাম উপজেলার গাটিয়ারভিটা সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো হয় ২০ জনকে