প্রায় ২০ বছর আগে কাজের উদ্দেশে৵ স্বামীর সঙ্গে ভারতের গুজরাটে পাড়ি দিয়েছিলেন এক নারী (৫৫)। সেখানে তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। তিনি জানান, এক পর্যায়ে তাঁদের দুই ছেলেও বিয়ে করে স্ত্রীদের নিয়ে ভারতে যান। ছেলেরা সেখানে শাড়ির দোকানে কাজ নেন। পারিবারিক কলহে স্বামী অন্যত্র চলে গেছেন। সম্প্রতি স্ত্রী–সন্তানদের রেখে বাংলাদেশে আসেন বড় ছেলে। এরই মধ্যে ভারতে এক ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও চার নাতি–নাতনিসহ ওই নারী গুজরাট পুলিশের হাতে আটক হন।

এরপর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা গতকাল বুধবার দিবাগত গভীর রাতে তাঁদের পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়ধরভাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন)। সীমান্ত অতিক্রম করে এপাশে আসার পর ওই নারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মোট ২১ জনকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আটক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। যদিও বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসএফ।

আটক ২১ জনকে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি। এ সময় ৫৫ বছর বয়সী ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘পুলিশ (ভারতীয়) আমাদের ধইরা আট দিন চৌকিতে আটকে রাখছে। কালকে (বুধবার) প্লেনে (উড়োজাহাজ) কইরা আমাদের নিয়া বিকেল পাঁচটায় কোন জায়গায় নামায় দিছে বলতে পারি না। পরে আবার গাড়িতে করে রাত ১২টা সাড়ে ১২টার দিকে আইনা কোন বর্ডার পার করে দিছে জানি না। আমরা তো পথ চিনি না, পরে হাঁটতে হাঁটতে ভোরে যখন আজান দেয়, তখন এ পাশে আমাদের আটক করছে।’ ওই নারী আরও বলেন, ‘ওখানে (গুজরাট) সব তাড়িয়ে দিচ্ছে, বলছে ‘‘বাঙালি একটাও রাখবো না, তোমরা সব চলে যাও।’’’

আরও পড়ুন৬ জেলার সীমান্তে ১০৫ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ৩ ঘণ্টা আগে

আটকদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী একজন তরুণ, তিন মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ জন শিশু-কিশোর এবং ১৯ বছর থেকে ৫৫ বছর বয়সী ছয়জন নারী আছেন। তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা ও নড়াইল জেলায় বলে পুলিশ ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির আওতাধীন সীমান্তের ৭৫৭ নম্বর মেইন পিলারে ১০ নম্বর সাবপিলার–সংলগ্ন সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ী এলাকায় সীমান্ত পার হয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বলে খবর পায় বিজিবি। পরে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে নারী ও শিশুসহ ২১ জনকে আটক করে। ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যটালিয়নের টিয়াপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে (পুশ ইন করে) বলে জানা গেছে।

নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো.

বদরুদ্দোজা বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, সীমান্তে তাঁদের পুশ ইন করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জয়ধরভাঙ্গা সীমান্তে ভারতের ৯৩ বিএসএফ ব্যটালিয়নের টিয়াপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির প্রতিনিধিদের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিএসএফ পুশইনের বিষয়টি অস্বীকার করছে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে। আটকদের পঞ্চগড় সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া শিশুদের বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী বলেন, বিজিবি সীমান্তে আটক নারী–শিশুসহ ২১ জনকে থানায় হস্তান্তর করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।

আরও পড়ুনবিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনকে কোস্টগার্ডে হস্তান্তর, কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন১১ মে ২০২৫আরও পড়ুনপুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫আরও পড়ুনঢাকার অনুরোধে সাড়া নেই, ২৪৬১ জনকে ফেরতে দিল্লির চিঠি১০ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স ২১ জনক ব এসএফ ওই ন র প শ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক

জঙ্গি সন্দেহে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক। মুফতি আবদুল্লাহ আল মাসুদ নামে ওই বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গয়েশপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকা থেকে। এরপর তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে। 

ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে নিজের দেশে ফিরে যাননি মাসুদ। তিনি অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কাটাগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি তার বেশ কিছু কর্মকান্ডে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পরই মাসুদকে ইসলামী উগ্রপন্থী বলে দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। যেহেতু তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাই পুলিশ তাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। 

বিষয়টি সামনে আসার পরই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের পক্ষে কিছুই জানানো হয়নি। 

অন্যদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ভারত বাংলাদেশের দিনাজপুর সীমান্ত ও ভোমরা ঘোজাডাঙা সীমান্তে এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরো ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ও বিএসএফের যৌথ অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এক বাংলাদেশি নাগরিককে। আটককৃতে ওই ব্যক্তির নাম পঞ্চানন পাল। তিনি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গা থানার বাসিন্দা। ভারতে তিনি পরিচয় বদল করে রূপায়ণ পাল নামে বসবাস করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াও ভারতের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও এমনকি ভারতীয় পাসপোর্ট পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। 

একইদিনে ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে ঘোজাডাঙ্গা ভোমরা সীমান্তের কাছে সরুপনগর এলাকার তারালি সীমান্ত থেকে বিএসএফের ১৪৩নম্বর ব্যাটালিয়নের হাতে আটক হয়েছেন আরো বাংলাদেশি নাগরিক। 

সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে আটকের পর তাদের স্বরূপনগর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে তিন শিশু, তিনজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর সবাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরা এবং খুলনার বাগেরহাটের বাসিন্দা।

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেট সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে খুঁটি উপড়ে ফেলে বিএসএফ, স্থানীয়দের প্রতিবাদ
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে কর্মকর্তা নিয়োগ, বেতন ৫১,০০০ টাকা
  • জঙ্গি সন্দেহে কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক