বিশ বাও জল

দিগধাউরি বহুগামী ঢেউ
ভোল পাল্টে বেহুলার স্বয়ংবরে
রমণীস্মৃতিহীন ফণা তোলে!
পাশে, নন্দী ভৃঙ্গীর দল গান গায়
নাড়া বেঁধে সহলে সহলে।
আড়ালে স্বর্গ দেখানোর ছলে
নদী খুঁড়ছিল কেউ। তাই ভয়ে
ঘাসফড়িংয়ের লেজে
অক্ষরহীন বাল্যশিক্ষা ফেলে;
দুলিয়ে অকূলের ভেলা
রোদ্দুরে রোদ্দুরে ক্ষয়ে
আমি গোপনে গঙ্গার ধারে
তোমার কাছে পালিয়ে এসেছি।
যে পথে এলে পর আগে সন্ধ্যা হয়
ঝড় হয় জঙ্গলে, গাছ উল্টে যায়
পিছে শনির দৃষ্টি
সন্দেহ, হিংসা, মন–কষাকষি
অগস্ত্যযাত্রা, পাঞ্চাল রাজার দেশ।
গোপনে পালিয়ে আমি গঙ্গার ধারে
মুখ বুজে তোমার সংশয়ে বাস করি
আড়ালে
মনসার শাপ-শাপান্ত কলির সন্ধ্যায়
অক্ষরহীন করে বর্ণমালার বই,
লিখে লিখে আকুল দেখে নিতে হয়
বিশ বাও জল, তোমার জঙ্গলে!

জীবনী

মৃত্যু থেকে দূরে সবুজ উপত্যকার পাশে এক পরিত্যক্ত শহরে
অচেনা মানুষের জীবনী পড়ি;
এখানে বিধাতার সঙ্গে পরিচিত দীর্ঘজীবী পাহাড়
এখানে প্রতি রাত্রে পাল্টানো রাতের অন্ধকার
মধ্য দুপুরে যমদূত মল্লযুদ্ধ দেখে মানুষের
অনুভূতিহীন কদর্য সে আক্রমণ, বিস্মৃতিভরা নির্মম তার প্রত্যাখ্যান

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা ত্রিশ

আয়, এই পাশে উঠে আয়।
রেললাইনের পুবের গলিতে আমি গাধার পিঠে বসে আছি;
অল্প কাদায় ইট বিছানো
অন্যমনস্ক তিরতির বাতাস নিচে সূর্যের প্রতিফলন
ধোঁয়া উড়ছে বস্তি ঘরটার পেছনে রান্নাঘর
হাত ধরে সামলে উঠে আয়।
সকালে লাফিয়ে সিঁড়ি ভাঙার সময়
তিনতলায় বাঁ দিকের ফ্ল্যাটে
লুকানো একটা গান গলায় ঝুলে গেল অকস্মাৎ।
দূর ও অতীত থেকে ভেসে আসা বাদ্যের সঙ্গে—
মিলিয়ে গান গাইছি সারা দিন, এই বিকেল অব্দি
ভবঘুরে তোমার প্রেমিক,
সামনে অদৃশ্য স্মৃতি রাশি চোখ মেলে চেয়ে আছে
অভিজ্ঞতাহীন এক ভালোবাসার ছবি দেখার গল্প
শুনেছি মনে আছে

সুঘ্রাণ

পিতা তার সূত্র ধরে মাটিতে নামান
হারানো ঘুড়ি। অথবা পুত্রই এসেছে কাছে
বন্ধু যার দিয়েছে সন্ধান, অনির্দিষ্ট দুঃখে।
মুষ্টিতে নতুন আঙুল, ভিক্ষার চাল, কোমল রৌদ্র
পায়ে পায়ে ভিড়, স্বপ্ন থেকে দূরে
হারানো স্বপ্ন ঘুরপাক খায়—
না শোনা সংগীতে। বিস্মৃত মানুষের নাম
যেন সুঘ্রাণ, জীবন থেকে সৌভাগ্য উড়ে যায়!
বনস্পতি মন ফিরে ফিরে পায় তামাদি খামার
পুরানা সন্ধ্যায়, ক্ষেত্রদেবীর রূপে

নিঃসঙ্গ শিশুর প্রতি

এই নিদারুণ নাগরিক শোকে তুমি ছুঁয়ে থাকো পাখি মা।
চঞ্চু বাড়িয়ে দাও। চোখ মুছে দাও।
কণ্ঠে দাও চুমুর আনন্দভরা পিপাসার নিবারণ।
তুমি উড়ে, পাখা ঝাপটায়ে উড়ে—দ্রুত ফিরে আসো আমার কাছে;
আমার কান্না শোনো পাখি মা।
তোমার ভালোবাসা ছাড়া পরিচিত কিছু নেই।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় পার্টির সম্মেলন কাল, ইসির প্রতিনিধি চেয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে

আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির যে সম্মেলন হবে, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবহিত করে প্রতিনিধি পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জি এম কাদেরবিরোধী অংশের প্রধান নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি এবং কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

কাউন্সিল উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আজ শুক্রবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ কথা বলেন।

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আমরা জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিল করে আমরা গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে।’

গত ৩০ জুলাই জি এম কাদেরের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশ। এরপর তিনি শনিবার দলের সম্মেলন আহ্বান করেন।

এর উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামীকাল শনিবার জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের যে বিভেদ রয়েছে, সে বিভেদ শেষ করে দিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টির নবযাত্রা শুরু হবে। এই কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির কো–চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দেশের মানুষ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল, সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম এক অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য বা স্থবির থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়। এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০(২)(খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

মুজিবুল হক বলেন, এই ধারার ক্ষমতাবলে ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সভা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতি দ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি।

মুজিবুল হক আরও বলেন, উপরন্তু দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে এটি (কাউন্সিল) সময়োচিত ও আবশ্যক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে, এই দল কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশাহারা ভাব বিরাজ করছে, তখন জাতীয় পার্টি ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান, শফিকুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম, জিয়াউল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন, শফিকুল ইসলাম, জামাল রানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ