ভারতীয় বাংলা টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী মধুবনী গোস্বামী। ব্যক্তিগত জীবনে অভিনেতা রাজা গোস্বামীর সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। এ দম্পতির কেশব নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি ভ্লগিং করে থাকেন তারা। স্বাভাবিকভাবে, তাদের ভ্লগে দেখা যায় পুত্রকে।

এদিকে, নেটিজেনদের একাংশ মধুবনী-রাজাকে আক্রমণ করে মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ বলছেন, “ছেলে কেশবকে ভিডিওতে দেখিয়েই তো বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে আপনাদের।” আবার কেউ কেউ তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এবার একাডেমিক মার্কশিট প্রকাশ করে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন এই তারকা দম্পতি।   

শুক্রবার (২০ জুন) মধুবনী ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তার মাধ্যমিকের মার্কশিট। তার সঙ্গে দীর্ঘ একটি পোস্ট দিয়েছেন। লেখার শুরুতে এই অভিনেত্রী বলেন, “তোমাদের মধুবনীদির মার্কশিট রইল তোমাদের জন্য। জানি, এই নম্বরগুলো এমন কিছু নয়। এর থেকেও অনেক বেশি নম্বর অনেকেই হয়তো পেয়েছেন। এই মার্কশিট আমার, আমার মেধা অনুযায়ী এই নম্বরগুলো পেয়েছি। লাস্ট কয়েকদিন ধরে, আমাদের পোস্টে বেশ কিছু মানুষ আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন! রাজা বোধহয় ওর একটা পোস্টে লিখেছিল, ও ‘বি.

টেক ইঞ্জিনিয়ার’।” 

আরো পড়ুন:

স্লিভলেস ব্লাউজ, হলুদ শাড়ি, খোলা চুলে ভাইরাল মিথিলা

আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত বেহায়া-নির্লজ্জ: শবনম ফারিয়া

ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছেন না মধুবনী। তা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “মার্কশিট হয়তো না দেখালেও চলত। কিন্তু কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকতে নেই, চুপ করে থাকাটাকে কেউ কেউ আবার দুর্বলতা ভেবে নেয়। তাই মার্কশিট দেখিয়েই দিলাম। পড়াশোনাটা যখন করতাম, তখন মন দিয়েই করতাম। সিরিয়ালে অভিনয়টা যখন করেছি, তখনো মন দিয়েই করেছি, সেজন্যই টেলি সম্মান অ্যাওয়ার্ড, টেলি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি (ফাঁকা আওয়াজ মারছি না, ছবিগুলো নেক্সট পোস্টে আপলোড করে দেব)। যখন মা হলাম, তখন থেকে মা হওয়ার দায়িত্বটাও সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করে চলেছি।” 

সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্য করে মধুবনী বলেন, “নম্বরগুলো দেখে আশা করি, এটুকু বুঝতে পেরেছেন, অভিনয়টাই বা ভ্লগ করাটাই যে শুধু আমার দ্বারা হতো, এমনটা নয়! আমি চাইলে অন্য প্রফেশনে, অন্য অনেক কিছু করতে পারতাম বা এখনো পারি। কিন্তু করব না! কারণ আমার প্রয়োজন নেই। অভিনয়, ভ্লগিং করছি বলেই নিজেদের মতো করে অর্থ বের করে নেবেন না যে, আমরা মুর্খ, এই করেই খেতে হবে, অন্য আর কোনো উপায় নেই। সব উপায় আছে, করি না। কারণ আমরা ভালোবেসে এই প্রফেশনটাকে পছন্দ করেছি। অবশ্যই এই প্রফেশনও আমাদের পছন্দ করেছে। এ কথা খুব সত্য যে, ঈশ্বরের আশীর্বাদ না থাকলে আর্টিস্ট হওয়া বা এই ধরনের ক্রিয়েটিভ কাজ করা সত্যিই সম্ভব নয়।”

কলকাতার মহাদেবী বিড়লা গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন মধুবনী। যখন ফাইনাল পরীক্ষা দেন তখন পাল্লা দিয়ে ধারাবাহিকের কাজও করেছেন। এ পরিস্থিতিতে মধুবনী তার ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ অর্থাৎ ইংরেজিতে পান ১০০ এর মধ্যে ৮৯ পান। বাংলায় পান ৮৮, অঙ্কে ৮৪, বিজ্ঞান বিভাগে ৮৭, সামাজ বিজ্ঞানে ৮৭।

এত ভালো নম্বর পেয়েও অভিনেত্রীর মনজুড়ে ছিল আফসোস। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে মধুবনী বলেন, “আমি বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলাম। আসলে সে সময় শুটিং সামলে এই রেজাল্ট করি। যদিও নম্বর নিয়ে খুব তৃপ্ত ছিলাম না। ইংরেজিতে ৮৯ পাই, ভেবেছিলাম অন্তত ৯০ পাব। কিন্তু ওই কিনারায় গিয়ে আটকে যাই।”

এত বছর পর মার্কশিট শেয়ার করার কারণ ব্যাখ্যা করে মধুবনী বলেন, “অনেকেই ভাবেন অভিনেত্রী মানে তিনি পড়াশোনা করেন না। কিছুই জানেন না, সেই কারণেই শেয়ার করলাম।”

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক য গ যত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর একটি হলো—নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা।

কিন্তু দেশটির নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে কি ট্রাম্প এবার নিজের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছেন?

এই রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে তরুণ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক মামদানির মুখোমুখি লড়াই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করতে পারে।

মনে হচ্ছে, মামদানিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে ট্রাম্প বেশ আনন্দই পাচ্ছেন। তিনি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় এই মেয়রের নাম নিয়ে তিনি ঠাট্টা করছেন। এমনকি নিউইয়র্ক শহরের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকিও দিচ্ছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী২০ ঘণ্টা আগে

কিন্তু মামদানি দেখিয়েছেন, ট্রাম্পের মতো কৌশলেই তিনিও খেলতে জানেন।

রিয়েলিটি টিভি তারকা থেকে রাজনীতিক রূপে আবির্ভূত হওয়া ট্রাম্পকে অন্য কেউ ছাপিয়ে যান—এমনটা দেখা তাঁর জন্য সহজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী মামদানি সেটিই করে দেখালেন।

গত মঙ্গলবার রাতের বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার কয়েকটা শব্দ আছে—আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!’

মামদানির বক্তব্য শেষ হতেই তাঁর সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

পরদিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প সত্যিই মামদানির ভাষণ দেখেছিলেন তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়ে ভারতের মুসলিমরা খুশি হলেও বিজেপি-সমর্থকেরা চুপ কেন৩ ঘণ্টা আগে

‘আমাদের মধ্য দিয়েই যেতে হবে’

ট্রাম্প ও মামদানি এমন প্রতিদ্বন্দ্বী, যাঁরা অন্তত কিছুটা হলেও একে অপরের উপস্থিতি থেকে পরস্পর লাভবান হচ্ছেন।

বামপন্থী মামদানি তাঁর পুরো নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে একধরনের ভয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে তিনি সেসব বাড়িওয়ালার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যাঁরা নিউইয়র্কবাসীর পকেট কাটছেন।

মামদানি নিজেকে একটি প্রতিরোধশক্তির অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন, ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই মামদানির এই প্রতিরোধ।

বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে (ট্রাম্প) আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’

আরও পড়ুনমামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়২০ ঘণ্টা আগে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আক্রমণে চাপে থাকা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানি যেন প্রতি-আক্রমণের বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ এনে দিয়েছেন।

অন্যদিকে ডানপন্থীদের কাছে মামদানি এখন ট্রাম্পের জন্য একদম আদর্শ প্রতিপক্ষ, যাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা ইচ্ছেমতো আক্রমণ চালাতে পারেন।

নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটে পরাজয়ের পর রিপাবলিকানরা যখন ধাক্কা সামলাচ্ছিলেন, তখন বুধবার মায়ামিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকানদের এখন বেছে নিতে হবে—কমিউনিজম নাকি বাস্তববোধ।’

আরও পড়ুনমামদানি স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

‘সতর্কতার লালবাতি’

তবে এই লড়াই শুধু কথার নয়; ঝুঁকি অনেক বেশি।

ট্রাম্প একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় শহর নিউইয়র্ককেও লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো ফেডারেল নজরদারির আওতায় আনবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বললেন, ‘যদি সে (মামদানি) কমিউনিস্ট হয়, তাহলে তো শহরে তেমন কোনো কাজ হবে না। তাই নিউইয়র্কের জন্য যেসব সেতু, টানেল আর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা–ও প্রয়োজন হবে না।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি হয়তো আগুন নিয়ে খেলছেন। কারণ, মামদানির উত্থান ঘটেছে সেই জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটকে ঘিরে, যা এখন ভোটে রিপাবলিকানদের বিপদে ফেলছে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প০৬ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন পলিটিকোকে বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য সব জায়গায় সতর্কতার লালবাতি জ্বলছে। সবাই বুঝে নিক, তাঁদের সামনে এখন সত্যিকারের এক যোদ্ধা এসেছেন।’

তবে ট্রাম্প ও মামদানি দুজনই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত হয়তো কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, তিনি নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন বলে মামদানিকে ‘সফল হতে সাহায্য করতে চান’। আবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মামদানিকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি একটু শ্রদ্ধাশীল হও।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী০৫ নভেম্বর ২০২৫

আর মামদানিও জানেন, যদি ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করেন, তাহলে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, শিশুযত্ন কেন্দ্র বা সিটি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত মুদিদোকানের মতো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়ে যাবে।

গত বুধবার মামদানি বলেন, ‘আমি এখনো আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে, কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি।’

আরও পড়ুনবিজয়ভাষণে ট্রাম্পকে মামদানি বললেন, ‘আওয়াজ বাড়ান’০৫ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ