জীবনের চেনা ছক থেকে বেরিয়ে এসেছেন কারিনা
Published: 21st, June 2025 GMT
স্বামী বলিউড অভিনেতা সাইফ আলী খানের ওপর দুর্বৃত্তের হামলার পর কারিনা কাপুর বেরিয়ে এসেছেন চেনা জীবনের ছক থেকে। যার সঙ্গে পুরোনো কারিনাকে মেলানো কঠিন। এই বলিউড অভিনেত্রীর কথায়, সময়ের প্রয়োজনে নিজেকে বদলেছেন তিনি।
তারকাখ্যাতির কারণেই অভিনয় জগতের অন্যদের মতো করে পথচলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু যখন বুঝলেন, এই খ্যাতি ও জৌলুসময় জীবনের কোনো না কোনো সময় ইতি টানতে হয়, তখন থেকেই নতুনভাবে পথচলার কথা ভেবেছেন। ঘর-সংসার আর মাতৃত্বের কারণে আগের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে গেছে তাঁর।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আজকাল সূত্রে জানা গেছে, যেদিন সাইফ আলী খানের ওপর দুর্বৃত্তের হামলা হয়, সেদিনও নৈশপার্টিতে মত্ত ছিলেন কারিনা। প্রথমে এই খবর ছড়িয়েছিল সিনেমা অঙ্গনে। যদিও পরে তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, সেদিন সাইফ-কারিনা একসঙ্গেই বাড়িতে ছিলেন। তবুও স্বামীর ওপর হামলা হওয়ায় নিজের জীবনযাপনে পরিবর্তন এনেছেন কারিনা।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছেন, বর্তমানে আমি দেখি একের পর এক অভিনেতা সাফল্যের পেছনে দৌড়াচ্ছে। আমি মনে করি, সৌভাগ্যক্রমে আমি এ জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন আমার নির্দিষ্ট সময়সূচি রয়েছে। আমি সন্ধে ছ’টার সময় রাতের খাবার খেয়ে ফেলি এবং রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়ি। কারণ আমি খুব সকালে উঠে ব্যায়াম করি। খুব একটা পার্টিতেও যাই না। আমার বন্ধুরা এখন আমার কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করে না। তারা জানে আমি বাড়িতে খুব ভলিউম দিয়ে টিভি দেখছি। কিন্তু হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারণ কী?
কারিনা জানান, সুস্থ জীবনের জন্য এ পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। সাইফের ওপর হামলার পর থেকে বদল এসেছে পতৌদি পরিবারের জীবনযাত্রায়। দুই ছেলে তৈমুর ও জেহকে পাপারাজ্জিদের ক্যামেরা থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাইফ-কারিনা। বেড়েছে তাদের নিরাপত্তাও। অভিনেত্রীর এ কথা থেকে স্পষ্ট, পুরোনো খোলস থেকে তিনি চিরতরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে
সরকার সর্বশেষ জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে একটা সমঝোতা করে সরকারকে জানাতে, না হলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। এটা নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, এই দলগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রায় আট মাসে অনেকবার আলোচনায় বসলেও ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অর্থাৎ ওখানে সমঝোতাকারীও ছিল ঐকমত্য কমিশন। সেই আলোচনায় যখন অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেরা বসে ঐকমত্যে আসবে; যেটা আট মাসেও হয়নি, সেটা আট দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে? এটা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নয়।
ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে গণভোট হবে, সংবিধানের আদেশ জারি হবে—এ পরামর্শগুলো বাস্তবসম্মত নয়। আইনের ইতিহাসে এ রকম প্রস্তাব কখনো চোখে পড়েনি। গণভোট হয় আগের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা প্রতিষ্ঠান, যেমন সংসদ; সংসদ কোনো একটা প্রস্তাব পাস করল, সেটা যদি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন সেটার ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গণভোট হয়। সাধারণত আগে গণভোটের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়। তারপর সেটা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে হচ্ছে উল্টো। এটা আমার দৃষ্টিতে অবাস্তব।
এখানে গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত বড় দলিল পড়ে, বুঝে জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা বা সিদ্ধান্তে আসা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া এসব প্রস্তাবের মধ্যে কেউ ৭টি বিষয়ে একমত হলো, ২৪টি বিষয়ে একমত হলো না, তখন কী হবে? প্রথমত, এই ৪৮টি বিষয় পড়ে বোঝা একটা ব্যাপার। সেটা আমার মনে হয় না যে ১০ ভাগ লোক এটার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় সবাই কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবে, কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করবে।
সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো যদি পস করতে হয়, তাহলে বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা গণভোটের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া এবং ২৭০ দিনের মধ্যে পাস না করলে অটো পাস হয়ে যাবে, এটা আইনের ইতিহাসে নেই। সংসদ হলো সার্বভৌম। ত্রয়োদশ সংসদ যদি কোনো আইন পাস করে বলে পরবর্তী চতুর্দশ বা পঞ্চদশ সংসদ এই আইন বাতিল করতে পারবে না বা পরিবর্তন করতে পারবে না, এটা কখনো হয় না। কারণ, একটা সংসদ আরেকটা সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না। এটা আইনের মৌলিক ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখন ২৭০ দিনের মাথায় যদি এটা পাস বলে গণ্য ধরেই নেওয়া হয়, তাহলে ২৭০ দিন আলোচনার মূল্য কী? তাহলে এই আলোচনাও সম্পূর্ণ অর্থহীন, কোনো যৌক্তিকতা নেই।
‘আমাদের সংবিধান খারাপ, সংবিধানের কিছু মৌলিক সংস্কার করতে হবে’—এসব আলোচনা থেকে সংবিধান সংস্কারের ধারণাটি এসেছে। সংবিধান সংস্কার করলে ভবিষ্যতে কখনো স্বৈরাচারী সরকার আসবে না, গণতন্ত্র থাকবে, জবাবদিহি থাকবে, আইনের শাসন থাকবে—এই বিষয়গুলো যদি সংবিধানের ধারার ওপর নির্ভর করত, তাহলে দুনিয়ার সব দেশেই গণতন্ত্র থাকত, ন্যায়বিচার থাকত, স্বৈরশাসন থাকত না। অনেক দেশ আছে—যুক্তরাজ্য, কানাডা, ওদের সংবিধানই নেই, কিন্তু ওদের দেশে গণতন্ত্র আছে, স্বৈরাচার নেই।
অন্যদিকে আমাদের মতো বহু দেশে অনেক ভালো ভালো সংবিধান আছে। রাশিয়ার সংবিধানে অনেক ভালো কথা লেখা আছে। কিন্তু রাশিয়ায় কি কোনো গণতন্ত্র আছে?
অতএব, সংবিধান ভালো হলে দেশ ভালো হয়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দেশে গণতন্ত্র থাকবে, স্বৈরাচার থাকবে না, ন্যায়বিচার থাকবে—এগুলোর জন্য সংবিধানের গুরুত্ব কম। এটা রাজনৈতিক চর্চার বিষয়।
দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন থাকলে এবং বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয়, তাহলে গণভোটের পর সাংবিধানিক আদেশ জারি আদালতের মুখোমুখি হতে পারে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় হলো দ্রুত সংসদ নির্বাচন দেওয়া। একটা রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই বলবে, আমরা সংসদে গেলে এই সংবিধানে যেসব গলদ আছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করব। এটি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।