ইরান একের পর এক আঘাত সহ্য করছে। কিন্তু তার সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র রাশিয়া তেমন কিছুই করছে না।

অল্প কিছুদিন আগেও মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা দুনিয়ার সবচেয়ে অপছন্দের শক্তি ইরানকে সমর্থন করা রাশিয়ার জন্য লাভজনক ছিল। ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাতকেই তাঁর পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি বানিয়েছেন। সেই পটভূমিতে ইরান ও এর অংশীদারদের দিকে ঝুঁকে রাশিয়ার লাভ হয়েছিল।

তখন ইরান রাশিয়াকে শাহেদ ড্রোন সরবরাহ করেছিল। এই ড্রোন তখন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষমতার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। তারপর ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণ হলো। এর জবাবে ইসরায়েল গাজার ওপর নির্মম আক্রমণ শুরু করল। সেই সময় ফিলিস্তিনপন্থী ও পশ্চিমবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া বিশ্বজনমতকে নিজেদের দিকে টানতে পেরেছিল।

কিন্তু এই কৌশল খুব দ্রুতই রাশিয়ার জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াল। প্রথমে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করল। এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে ইরান সরাসরি ইসরায়েলকে আক্রমণ করল। কিন্তু ইরানের হামলায় খুব সামান্য ক্ষতি হলো।

এতে বোঝা গেল, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা তেমন শক্তিশালী নয়। ইসরায়েল পাল্টা হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল করে দিল। এমনকি ইরানের রাশিয়ানির্মিত এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। হঠাৎ করেই ইরানকে দুর্বল মনে হতে লাগল। তখন রাশিয়ার সামনে দুটি পথ ছিল। তারা চাইলেই ইরানকে শক্তি জোগাতে পারত। আর তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের জটিলতা থেকে নিজেদের দূরে থাকতে পারত।

রাশিয়া যে তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের পক্ষে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন সিরিয়ার বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। আসাদ ছিলেন রাশিয়ার দীর্ঘদিনের মিত্র। ইরান ও রাশিয়া তখনো ইলেকট্রনিক যুদ্ধ বা স্যাটেলাইট উন্নয়নের মতো কিছু ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করছিল। এমনকি তারা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিও করে। কিন্তু রাশিয়া ইরানকে দরকারি সাহায্য দেয়নি। যেমন উন্নত যুদ্ধবিমান বা শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। যেগুলো থাকলে ইরান ইসরায়েলের আক্রমণ ঠেকাতে পারত। অন্তত ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারত।

রাশিয়া ইরানের জন্য বীরের মতো ছুটে আসেনি। তবু এই দুই দেশ মিত্র। পশ্চিমবিরোধী এজেন্ডায় তারা ঐক্যবদ্ধ। রাশিয়ার কাছে ইরানকে দেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। রাশিয়া এখন খুবই সতর্ক। এ মুহূর্তে ইরানকে সামরিক সরঞ্জাম দিলে সেগুলো ইসরায়েল ধ্বংস করে দেবে। আর পুতিন হেরে যাওয়া দলের পক্ষে প্রকাশ্যে দাঁড়াতে পছন্দ করেন না।

আসলে রাশিয়া ইরানকে কতটা সমর্থন করবে, তা আগেই ঠিক করে রেখেছিল। পুতিনের পশ্চিমবিরোধী মনোভাব ইরানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র করেছে। কিন্তু পুতিনের আরও কিছু স্বার্থ আছে। যেমন ইসরায়েলের সঙ্গে পুরোনো এবং জটিল সম্পর্ক। আবার তেলের দামের ক্ষেত্রে ওপেকের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন। তাই ইরানকে সামরিক সহায়তা দিতে গিয়ে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কের সীমারেখা পেরিয়ে যেতে চায়নি রাশিয়া। তা ছাড়া রাশিয়া ইরানের জন্য নিজেকে সামরিক জটিলতায় ফেলতে রাজি নয়। বিশেষ করে যখন সে ইউক্রেন যুদ্ধেই পুরোপুরি ব্যস্ত।

রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে একসময় পরমাণু অস্ত্র বিস্তার ঠেকানোর কাজ করেছে। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে দিতে সে কখনো চায়নি। এই নিয়ে আমেরিকার হুঁশিয়ারিগুলো রাশিয়া গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা চায়নি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাক। রাশিয়া এটাও চায় না যে, ইরান পারমাণবিক শক্তি হয়ে গিয়ে এমন এক মর্যাদা পাক, যা মস্কোর প্রভাবকে কমিয়ে দেবে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়ার কিছু লাভও হতে পারে। এই লড়াই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করার প্রচেষ্টা নষ্ট করে দেবে। এতে আমেরিকাকে দুর্বল মনে হবে। ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার আমেরিকান ব্যর্থতা স্পষ্ট হবে। যদি ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের দাম চড়া থাকবে। এতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপ কিছুটা কমবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং দুনিয়ার দৃষ্টি ইউক্রেন থেকে সরে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। এতে ইরান রাশিয়াকে আর অস্ত্র পাঠাতে পারবে না। কিন্তু রাশিয়া এরই মধ্যে ইরানের নকশায় ড্রোন তৈরি করতে শিখে গেছে।

তবু ইরানকে অপমানিত হতে দেখে রাশিয়ার নেতারা খুশি হবেন না। ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ইরানের আকাশে মুক্তভাবে অভিযান চালানোর দাবি করছে। রাশিয়া হয়তো উদ্বিগ্ন যে ইরানে দীর্ঘ যুদ্ধ হলে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। যেমন আর্মেনিয়া, আজারবাইজান বা জর্জিয়ায়। এ অঞ্চলে রাশিয়ার স্বার্থ আছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া সেদিকে তেমন মনোযোগ দিতে পারছে না। রাশিয়া চায় না, অস্থিরতা গিয়ে ইরানে সরকার পতনের পথে ঠেলে দিক।

ইরান যদি কোণঠাসা হয়ে যায়, তাহলে হয়তো খেপে গিয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ছেড়ে চলে আসবে বা সরাসরি বোমা তৈরির দিকে ছুটবে। তখন মস্কোর তেহরানকে নিয়ন্ত্রণের সীমা স্পষ্ট হয়ে যাবে। রাশিয়া চায় না ইরান পরমাণু শক্তিধর দেশ হোক। তারা এটাও চায় না যে, আমেরিকা সামরিক হামলা চালিয়ে ইরানকে আরও দুর্বল করে দিক।

গত শনিবার পুতিন ট্রাম্পকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন। বাইডেন শপথ নেওয়ার পর থেকেই মস্কো ওয়াশিংটনের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আংশিকভাবে এটি ইউক্রেন যুদ্ধের যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত করার কৌশল। এখন এই ইরান ইস্যু রাশিয়ার জন্য বিরল একটি সুযোগ। এই ইস্যুতে বড় শক্তি হিসেবে কূটনীতিতে ফিরে আসতে চায় পুতিন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—রাশিয়া আসলে কী নিয়ে কূটনৈতিক খেলা খেলতে চায়?

রাশিয়া ইরানের জন্য বীরের মতো ছুটে আসেনি। তবু এই দুই দেশ মিত্র। পশ্চিমবিরোধী এজেন্ডায় তারা ঐক্যবদ্ধ। রাশিয়ার কাছে ইরানকে দেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। রাশিয়া এখন খুবই সতর্ক। এ মুহূর্তে ইরানকে সামরিক সরঞ্জাম দিলে সেগুলো ইসরায়েল ধ্বংস করে দেবে। আর পুতিন হেরে যাওয়া দলের পক্ষে প্রকাশ্যে দাঁড়াতে পছন্দ করেন না।

রাশিয়া ভবিষ্যতে হয়তো একটা বাস্তবসম্মত ভূমিকা রাখতে পারবে। যেমন তারা প্রস্তাব দিয়েছিল যে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিয়ে গিয়ে সিভিল চুল্লির জ্বালানিতে রূপান্তর করবে। কিন্তু রাশিয়ার এই প্রযুক্তিগত প্রস্তাব মূল রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে পারবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে কোনো রকম পারমাণবিক কার্যক্রম থাকতে দেবে না। আর সেটাকে ইরান আত্মসমর্পণ মনে করে।

কৌশলগতভাবে একঘরে এবং দুর্বল ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আগের চেয়ে আরও বেশি অবিশ্বাসী। তাই তারা অন্তত ভারসাম্যের ছলে হলেও রাশিয়াকে প্রক্রিয়ায় যুক্ত রাখতে চায়। কিন্তু যুদ্ধের ফলাফল, ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ বা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্তে রাশিয়ার প্রভাব খুবই সীমিত।

রাশিয়া তার সীমান্ত থেকে দূরের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। সেই শক্তিও তার বেশি আছে বলে মনে হয় না। ইউক্রেন যুদ্ধে সে এখন পুরোপুরি ব্যস্ত। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমবিরোধী মিত্র থাকলে রাশিয়ার লাভ। তাই বলে কেউ আশা করবেন না যে রাশিয়া ছুটে গিয়ে ইরানকে রক্ষা করবে।

হান্না নোট্টে জেমস মার্টিন সেন্টার ফর নন-প্রলিফারেশন স্টাডিজের একজন পরিচালক
দ্য আটলান্টিক থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ব যবস থ র জন য আম র ক দ র বল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর একটি হলো—নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা।

কিন্তু দেশটির নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে কি ট্রাম্প এবার নিজের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছেন?

এই রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে তরুণ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক মামদানির মুখোমুখি লড়াই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করতে পারে।

মনে হচ্ছে, মামদানিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে ট্রাম্প বেশ আনন্দই পাচ্ছেন। তিনি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় এই মেয়রের নাম নিয়ে তিনি ঠাট্টা করছেন। এমনকি নিউইয়র্ক শহরের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকিও দিচ্ছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী২০ ঘণ্টা আগে

কিন্তু মামদানি দেখিয়েছেন, ট্রাম্পের মতো কৌশলেই তিনিও খেলতে জানেন।

রিয়েলিটি টিভি তারকা থেকে রাজনীতিক রূপে আবির্ভূত হওয়া ট্রাম্পকে অন্য কেউ ছাপিয়ে যান—এমনটা দেখা তাঁর জন্য সহজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী মামদানি সেটিই করে দেখালেন।

গত মঙ্গলবার রাতের বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার কয়েকটা শব্দ আছে—আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!’

মামদানির বক্তব্য শেষ হতেই তাঁর সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

পরদিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প সত্যিই মামদানির ভাষণ দেখেছিলেন তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়ে ভারতের মুসলিমরা খুশি হলেও বিজেপি-সমর্থকেরা চুপ কেন৩ ঘণ্টা আগে

‘আমাদের মধ্য দিয়েই যেতে হবে’

ট্রাম্প ও মামদানি এমন প্রতিদ্বন্দ্বী, যাঁরা অন্তত কিছুটা হলেও একে অপরের উপস্থিতি থেকে পরস্পর লাভবান হচ্ছেন।

বামপন্থী মামদানি তাঁর পুরো নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে একধরনের ভয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে তিনি সেসব বাড়িওয়ালার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যাঁরা নিউইয়র্কবাসীর পকেট কাটছেন।

মামদানি নিজেকে একটি প্রতিরোধশক্তির অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন, ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই মামদানির এই প্রতিরোধ।

বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে (ট্রাম্প) আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’

আরও পড়ুনমামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়২০ ঘণ্টা আগে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আক্রমণে চাপে থাকা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানি যেন প্রতি-আক্রমণের বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ এনে দিয়েছেন।

অন্যদিকে ডানপন্থীদের কাছে মামদানি এখন ট্রাম্পের জন্য একদম আদর্শ প্রতিপক্ষ, যাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা ইচ্ছেমতো আক্রমণ চালাতে পারেন।

নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটে পরাজয়ের পর রিপাবলিকানরা যখন ধাক্কা সামলাচ্ছিলেন, তখন বুধবার মায়ামিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকানদের এখন বেছে নিতে হবে—কমিউনিজম নাকি বাস্তববোধ।’

আরও পড়ুনমামদানি স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

‘সতর্কতার লালবাতি’

তবে এই লড়াই শুধু কথার নয়; ঝুঁকি অনেক বেশি।

ট্রাম্প একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় শহর নিউইয়র্ককেও লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো ফেডারেল নজরদারির আওতায় আনবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বললেন, ‘যদি সে (মামদানি) কমিউনিস্ট হয়, তাহলে তো শহরে তেমন কোনো কাজ হবে না। তাই নিউইয়র্কের জন্য যেসব সেতু, টানেল আর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা–ও প্রয়োজন হবে না।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি হয়তো আগুন নিয়ে খেলছেন। কারণ, মামদানির উত্থান ঘটেছে সেই জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটকে ঘিরে, যা এখন ভোটে রিপাবলিকানদের বিপদে ফেলছে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প০৬ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন পলিটিকোকে বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য সব জায়গায় সতর্কতার লালবাতি জ্বলছে। সবাই বুঝে নিক, তাঁদের সামনে এখন সত্যিকারের এক যোদ্ধা এসেছেন।’

তবে ট্রাম্প ও মামদানি দুজনই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত হয়তো কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, তিনি নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন বলে মামদানিকে ‘সফল হতে সাহায্য করতে চান’। আবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মামদানিকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি একটু শ্রদ্ধাশীল হও।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী০৫ নভেম্বর ২০২৫

আর মামদানিও জানেন, যদি ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করেন, তাহলে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, শিশুযত্ন কেন্দ্র বা সিটি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত মুদিদোকানের মতো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়ে যাবে।

গত বুধবার মামদানি বলেন, ‘আমি এখনো আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে, কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি।’

আরও পড়ুনবিজয়ভাষণে ট্রাম্পকে মামদানি বললেন, ‘আওয়াজ বাড়ান’০৫ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ