এনবিআরের পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘তাৎক্ষণিক’ বদলি
Published: 23rd, June 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের-এনবিআর পাঁচ উপ-কর কমিশনারকে ‘তাৎক্ষণিক’ বদলি করা হয়েছে। এদের সবাইকে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়।
বদলি করা পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে দুজন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের, একজন এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের এবং বাকি দুজন ঢাকা ও কুমিল্লার কর অঞ্চলের। এনবিআর সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই এসব কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, উপ-কর কমিশনার শাহ্ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীকে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট থেকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) উপপরিচালক পদের সংযুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
উপকর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলামকে ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ থেকে খুলনা কর অঞ্চলে এবং মো.
এছাড়া আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট থেকে উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে এবং কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার নুশরাত জাহান শমীকে রংপুর কর অঞ্চলে বদলি করা হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, বদলি করা এসব কর্মকর্তাদের আজ সোমবারের মধ্যে তাদের বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে এবং আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে বদলি করা অফিসে যোগদান করতে হবে। অন্যথায়, সোমবার অপরাহ্ন (দুপুর) থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনরত এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এই বদলি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, এটি সুপরিকল্পিত কুটপরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ, যা চলমান রাজস্ব সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পক্ষের শক্তি-কে দুর্বল করার কুপ্রচেষ্টা।
এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ দুই দাবিতে আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। আজ ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে এনবিআরের সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত ১২ মে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের মুখে অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। এরপর কাজে যোগ দিলেও আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি অব্যাহত রাখেন এবং এনবিআরে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান স্বাভাবিক কাজে ফিরলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এখনও তার দূরত্ব রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর বদল কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে
সরকার সর্বশেষ জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে একটা সমঝোতা করে সরকারকে জানাতে, না হলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। এটা নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, এই দলগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রায় আট মাসে অনেকবার আলোচনায় বসলেও ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অর্থাৎ ওখানে সমঝোতাকারীও ছিল ঐকমত্য কমিশন। সেই আলোচনায় যখন অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেরা বসে ঐকমত্যে আসবে; যেটা আট মাসেও হয়নি, সেটা আট দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে? এটা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নয়।
ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে গণভোট হবে, সংবিধানের আদেশ জারি হবে—এ পরামর্শগুলো বাস্তবসম্মত নয়। আইনের ইতিহাসে এ রকম প্রস্তাব কখনো চোখে পড়েনি। গণভোট হয় আগের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা প্রতিষ্ঠান, যেমন সংসদ; সংসদ কোনো একটা প্রস্তাব পাস করল, সেটা যদি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন সেটার ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গণভোট হয়। সাধারণত আগে গণভোটের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়। তারপর সেটা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে হচ্ছে উল্টো। এটা আমার দৃষ্টিতে অবাস্তব।
এখানে গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত বড় দলিল পড়ে, বুঝে জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা বা সিদ্ধান্তে আসা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া এসব প্রস্তাবের মধ্যে কেউ ৭টি বিষয়ে একমত হলো, ২৪টি বিষয়ে একমত হলো না, তখন কী হবে? প্রথমত, এই ৪৮টি বিষয় পড়ে বোঝা একটা ব্যাপার। সেটা আমার মনে হয় না যে ১০ ভাগ লোক এটার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় সবাই কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবে, কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করবে।
সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো যদি পস করতে হয়, তাহলে বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা গণভোটের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া এবং ২৭০ দিনের মধ্যে পাস না করলে অটো পাস হয়ে যাবে, এটা আইনের ইতিহাসে নেই। সংসদ হলো সার্বভৌম। ত্রয়োদশ সংসদ যদি কোনো আইন পাস করে বলে পরবর্তী চতুর্দশ বা পঞ্চদশ সংসদ এই আইন বাতিল করতে পারবে না বা পরিবর্তন করতে পারবে না, এটা কখনো হয় না। কারণ, একটা সংসদ আরেকটা সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না। এটা আইনের মৌলিক ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখন ২৭০ দিনের মাথায় যদি এটা পাস বলে গণ্য ধরেই নেওয়া হয়, তাহলে ২৭০ দিন আলোচনার মূল্য কী? তাহলে এই আলোচনাও সম্পূর্ণ অর্থহীন, কোনো যৌক্তিকতা নেই।
‘আমাদের সংবিধান খারাপ, সংবিধানের কিছু মৌলিক সংস্কার করতে হবে’—এসব আলোচনা থেকে সংবিধান সংস্কারের ধারণাটি এসেছে। সংবিধান সংস্কার করলে ভবিষ্যতে কখনো স্বৈরাচারী সরকার আসবে না, গণতন্ত্র থাকবে, জবাবদিহি থাকবে, আইনের শাসন থাকবে—এই বিষয়গুলো যদি সংবিধানের ধারার ওপর নির্ভর করত, তাহলে দুনিয়ার সব দেশেই গণতন্ত্র থাকত, ন্যায়বিচার থাকত, স্বৈরশাসন থাকত না। অনেক দেশ আছে—যুক্তরাজ্য, কানাডা, ওদের সংবিধানই নেই, কিন্তু ওদের দেশে গণতন্ত্র আছে, স্বৈরাচার নেই।
অন্যদিকে আমাদের মতো বহু দেশে অনেক ভালো ভালো সংবিধান আছে। রাশিয়ার সংবিধানে অনেক ভালো কথা লেখা আছে। কিন্তু রাশিয়ায় কি কোনো গণতন্ত্র আছে?
অতএব, সংবিধান ভালো হলে দেশ ভালো হয়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দেশে গণতন্ত্র থাকবে, স্বৈরাচার থাকবে না, ন্যায়বিচার থাকবে—এগুলোর জন্য সংবিধানের গুরুত্ব কম। এটা রাজনৈতিক চর্চার বিষয়।
দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন থাকলে এবং বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয়, তাহলে গণভোটের পর সাংবিধানিক আদেশ জারি আদালতের মুখোমুখি হতে পারে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় হলো দ্রুত সংসদ নির্বাচন দেওয়া। একটা রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই বলবে, আমরা সংসদে গেলে এই সংবিধানে যেসব গলদ আছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করব। এটি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।