কেন বাড়ে কোলেস্টেরল, নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন
Published: 23rd, June 2025 GMT
কোলেস্টেরল বা ক্ষতিকর চর্বি হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও সুশৃঙ্খল জীবনধারার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। উচ্চ কোলেস্টেরল ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত। এর ফলে সৃষ্ট হৃদ্রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।
কোলেস্টেরল রক্তে উপস্থিত চর্বিজাতীয় পদার্থ। যদিও এটি কোষ তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ক্ষতিকর। উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলেও সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু এটি ধমনিতে নীরবে জমা হতে থাকে ও প্লাক তৈরি করে রক্তনালির পথগুলোকে সংকুচিত করে এবং রক্তপ্রবাহকে সীমাবদ্ধ করে। হার্টে রক্ত সরবরাহকারী করোনারি আর্টারিগুলোতে প্লাক জমে রক্তপ্রবাহ কমে গেলে হৃদ্রোগ দেখা দেয়।
ধমনিতে প্লাক জমা হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ সীমিত হয়। এর ফলে বুকে ব্যথা (অ্যানজাইনা) হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, যদি জমাট বাঁধা রক্তপ্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়, তবে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
আরও পড়ুনকোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ কি সারা জীবন খেতে হবে১৯ অক্টোবর ২০২২কেন বাড়ে কোলেস্টেরল, কী করবেনবেশ কিছু কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। যেমন জিনগত বা বংশগত কারণ, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমহীন অলস জীবনযাপন, ধূমপান ও অতিরিক্ত ওজন।
তবে উচ্চ কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করা যায়। এর চিকিৎসা রয়েছে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা—যেমন সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম, তামাক এড়ানো ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। ভাজাপোড়া, ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল-ঘি-মাখন এড়াতে হবে। খেতে হবে প্রচুর তাজা শাকসবজি।
আরও পড়ুনকোলেস্টেরল কমানোর কার্যকর ঘরোয়া উপায়১৯ মার্চ ২০১৭নিয়মিত রক্তে লিপিড প্যানেল বা প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত। একজন সুস্থ ব্যক্তি ও একজন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির লিপিডের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানজাইনা বা পূর্বে ঘটা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে লিপিডের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা আরও কম হবে। তাই লিপিড প্রোফাইলের ফলাফল পর্যালোচনা এবং কার্যকরভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা.
মুহাম্মাদ সিদ্দিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব হ
এছাড়াও পড়ুন:
মোদির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ধারণা ছিল ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের বিশাল বাজারকে কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বড় ধরনের ছাড় দিতে তারা প্রস্তুত ছিলেন না। এর পরিণতিতে ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের খড়গ নেমে এসেছে। বুধবার রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তাদের পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনার হয়েছিল। সর্বশেষ আলোচনার পরে ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি অনুকূল চুক্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তারা গণমাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- শুল্ক ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করা যেতে পারে। ভারতীয় কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, ট্রাম্প ১ আগস্টের সময়সীমার কয়েক সপ্তাহ আগে নিজেই চুক্তিটি ঘোষণা করবেন। কিন্তু ঘোষণাটি কখনো আসেনি।
শেষ পর্যন্ত ৩০ জুলাই ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার অপরাধে তিনি ভারতের ওপর আরো শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন। বুধবার তিনি ভারতের ওপর আরো ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে ভারতের ওপর আরোপিত মোট মার্কিন শুল্কের পরিমাণ হলো ৫০ শতাংশ।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ভুল বিচার, ভুলবার্তা এবং তিক্ততার মিশ্রণ বিশ্বের বৃহত্তম ও পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চুক্তিটি ভেঙে দিয়েছে, যাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটন সফর করেছিলেন। ওই সময় মোদি ও ট্রাম্প ২০২৫ সালের শরৎকালের মধ্যে একটি চুক্তি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে সম্মত হন। ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের জন্য ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জ্বালানি কেনার এবং প্রতিরক্ষা আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করেছেন, ট্রাম্প একটি ‘বড়’ আসন্ন চুক্তির কথা বলার পর ভারত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। তারা এটিকে একটি সংকেত হিসেবে নিয়েছিল যে, একটি অনুকূল চুক্তি হাতে আসছে। এরপর নয়াদিল্লি তার অবস্থান কঠোর করে, বিশেষ করে কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের উপর।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আলোচনায় জড়িত একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছিলেন, “আমরা দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৪০ কোটি মানুষের বাজারকে উপেক্ষা করতে পারে না।”
হোয়াইট হাউসের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য ছিল।
আলোচনার সাথে পরিচিত ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি সূত্র বলেছেন, “ট্রাম্প বৃহত্তর বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বিনিয়োগ ও বৃহৎ ক্রয়ের মাধ্যমে একটি শিরোনাম-আকর্ষণীয় ঘোষণা চেয়েছিলেন।”
একজন ভারতীয় কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, নয়াদিল্লি অন্যদের প্রস্তাবের সাথে মেলে না।
উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পের ১ আগস্টের সময়সীমার ঠিক আগে একটি চুক্তি করে। তারা ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, জ্বালানি আমদানি এবং চাল ও গরুর মাংসের উপর ছাড় দিয়ে ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হার নিশ্চিত করে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ও লবিস্ট মার্ক লিনস্কট বলেন, “এক পর্যায়ে উভয় পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি ছিল। অনুপস্থিত উপাদানটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের লাইন।”
আলোচনায় জড়িত একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোদি ফোন করতে পারতেন না, কারণ ট্রাম্পের সাথে একতরফা কথোপকথন অন্য পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেছেন।
তবে, অন্য তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে মধ্যস্থতা করার বিষয়ে ট্রাম্পের বারবার মন্তব্য আলোচনাকে আরো চাপে ফেলেছে। এটি মোদিকে শেষ পর্যায়ে ফোন না করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
এই কর্মকর্তাদের এক জন বলেছেন, “পাকিস্তান সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। আদর্শভাবে, ভারতের উচিত ছিল মার্কিন ভূমিকা স্বীকার করা এবং চূড়ান্ত কলটি আমাদেরই ছিল তা স্পষ্ট করে দেওয়া।”
ভারতীয় সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দুর্বল বিচারবুদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন, “ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং ইইউর সাথে আমেরিকার আরো ভালো চুক্তি হওয়ার পর আমাদের প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তার অভাব ছিল। আমরা এখন এমন একটি সংকটের মধ্যে আছি যা এড়ানো যেত।”
ঢাকা/শাহেদ