বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা। ফলে এই ঠান্ডা পানিতে ভেজা অবস্থায় লম্বা সময় থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে যে কারও। তবে তার মানে কিন্তু এই নয় যে সুস্থ থাকতে শিশুকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেওয়াই যাবে না। বৃষ্টিতে মাঠে কিংবা নিদেনপক্ষে বাড়ির সামনের একরত্তি জায়গায় একটু দৌড়ঝাঁপ না করলে আর শৈশবের আনন্দটা থাকল কোথায়! শিশুদের বৃষ্টিতে ভেজার ব্যাপারে তেমন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেন না চিকিৎসকেরাও, যদি না সে ঠান্ডায় অতিসংবেদনশীল হয় বা তার নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা থাকে।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট, শিশুবিশেষজ্ঞ ডা.
তাসনুভা খান বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজলেই যেকোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমন ধারণা ভুল। কোনো শিশু বৃষ্টিতে ভিজলে তার সুস্থতার জন্য সাধারণ কিছু বিষয় খেয়াল রাখাই যথেষ্ট। তবে কারও যদি ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজলে তার হাঁচি–কাশি বা সর্দি হতে পারে। আর ঠান্ডা পানিতে ভিজলে হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই হাঁপানি আক্রান্ত শিশুর পারতপক্ষে বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।’
শিশুকে বেশিক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকতে দেবেন না। বৃষ্টিতে ভেজার পর দ্রুত শিশুর মাথা ও শরীর মুছে দিতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ ভেজা অবস্থায় থেকে গেলে যে কারও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ভেজা ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণও হতে পারে। খেয়াল রাখুন, আঙুলের ফাঁকে বা ত্বকের কোনো ভাঁজেও যেন পানি রয়ে না যায়। তবে বৃষ্টির পানিতে ভেজার সময় কাদামাটি লেগে শরীর ময়লা হলে প্রথমে সাবান দিয়ে ত্বক পরিষ্কার বা গোসল করার প্রয়োজন হয়। এই পরিচ্ছন্নতার কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। অবশ্য এতে খুব বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। প্রয়োজন না হলে গোসল করাবেন না।
আরও পড়ুনমা-বাবা এই ৭ কাজ করলে বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যায় শিশু০২ জুন ২০২৫এরপর যা কিছুশিশুকে শুকনা ও পরিষ্কার কাপড় পরিয়ে দিন। এমন কাপড় পরানো উচিত, যাতে শিশুর শরীর উষ্ণ থাকে। যেমন একটু পুরু সুতি কাপড়ের ফুলহাতা জামা ও পায়জামা পরিয়ে দিতে পারেন। প্রয়োজনে দুই স্তরে পোশাক পরাতে পারেন। আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা থাকলে পাতলা ফ্লানেল কাপড়ের পোশাকও পরাতে পারেন। বৃষ্টিতে ভেজার পরপরই শিশুকে ঠান্ডা হাওয়ায় থাকতে দেবেন না। প্রয়োজনে ঘরের জানালা আটকে রাখুন কিছুক্ষণ। শিশুর শরীর উষ্ণ করে তুলতে তাকে কুসুম গরম পানি কিংবা পানীয় দিতে পারেন।
আনন্দে বাধা নয়বৃষ্টিতে ভিজে অকৃত্রিম আনন্দের সুযোগ করে দিন শিশুকেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার মিলবে দু-এক দিনের মধ্যে
বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদনে করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ অনুমোদন করা হয়। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ পাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ হলো আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। ১৩০ কোটি পাওয়া গেলে ১০৯ কোটি ডলার বাকি থাকবে। তবে এ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে প্রায় ৭৬ কোটি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে, বিশেষত টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এর পর ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।
সবশেষ গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।