মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ছয় জন টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (২৩ জুন) বিকেলে উপজেলার বালুচর বাজারের চৌরাস্তায় মোল্লাকান্দি ও খাসমহল গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বালুচর বাজারে মোল্লাকান্দি গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে শাহীন ব্যাপারী তার মালিকানাধীন একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা গ্যারেজে ছয় মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখেন। আজ বেলা ১টার দিকে সিরাজদিখান পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মকর্তা বকেয়া বিলের তাগাদা দিতে যান। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে খাসমহল গ্রামের আনোয়ার সরদারের ছেলে সুলতান সরদারও ওই গ্যারেজে যান। সে সময় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে শাহীন ব্যাপারীর বাকবিতণ্ডা হয়। সুলতান সরদার বিদ্যুৎ কর্মকর্তার পক্ষ নিয়ে শাহীন ব্যাপারীর সঙ্গে ঝগড়ায় জড়ান। এ নিয়ে সুলতান সরদারকে মারধর করেন শাহীন। সুলতান বিষয়টি তার গ্রামের (খাসমহল) লোকজনকে জানান। ওই গ্রামের লোকজন টেঁটা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মোল্লাকান্দি গ্রামে আসেন। মোল্লাকান্দির লোকজনও বিষয়টি জানতে পেরে টেঁটা, লাঠি, ইটপাটকেল নিয়ে জড়ো হন। সে সময় দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ছয় জন টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

সিরাজদিখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাহেদ আল মামুন বলেন, ‘‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/রতন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত অফ স র স ঘর ষ সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে

সরকার সর্বশেষ জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে একটা সমঝোতা করে সরকারকে জানাতে, না হলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। এটা নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, এই দলগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রায় আট মাসে অনেকবার আলোচনায় বসলেও ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অর্থাৎ ওখানে সমঝোতাকারীও ছিল ঐকমত্য কমিশন। সেই আলোচনায় যখন অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেরা বসে ঐকমত্যে আসবে; যেটা আট মাসেও হয়নি, সেটা আট দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে? এটা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নয়।

ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে গণভোট হবে, সংবিধানের আদেশ জারি হবে—এ পরামর্শগুলো বাস্তবসম্মত নয়। আইনের ইতিহাসে এ রকম প্রস্তাব কখনো চোখে পড়েনি। গণভোট হয় আগের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা প্রতিষ্ঠান, যেমন সংসদ; সংসদ কোনো একটা প্রস্তাব পাস করল, সেটা যদি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন সেটার ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গণভোট হয়। সাধারণত আগে গণভোটের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়। তারপর সেটা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে হচ্ছে উল্টো। এটা আমার দৃষ্টিতে অবাস্তব।

এখানে গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত বড় দলিল পড়ে, বুঝে জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা বা সিদ্ধান্তে আসা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া এসব প্রস্তাবের মধ্যে কেউ ৭টি বিষয়ে একমত হলো, ২৪টি বিষয়ে একমত হলো না, তখন কী হবে? প্রথমত, এই ৪৮টি বিষয় পড়ে বোঝা একটা ব্যাপার। সেটা আমার মনে হয় না যে ১০ ভাগ লোক এটার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় সবাই কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবে, কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করবে।

সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো যদি পস করতে হয়, তাহলে বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা গণভোটের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া এবং ২৭০ দিনের মধ্যে পাস না করলে অটো পাস হয়ে যাবে, এটা আইনের ইতিহাসে নেই। সংসদ হলো সার্বভৌম। ত্রয়োদশ সংসদ যদি কোনো আইন পাস করে বলে পরবর্তী চতুর্দশ বা পঞ্চদশ সংসদ এই আইন বাতিল করতে পারবে না বা পরিবর্তন করতে পারবে না, এটা কখনো হয় না। কারণ, একটা সংসদ আরেকটা সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না। এটা আইনের মৌলিক ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখন ২৭০ দিনের মাথায় যদি এটা পাস বলে গণ্য ধরেই নেওয়া হয়, তাহলে ২৭০ দিন আলোচনার মূল্য কী? তাহলে এই আলোচনাও সম্পূর্ণ অর্থহীন, কোনো যৌক্তিকতা নেই।

‘আমাদের সংবিধান খারাপ, সংবিধানের কিছু মৌলিক সংস্কার করতে হবে’—এসব আলোচনা থেকে সংবিধান সংস্কারের ধারণাটি এসেছে। সংবিধান সংস্কার করলে ভবিষ্যতে কখনো স্বৈরাচারী সরকার আসবে না, গণতন্ত্র থাকবে, জবাবদিহি থাকবে, আইনের শাসন থাকবে—এই বিষয়গুলো যদি সংবিধানের ধারার ওপর নির্ভর করত, তাহলে দুনিয়ার সব দেশেই গণতন্ত্র থাকত, ন্যায়বিচার থাকত, স্বৈরশাসন থাকত না। অনেক দেশ আছে—যুক্তরাজ্য, কানাডা, ওদের সংবিধানই নেই, কিন্তু ওদের দেশে গণতন্ত্র আছে, স্বৈরাচার নেই।

অন্যদিকে আমাদের মতো বহু দেশে অনেক ভালো ভালো সংবিধান আছে। রাশিয়ার সংবিধানে অনেক ভালো কথা লেখা আছে। কিন্তু রাশিয়ায় কি কোনো গণতন্ত্র আছে?
অতএব, সংবিধান ভালো হলে দেশ ভালো হয়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দেশে গণতন্ত্র থাকবে, স্বৈরাচার থাকবে না, ন্যায়বিচার থাকবে—এগুলোর জন্য সংবিধানের গুরুত্ব কম। এটা রাজনৈতিক চর্চার বিষয়।

দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন থাকলে এবং বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয়, তাহলে গণভোটের পর সাংবিধানিক আদেশ জারি আদালতের মুখোমুখি হতে পারে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় হলো দ্রুত সংসদ নির্বাচন দেওয়া। একটা রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই বলবে, আমরা সংসদে গেলে এই সংবিধানে যেসব গলদ আছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করব। এটি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ