আদালতে জেরার মুখে সাবেক সিইসি নূরুল হুদা বললেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে’
Published: 23rd, June 2025 GMT
প্রায় এক ঘণ্টা কাঠগড়ায় বিমর্ষ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মুস্তাফিজুর রহমান কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নূরুল হুদার কাছে জানতে চান, তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না?
জবাবে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কোনো শপথ ভঙ্গ করিনি। একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় পাঁচজনকে দিয়ে। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকেন, বাকি চারজন থাকেন নির্বাচন কমিশনার। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে ১৭ লাখ কর্মকর্তা–কর্মচারী কাজ করেন। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো গ্রামের ভোটসংক্রান্ত সব তথ্য ঢাকায় বসে জানা সম্ভব নয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করার কোনো সুযোগ থাকে না।’
এ পর্যায়ে সিএমএম সাবেক সিইসি নূরুল হুদার উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ফেয়ার নির্বাচন করা? তখন নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত থাকে। নির্বাচন আয়োজনের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের আর কিছুই করার থাকে না। বিষয়টি উচ্চ আদালতের ওপর ন্যস্ত থাকে।’
এ পর্যায়ে সিএমএম নূরুল হুদার উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের শিডিউল (তফসিল) ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কী? জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনের পর গেজেট হলে নির্বাচন কমিশনের আর কোনো ক্ষমতা থাকে না।’
এ পর্যায়ে সিএমএম সাবেক এই সিইসির কাছে নির্বাচনের আগে তৎকালীন আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) ভূমিকা জানতে চান। জবাবে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সাবেক আইজিপি আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি মনিটরিং করেছিলেন। যে কারণে ওই নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।’
একপর্যায়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। সেই বিতর্কের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়।’
নূরুল হুদার বক্তব্যের পর তাঁর আরেক আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি পটুয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ভীষণ অসুস্থ। তাঁর ডায়াবেটিস রয়েছে।’
নূরুল হুদাসহ আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে বিএনপি। দুপুরে ওই মামলা হওয়ার পর সন্ধ্যায় একদল লোক ‘মব’ তৈরি করে নূরুল হুদার উত্তরার বাসা থেকে তাঁকে ধরে এনে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর পুলিশে সোপর্দ করে। আজ পুলিশ ওই মামলায় নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতের কাঠগড়ায় নূরুল হুদার এক ঘণ্টা
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নূরুল হুদার দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে সিএমএম আদালতকক্ষে তোলা হয়। তখন সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিট। কাঠগড়ায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন নূরুল হুদা।
তখন একজন পুলিশ কনস্টেবল তাঁর মাথা থেকে হেলমেটটি খুলে ফেলেন। পরে চশমা পরেন নূরুল হুদা। একজন আইনজীবী জানতে চেয়েছিলেন তিনি কেমন আছেন? জবাবে নূরুল হুদা ঘাড় ডান দিকে ঘুরিয়ে ইঙ্গিত দিলেন, ভালো। এরপর কাঠগড়ায় মুখ ভার করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
নূরুল হুদাকে কাঠগড়ায় তোলার পাঁচ মিনিট পর ঢাকার সিএমএম মোস্তাফিজুর রহমান এজলাসে আসেন। নূরুল হুদার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রেপ্তার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লব। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাবিনা আক্তারকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর দিনের ভোট রাতে করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন খানের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে করা একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স এমএম ম নন য পর য য জ র কর ক ঠগড
এছাড়াও পড়ুন:
সংকেত না মানায় চলন্ত মোটরসাইকেলে পুলিশের ধাক্কা, এরপর যা ঘটল
সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে থামাতে গিয়েছিলেন সড়কে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এতে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে থাকা অন্য এক পুলিশ সদস্যকে গিয়ে ধাক্কা দিলে তিনি ধীরগতির একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে থেঁতলে যায় ওই পুলিশ সদস্যের ডান পা। পরে হাসপাতালে তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়।
গতকাল রোববার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা অংশের চুনতির হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা এ ঘটনার ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকিতে কক্সবাজার থেকে লোহাগাড়ার দিকে আসা দুটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। সামনের মোটরসাইকেলটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পেছনের মোটরসাইকেলটি মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রথমে থামে। পরে সুযোগ বুঝে হঠাৎ দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য পেছন থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেন। এতে দুই আরোহীসহ মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরেক পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দিলে তাঁর ডান পা চট্টগ্রামগামী ধীরগতির একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে।
লোহাগাড়া থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আহত পুলিশ সদস্যের নাম আলা উদ্দিন (৩৩)। তিনি লোহাগাড়া থানার দায়িত্বরত কনস্টেবল। তাঁর বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ওই পুলিশ সদস্যের ডান পা থেঁতলে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।
মোটরসাইকেল থামাতে দৌড়ে যান পুলিশ সদস্য। গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম কক্সকাজার মহাড়কের লোহাগাড়ার চুনতী এলাকায়