চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ আরেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে
Published: 23rd, June 2025 GMT
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তরিকুল ইসলাম রনি নামে একজন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার মো. তরিকুল ইসলাম রনি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসাবে কর্মরত। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ইকরামুল হক হিটলু। তিনি একই হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জন হিসাবে কর্মরত।
ঘটনার পর পরই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ সকল চিকিৎসকের উপস্থিতিতে জরুরি সভা হয়। সেখানে অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। তা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো.
ড্যাবের জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. আহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, ‘আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা রুজু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা না হলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে।’
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল হক সমকালকে বলেন, ‘একজন চিকিৎসক হয়ে আরেক চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে মারধর করার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
অভিযুক্ত চিকিৎসক ইকরামুল হক হিটলুকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’ পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
জামালপুর থানার ওসি ফয়সাল আতিক বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম রধর চ ক ৎসক র ম রধর র
এছাড়াও পড়ুন:
কামাল ও তাঁর তিন সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, প্রতিদিন ‘যুদ্ধ করেও’ কূল খুঁজে পান না
ছয়জনের পরিবারে চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর মধ্যে পরিবারের প্রধান মো. কামাল হোসেন মাঝি নিজেও একজন। জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষটির জীবনের শুরু হয়েছিল বড় একটি স্বপ্ন নিয়ে—ধর্মীয় বক্তা হবেন, মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করবেন, হামদ-নাথ গাইবেন, মানুষকে আলো দেখাবেন। মুখস্থ করেছিলেন ১৫ পারা কোরআন। কিছুদিন মাদ্রাসায়ও পড়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। অভাব আর দারিদ্র্য তাঁকে নামিয়ে এনেছে এমন এক বাস্তবতায়, যেখানে এখন তাঁর একমাত্র চাওয়া—দুবেলা খেতে পারা আর মাথার ওপর ছাউনি।
ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামে থাকেন কামাল। জনতাবাজার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে তাঁর ঘর। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তা পেরিয়ে কোনো রিকশা যায় না, হাঁটতে হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর আধা মণ বীজধানের বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কামাল পড়ে যান। পথচারীরা তুলে দিয়ে আবার বস্তা কাঁধে তুলে দেন। হয়তো এর বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এত কষ্টের কাজ করেও পরিবারে তেমন কিছু যোগ হয় না।
কামালের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী মোসাম্মৎ তানজিলা বেগম (৩৯) ও ছোট মেয়ে উম্মে হাবিবা (৭) ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর বড় মেয়ে কামরুন নাহার (২৫), ছেলে আবুল বাশার (১৩), মেজ মেয়ে শশী আক্তার (১০)—তিনজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এ ছাড়া দুই মেয়ের স্বামীও প্রতিবন্ধী। বড় জামাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, মেজ জামাই শারীরিকভাবে অক্ষম। কারও তেমন উপার্জন নেই।
কামালের জন্ম উত্তর রাজাপুরের রামদাসপুর গ্রামে। বাবা চাষাবাদ করতেন। মেঘনার বারবার ভাঙনে সব হারিয়ে দক্ষিণ রাজাপুরে এসে সরকারি পতিত জমিতে ঘর তোলে পরিবার। কামাল ছোটবেলায় ওস্তাদের মুখে শুনে কোরআন মুখস্থ করেন। কিছুদিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়লেও অর্থাভাবে পড়া থেমে যায়। সেই সময়েই বক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। কিন্তু পরিবারের অভাব তাঁকে স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
বিয়ের পর থেকে কামালের স্ত্রী তানজিলা ছোট ছোট কাজ করেন, শাকপাতা বিক্রি করে, হাঁস-মুরগি পুষে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। একসময় চারটি গরুর মালিকও হন। কিন্তু ২০২৪ সালে এক রাতে চারটি গরুই চুরি হয়ে যায়। এ খবর প্রকাশ হয় প্রথম আলোতেও। তানজিলা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন, গরুগুলো পাননি। মানুষের সহায়তায় একটি বাছুর কেনেন, আর মৎস্য বিভাগ আরও একটি দেয়। এখন সেগুলো বড় হচ্ছে। গরু দুটি এখন তাদের সম্বল।
কামাল বলেন, ‘এই বছর বিষ্টির শেষ নাই। আসমান দিয়াও পরে, বাড়িতদারের ইলশা নদীর জোয়ার ওডে ডোয়াদ্দারে। গরবিডি ডুবি যায়। বিষ্টিরসুম্ গরে-বাইরে একাকার। গরেও পানি, বাইরেও পানি। এই অবস্থা দেইকখা জনতাবাজারের জামাল ডাকতোর ৫১ হাজার টিয়ার (টাকা) টিন দিছে বাকিত্। কইছে টিয়া ছিরি ছিরি (অল্প অল্প) নিবো। কিন্তুক এহোন টিয়ারলাই চাপ দেয়।’
এমন করেই জীবন পার করছে কামাল মাঝির পরিবার। কামালের চাওয়া দিনে দুবেলা খেতে পাওয়া, একটু নিরাপদে থাকা। ছোট যে তিনটি ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের স্বাবলম্বী করা। কিন্তু কোনো কূল খুঁজে পাচ্ছে না। স্ত্রী তানজিলা বলেন, ‘পুতেরে (পুত্র) একজন এট্টা ছাগল ছদকা (দান) দিছিল। হেইডা বেইচ্চা চালে টিন লাগাইছি। এহোনো ব্যারা ভাঙা।’
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, খোঁজ নিয়ে তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. কামাল হোসেন মাঝির পরিবারকে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন।