জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তরিকুল ইসলাম রনি নামে একজন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। 

মারধরের শিকার মো. তরিকুল ইসলাম রনি জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসাবে কর্মরত। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম ইকরামুল হক হিটলু। তিনি একই হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জন হিসাবে কর্মরত। 

ঘটনার পর পরই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ সকল চিকিৎসকের উপস্থিতিতে জরুরি সভা হয়। সেখানে অভিযুক্ত চিকিৎসককে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। তা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো.

তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, সম্প্রতি হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের আগেই ডেন্টাল সার্জন ইকরামুল হক হিটলু টাকার বিনিময়ে কয়েকজনকে নিয়োগ দিতে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষুব্ধ হন ডা. হিটলু। গত রোববার দুপুরে তিনি কতিপয় লোকজন নিয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহানের গাড়ির গতিরোধ করেন এবং তাকে হুমকি দেন। আজ দুপুরে ডা. হিটলু ও তার স্ত্রী ডা. শারমিন আমার কক্ষে ঢুকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে মারধর করেন তারা। খবর পেয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। তখন পালিয়ে যান অভিযুক্ত চিকিৎসক হিটলু। 

ড্যাবের জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. আহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, ‘আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা রুজু হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা না হলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকবে। তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেবা চালু থাকবে।’ 

জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল হক সমকালকে বলেন, ‘একজন চিকিৎসক হয়ে আরেক চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে মারধর করার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ 

অভিযুক্ত চিকিৎসক ইকরামুল হক হিটলুকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’ পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জামালপুর থানার ওসি ফয়সাল আতিক বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রধর চ ক ৎসক র ম রধর র

এছাড়াও পড়ুন:

বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...

বাংলাদেশের শহুরে জীবন যেমন নানা সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনি সমস্যারও অন্ত নেই। ঝকঝকে ভবন, আধুনিক অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবকিছুই মানুষকে শহরমুখী করছে। কিন্তু এই আকর্ষণের আড়ালে সবচেয়ে বড় সংকট হলো ভাড়া বাড়ির ক্রমবর্ধমান চাপ। ঢাকার মতো মহানগরে, যেখানে কাজ, শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ সবচেয়ে বেশি, সেখানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে এ সমস্যা গভীরভাবে প্রভাবিত করছে।

প্রতিবছর ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু আয়ের হার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। একজন চাকরিজীবীর বেতনের অর্ধেক বা তার বেশিই চলে যায় ভাড়ার পেছনে। এরপর বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা ও সন্তানের পড়াশোনা সামলাতে গিয়ে পরিবারগুলোকে কঠিন চাপে পড়তে হয়। কেউ খরচ কমিয়ে চালায়, কেউ ঋণ নেয়। এ কারণে মানসিক অশান্তি বাড়ে, পারিবারিক দ্বন্দ্বও তৈরি হয়।

শহরে নতুন আসা শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী বাসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভালো এলাকায় থাকতে হলে মোটা অগ্রিম টাকা গুনতে হয়। অনেকে কয়েকজন মিলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়, খরচ ভাগ করে। কিন্তু ঘন ঘন বাসাবদল, নতুন এলাকায় মানিয়ে নেওয়া কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক—সবই একেকটা চাপ।

এ কারণে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের ক্রমে শহরের প্রান্তিক বা অস্বাস্থ্যকর এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকায় স্কুল-কলেজ দূরে, পরিবেশ খারাপ, নিরাপত্তা অনিশ্চিত। এতে শিশুদের পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বড়রা মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। জীবনযাত্রার মান পুরোপুরি নেমে যায়।

বাস্তব অভিজ্ঞতা
রাকিব নামের এক তরুণ চাকরিজীবী ঢাকায় একটি কক্ষে থাকেন। বেতনের অর্ধেক চলে যায় ভাড়ায়। বাকি টাকা দিয়ে বাজার, বিদ্যুৎ-গ্যাস, চিকিৎসা সব সামলাতে গিয়ে প্রতিদিন নতুন চাপে পড়েন। মানসিক চাপ এত বেড়ে যায় যে ঘুম কম হয়, কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

শিরিন, একজন কলেজছাত্রী। পড়াশোনার জন্য শহরে এসে এক বন্ধুর সঙ্গে ফ্ল্যাট শেয়ার করেন। ভাড়া ও খরচ সামলাতে গিয়ে প্রায়ই তাঁকে খাবার বা বইয়ের খরচ বাদ দিতে হয়। এতে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে।

তিন সন্তানের জনক মাহমুদ পরিবার নিয়ে শহরের কেন্দ্রে ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন। নিয়মিত ভাড়া বাড়ানোর কারণে স্কুল, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন ব্যয় সামলানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারে স্থিতি নেই, চাপ কেবল বাড়ছেই।

সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
ভাড়া সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও মানসিক দিক থেকেও ভয়াবহ। পরিবারগুলো ঘন ঘন বাসাবদলের চিন্তায় থাকে। শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়, বড়রা কাজে মনোযোগ হারান। ভিড় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে ছোট জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকে, যা স্বাধীনতা কমায় এবং পারিবারিক টানাপোড়েন বাড়ায়।

সমাধান কী হতে পারে
সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প: সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে কম খরচের নিরাপদ ফ্ল্যাট বা সরকারি আবাসন বাড়াতে হবে।

আইনগত সুরক্ষা: ভাড়াটিয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াতে না পারেন।

মানুষকেন্দ্রিক পরিকল্পনা: নতুন ফ্ল্যাট তৈরি যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান আবাসনব্যবস্থায়ও নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা জরুরি।

ভাড়াটিয়া সমিতি: ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষায় স্থানীয় কমিটি বা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

শেষ কথা
শহুরে জীবনের এই ভাড়া সংকট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। এখনই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিগত পদক্ষেপ। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করা গেলে শহরের মানুষ আবার শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। শিশুরা ভালো শিক্ষা পাবে, পরিবারে স্থিরতা আসবে, মানসিক চাপ কমবে। শহর হবে আরও সুন্দর, মানবিক ও সবার জন্য বাসযোগ্য।

আরশী আক্তার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া অক্সিজেন মাস্ক খুলেছেন ক্লিনার, অভিযোগ মৃতের স্বজনদের
  • ছাত্র হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী এখন যুবদল নেতা!
  • দুর্দান্ত প্রকৌশলী, প্রাণবন্ত মানুষ
  • ‘আপনাদের কার্যক্রম তো সন্ত্রাসীদের মতো’ সাংবাদিকদের বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভিডিও ভাইরাল
  • ‎ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বেরোবির ৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • ব্যাংকিং খাতে আস্থা বাড়াতে নিজের কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগের গল্প বললেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...