ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত গত বছরই নেন নেতানিয়াহু, গোপন বৈঠকে হয় হত্যার তালিকা
Published: 24th, June 2025 GMT
গত বছরের শরৎ। ডোনাল্ড ট্রাম্প তখনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেননি। আর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েও তখন কূটনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নেননি তিনি।
অথচ তখনই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। ইসরায়েলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা আরও জানান, গত বছরের অক্টোবরে ইসরায়েল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে। ইরানের প্রধান মিত্র লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে। পরে নেতানিয়াহু সামগ্রিকভাবে ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর হবে ১ ঘণ্টা আগেইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গোপন বৈঠক করেন। তাঁরা ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী ও সামরিক নেতাদের একটি তালিকা তৈরি করতে থাকেন, যাঁদের ভবিষ্যতে হত্যার লক্ষ্যে নিশানা করা হতে পারে।
একই সময়ে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী নিয়মিতভাবে লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করতে থাকে। উদ্দেশ্য—ভবিষ্যতে ইরানবিরোধী হামলার জন্য আকাশপথ পরিষ্কার করা।
এদিকে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুদ্ধের প্রস্তুতির আরেকটি কৌশলগত দিক নিয়ে কাজ করছিলেন। আর তা হলো ওয়াশিংটনের সমর্থন অর্জন করা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু করে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে সামরিক অভিযান চালানো হলে তা এককভাবে ইসরায়েলের অভিযান থেকে অনেক বেশি কার্যকর হবে।
শেষ পর্যন্ত গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত করেন। তাঁর নির্দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায়হামলা চালায়।
আরও পড়ুনইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেয়নি, ট্রাম্প আবারও মিথ্যা বলছেন: তেহরান টাইমস৪৭ মিনিট আগেগত শরৎকালজুড়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জো বাইডেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। আলোচনার বিষয় ছিল উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর গ্রীষ্মকালে সংগৃহীত তথ্য। এ তথ্যে দেখা যায়, ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীরা আবার অস্ত্রীকরণের তাত্ত্বিক গবেষণা শুরুর জন্য একত্র হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন তিনজন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকেরা মনে করেননি, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ মূল্যায়ন বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের শাসনামলের বসন্তকালজুড়ে একাধিকবার পর্যালোচনা করা হয়।
ইরানে ইসরায়েলের হামলা চালানোর সময় পর্যন্ত এ অবস্থানেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সংশ্লিষ্ট পাঁচটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে ব্যক্তিগত আলোচনায় ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, গত মার্চ মাসেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র অংশগ্রহণ করুক বা না-ই করুক, সর্বোচ্চ জুন মাসের মধ্যে ইরানে হামলা চালানো হবে। আর এ সিদ্ধান্ত হয় নেতানিয়াহুর গত ৭ এপ্রিল ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই।
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ইরান তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন করে ফেলত। একটি সূত্র এমনটা জানিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত যখন নেতানিয়াহু ১৩ জুন ভোরে ইরানে আকস্মিক হামলা চালান। আর সে সময় ট্রাম্পের কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল।
আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে সংঘাত শেষ করতে চায় ইসরায়েল, তবে তা নির্ভর করছে তেহরানের ওপর৮ ঘণ্টা আগেহামলার সিদ্ধান্তটি নতুন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়নি। বরং ইসরায়েল একে একটি ‘অন্যতম সুযোগ’ হিসেবে দেখে আগেই তৈরি করে রাখা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় হিসেবে বেছে নেয়।
পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে ইরানের অগ্রগতির যথেষ্ট প্রমাণ নেতানিয়াহুর কাছে ছিল কি না, এ প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে এ হামলার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের ভেতরে টানাপোড়েন তৈরি করেছে বলে মনে হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার গত মার্চ মাসে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের দেওয়া মূল্যায়নটি উড়িয়ে দিয়েছেন। তুলসী গ্যাবার্ডের মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির নির্দেশ দেয়নি।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
আরও পড়ুনএবার মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলা ৭ ঘণ্টা আগেনেতানিয়াহু বহু বছর ধরে বলে আসছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। আর সামরিক হামলার মাধ্যমেই ইরানতে থামাতে হবে।
তবে সাম্প্রতিক কিছু সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যায় থেকে ইরান এখনো কয়েক মাস কিংবা এক বছর দূরে রয়েছে।
তবে যে বিষয়টি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, তা হলো ইরান বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা বেসামরিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয় মাত্রার অনেক গুণ বেশি। একই সঙ্গে ইরান বিপজ্জনক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের জন্য সুযোগ ও প্রয়োজন—এই দুই বিবেচনার একটি সমন্বয়।
আরও পড়ুনইরানের সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প কী বোঝাতে চাইছেন, রিপাবলিকানরা কী বলছেন১৫ ঘণ্টা আগেওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, সত্যি কথা বলতে, হামলার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর ছিল না। ইসরায়েলি বাহিনী কখনো এতটা প্রস্তুত ছিল না। আর ইরান ও তার মিত্রশক্তিগুলোও কখনো এতটা দুর্বল ছিল না। কিন্তু শুধু এ কারণেই তাঁরা অভিযান চালায়নি। তাঁরা অভিযান চালিয়েছেন প্রয়োজনীয়তার তাগিদে। আর এই উপলব্ধি থেকে যে আর কোনো বিকল্প ইসরায়েলের নেই। যদি ইরান হঠাৎ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে এগিয়ে যায়, আর তাঁরা তা টের না পান? কোনো নিরাপত্তাবলয় আর ইসরায়েলের জন্য অবশিষ্ট ছিল না।
ইসরায়েলের সরকারপন্থী টিভি চ্যানেল-১৪-এর এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানে হামলার নির্দিষ্ট সময় তিনি দুই সপ্তাহ আগে ঠিক করেন। তবে এ অভিযান চালানোর ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ তিনি কয়েক মাস আগেই নিয়ে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুনতেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়নি, তাহলে ইরানের ইউরেনিয়াম গেল কোথায়১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র কর মকর ত র ইসর য় ল র ল র জন য বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এ বছরই কি আসছে ভাঁজযোগ্য আইফোন, চূড়ান্ত প্রস্তুতি কত দূর
অ্যাপলের বহুল প্রতীক্ষিত ভাঁজযোগ্য বা ফোল্ডেবল আইফোন বাজারে আসতে আর বেশি দেরি নেই। যন্ত্রটির ডিসপ্লে–সংক্রান্ত চূড়ান্ত স্পেসিফিকেশন এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৫ সালের শেষভাগেই শুরু হতে পারে এর উৎপাদন।
অ্যাপলবিষয়ক বিশ্লেষক মিন চি কুও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় জানিয়েছেন, অ্যাপলের দীর্ঘদিনের উৎপাদন সহযোগী ফক্সকন ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ দিকে বা চতুর্থ প্রান্তিকের শুরুতে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করতে পারে। সময় হিসেবে তা আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যবর্তী। এর আগে চলতি বছরের মার্চে কুও প্রথম জানান, ফোল্ডেবল আইফোনের বাজারে আসার সম্ভাব্য সময় ২০২৬ সাল। তখন তিনি বলেন, যন্ত্রটি আইফোন ১৮ সিরিজের সঙ্গেই উন্মোচিত হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদেও তিনি পূর্বাভাসটি দিয়েছেন। তবে এটিও স্পষ্ট করেছেন, এখনো সব পরিকল্পনা পরিবর্তনশীল। ফোল্ডেবল আইফোন নিয়ে এ পর্যায়ে যে অগ্রগতি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তা হলো, এর ডিসপ্লের স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। কুওর তথ্য অনুযায়ী, এই ডিসপ্লে তৈরি করবে স্যামসাং ডিসপ্লে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৬ সালের জন্য বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ ইউনিট ফোল্ডেবল প্যানেল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেবল ডিসপ্লেই নয়, ফোল্ডেবল আইফোনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের অনেক কিছুই এখনো নির্ধারিত হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত উপাদান হচ্ছে হিঞ্জ, যা ফোনটিকে ভাঁজ করার মূল প্রযুক্তিগত অংশ। প্রযুক্তিবাজারে এই যন্ত্রাংশ নিয়ে আগ্রহ অনেকদিন ধরেই রয়েছে। ফোল্ডেবল আইফোন নিয়ে গুঞ্জন নতুন নয়। এক দশকের বেশি সময় ধরে অ্যাপলের এমন একটি যন্ত্র তৈরির খবর প্রযুক্তি মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এবার সত্যিই হতে চলেছে।
মার্চ মাসে প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ম্যাশেবলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও ফোল্ডেবল আইফোনের সম্ভাব্য স্পেসিফিকেশন ও নকশা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। কুওর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অ্যাপল ইতিমধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি ইউনিট ফোল্ডেবল আইফোনের প্রাথমিক অর্ডার দিয়েছে। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, ২০২৭ ও ২০২৮ সালে অ্যাপল প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন ইউনিট করে বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। তবে দাম যে সাশ্রয়ী হবে না, সেটাও আগেভাগেই জানিয়েছেন তিনি। ফোল্ডেবল আইফোনের সম্ভাব্য মূল্য নিয়ে কুও বলেন, এটি হবে ‘টাওয়ারিং’ বা অত্যধিক উচ্চমূল্যের একটি পণ্য।
সূত্র: ম্যাশেবল