জবির আবাসিক হল ও ২ বিভাগের নাম পরিবর্তন
Published: 24th, June 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রী আবাসিক হল ও দুইটি বিভাগের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, গত ২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম সভায় (সিদ্ধান্ত নম্বর–১২) হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হলটির পূর্বের নাম ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হয়েছে ‘নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হল’।
আরো পড়ুন:
খাতা জমা দিতে দেরি করায় ১৬ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, হাসপাতালে ২
শাবিপ্রবি ছাত্রী ধর্ষণ: অভিযুক্ত ২ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাতের আঁধারে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এরই রেশ ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ লেখা নেমপ্লেটটি খুলে ফেলেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকেই হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জোর আলোচনা চলছিল।
নতুন নামকরণে যুক্ত হওয়া নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছিলেন ব্রিটিশ ভারতে প্রথম নারী নওয়াব এবং নারী শিক্ষা ও সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী একজন কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব। অনেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক মনে করছেন, এই নামকরণ ইতিহাসচর্চা ও নারী নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাকে নতুনভাবে মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড.
একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত-১৩(২) অনুযায়ী ‘ভাস্কর্য’ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘ত্রিমাত্রিক শিল্প ও নকশা’ করা হয়।
এছাড়া ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন’ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘আইন ও ভূমি প্রশাসন’ করার প্রক্রিয়াটি আসে শিক্ষার্থীদের আবেদন, স্মারকলিপি এবং বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি ও আইন অনুষদের নির্বাহী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত-১৮ অনুযায়ী পরিবর্তনটি চূড়ান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে, এই পরিবর্তন বিভাগ দুইটির ভবিষ্যৎ পাঠক্রম, গবেষণা এবং পেশাগত প্রয়োগের ক্ষেত্রগুলো আরো স্পষ্ট ও সময়োপযোগীভাবে উপস্থাপন করতে সহায়ক হবে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এক ড ম ক ক
এছাড়াও পড়ুন:
বিরল গাছ কৃষ্ণবট
সারা পৃথিবীতে বটের কত যে ভাইবোন আছে, কে জানে! এ দেশেই আছে অন্তত ১৫ রকমের বট। এগুলোর একটি কৃষ্ণবট। এ গাছের অন্য নাম কৃষ্ণডুমুর। বট একান্তই বাংলার গাছ, সে অর্থে কৃষ্ণবটও এ অঞ্চলের গাছ।
বট ও কৃষ্ণবট—দুটিই মোরেসি গোত্রের গাছ, ডুমুরও এ গোত্রের। বটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus benghalensis এবং কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। তৎকালীন বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, কলকাতার পরিচালক ডেভিড প্রেইন ১৮৯৬ সালে হাওড়ার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের কাছে থাকা একজনের ব্যক্তিগত বাগানে এই প্রজাতির দেখা পান। সেই গাছের দুটি ডাল কেটে এনে তিনি বাগানে পুঁতে দেন, যা থেকে দুটি গাছের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ওই দুটি গাছ থেকে আবার ডাল কেটে কেটে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ও ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনে দুটি কৃষ্ণবটগাছ লাগানো হয়। গাছ দুটি বেশ বড়, তবে অন্য বটের মতো বিশাল নয়। কৃষ্ণবটের ঝুরি অন্য বটের মতো নামে না, পাতাগুলোও অন্য রকম, উচ্চতাও কম। কৃষ্ণবটের পাতা যেন ঝালমুড়ি খাওয়ার ঠোঙা, বোঁটার কাছে দুই পাশ থেকে পত্রফলক কেউ যেন টেনে আঠা দিয়ে জুড়ে পকেট তৈরি করে দিয়েছে। এই অদ্ভুত আকৃতিই কৃষ্ণবটকে অন্যান্য বটগাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
পাতার এই ঠোঙার মতো গড়ন অনেক লোককাহিনির জন্ম দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় কাহিনির একটি হলো, শ্রীকৃষ্ণ মাখন খেতে খুব পছন্দ করতেন। তাই তিনি প্রায়ই শিকেয় তুলে রাখা মাখনের ভাণ্ড থেকে মাখন চুরি করে খেতেন। একবার যখন মা যশোদা তাঁকে মাখন চুরি করার সময় ধরে ফেললেন, তখন তিনি এই বটের পাতাকে ঠোঙার মতো করে তার মধ্যে মাখন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তখন থেকেই এ গাছের পাতার এরূপ গড়ন। এ কাহিনি কৃষ্ণবটের নামকরণের পেছনেও ভূমিকা রাখতে পারে। এ থেকে হিন্দিতে এ গাছের নাম রাখা হয়েছে ‘মাখন কোটরি’। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এ গাছ আছে।
ঢাকা শহরে আর কোথাও কৃষ্ণবটগাছ চোখে পড়েনি। তবে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত আগারগাঁওয়ে বৃক্ষমেলায় কয়েকটি নার্সারিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা বেশ কিছু কৃষ্ণবটের চারা বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাতে মনে হয়, এখন দেশের আরও অনেক জায়গায় এ গাছ ছড়িয়ে পড়েছে।
বলধা গার্ডেনের কৃষ্ণবটগাছের নামফলকে লেখা আছে, ‘পাতা মুড়ির ঠোঙার মতো ফোল্ডিং হয়ে থাকে। টুনটুনি পাখি অনায়াসে এই পাতায় বাসা করতে পারে। ধারণা করা হয়, বটের এই পাতায় কৃষ্ণ মাখন চুরি করে খেত বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে কৃষ্ণবট।’
বলধা গার্ডেনের নামফলকে কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম লেখা রয়েছে Ficus benghalensis var. krishnae; অর্থাৎ কৃষ্ণবটকে বটের একটি জাত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কলকাতার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেনের তথ্যমতে, কৃষ্ণবটের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus krishnae। কৃষ্ণবট পাতা দিয়েই যে বটগাছের থেকে আলাদা, শুধু তা–ই নয়,Ñ এ দুটি প্রজাতির ক্রোমোজোম, ডিএনএ গঠন ইত্যাদির বিচারেও পৃথক। তাই এটিকে আলাদা একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করাই সংগত, জাত নয়।
কৃষ্ণবটগাছের পাতা বটের মতো সম্পূর্ণ ঝরে যায় না, আবার বটের মতো অনেক পাতা নিয়ে ডালপালা ছায়া তৈরি করে না, গাছ চিরসবুজ বৃহদাকারের বৃক্ষ, ৮ থেকে ২২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। ডালপালাগুলো এলোমেলেভাবে ছড়ায়, স্বল্প কিছু ঝুরি নামে বয়স্ক ডাল থেকে। পাতা দেখতে অনেকটা কাঁঠালপাতার মতো হলেও তার গোড়া কাপ বা ঠোঙার মতো। পাতা ৮ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার চওড়া। পাতার বোঁটা ভাঙলে সেখান থেকে সাদা দুধের মতো আঠালো কষ ঝরে। ফল খুব ছোট, আকার মাত্র ১ থেকে ৩ মিলিমিটার। ফল পাকলে লাল হয়ে যায়।
কৃষ্ণবটগাছের ঔষধি গুণ রয়েছে। এ গাছের শিকড়, ডালপালা, পাতা ও ফল থেকে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি করা হয়। বিশেষ করে আলসার বা ক্ষত, জ্বর, কুষ্ঠ, বমি, আমাশয়, সিফিলিস, যকৃতের প্রদাহ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয় বলে বিভিন্ন গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক