নামে মিল আছে দুজনের। তবে দেশ আলাদা।

একজনের নাম লিওনেল মেসি। কাছের মানুষদের কাছে তিনি ‘লিও’। আরেকজনের নামও লিও। পুরো নাম লিও আফোনসো। মেসির সঙ্গে তাঁর এটুকুই যা মিল। অবশ্য মিল আরও একটি আছে, সেটা বলার আগে এটুকু জেনে রাখুন, ফুটবলে দুজনের জন্মস্থান দুই চিরবৈরী দেশে। মেসির দেশ তো জানাই—আর্জেন্টিনা। আর আফোনসোর দেশ ব্রাজিল। এবার সেই মিলটা বলা যাক। ইন্টার মায়ামিতে তাঁরা দুজনেই সতীর্থ।

আরও পড়ুনমেসির শরীরে যত ট্যাটু, কোনটার কী মানে৯ ঘণ্টা আগে

আফোনসো অবশ্য মায়ামিতে মেসির বিশেষ এক সতীর্থ। কারণ ইন্টার মায়ামির স্কোয়াডে আফোনসোই একমাত্র ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়। হার্ড রক স্টেডিয়ামে আজ ক্লাব বিশ্বকাপে পালমেইরাসের বিপক্ষে মায়ামির ২–২ গোলে ড্র ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন ২৩ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড। তবে মাঠে নামার সুযোগ পাননি। বেঞ্চে বসেই দেখেছেন দলের খেলা, মেসির খেলা।

মায়ামিতে মেসির সঙ্গে খেলতে পেরে আপ্লুত আফোনসো.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক থেকে কত রাজস্ব পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কী হবে সেই অর্থ দিয়ে

এমন কোনো দিন নেই, যেদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ব করে বলেন না—তিনি প্রায় সব ধরনের আমদানি পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করছে।

প্রচুর অর্থ আসছে—দেশের ইতিহাসে এত অর্থ আগে কখনো আসেনি, শুক্রবার শুল্ক রাজস্বের প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ভুল বলছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে মার্কিন সরকার প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে; গত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় যা ২৪২ শতাংশ বেশি।

এপ্রিল মাসে প্রায় সব ধরনের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি পরবর্তী মাসগুলোতে আরও কিছু উচ্চ শুল্ক কার্যকর হয়। বাস্তবতা হলো, তখন থেকে জুলাই পর্যন্ত সরকার মোট ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার শুল্ক রাজস্ব সংগ্রহ করেছে—গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি। প্রশ্ন হলো—এই বিপুল অর্থ সরকার কোথায় ব্যয় করছে?

ট্রাম্প দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। প্রথমত, সরকারের লাখ লাখ কোটি ডলারের ঋণ শোধ করা ও আমেরিকানদের হাতে ‘ট্যারিফ রিবেট চেক’ বা শুল্কছাড়ের চেক (শুল্ক রাজস্ব সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া) তুলে দেওয়া।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, তিনি যা করছেন তার মূল উদ্দেশ্য ঋণ শোধ করা; অঙ্কের দিক থেকে তা বেশ বড়ই হবে। কিন্তু তাঁর মনে হয়, এত বেশি অর্থ আসছে যে মানুষকে হয়তো লভ্যাংশ দেওয়া যাবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত দুটোর কোনোটি-ই ঘটেনি। অনেক আমেরিকানের মনে হতে পারে, বিদেশি পণ্য আমদানির প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে গিয়ে যে অর্থ মূলত মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেট থেকে বেরোচ্ছে, সেই শত শত কোটি ডলার শুল্ক রাজস্বের গায়ে হয়তো শুধু ধুলো জমছে।

সরকার যে রাজস্ব সংগ্রহ করে—তা হোক সাধারণ কর থেকে কিংবা শুল্ক থেকে—সবই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের নিয়ন্ত্রিত সাধারণ তহবিলে জমা হয়। তারা এই তহবিলকে বলে ‘আমেরিকার চেকবই’, কারণ, সেখান থেকেই সরকারের খরচ মেটানো হয়, যেমন কর ফেরত দেওয়া।

যখন রাজস্বের পরিমাণ সরকারের খরচের চেয়ে কম হয়, অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি দেখা দেয়, তখন সরকার ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করে। বর্তমান সরকারের ওপর মোট ঋণের পরিমাণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। এই ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলছেন, এই ঋণের বোঝা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিচ্ছে।

যেভাবে একজন সাধারণ আমেরিকান ঋণ নিলে সুদ দেন, সেভাবে সরকারকেও ঋণের ওপর সুদ দিতে হয়। যত বেশি ঋণ, তত বেশি সুদ। ফলে মহাসড়ক উন্নয়ন বা মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার মতেো অর্থে টান পড়ে।

বর্তমান অর্থবছরে মার্কিন সরকারের ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এই শুল্ক রাজস্ব যথেষ্ট নয়। তবে এটাও সত্য, শুল্ক বাবদ প্রাপ্ত অর্থের কারণে ঘাটতির অঙ্ক কিছুটা কমেছে। অর্থাৎ শুল্ক রাজস্ব না থাকলে যতটা ঋণ নিতে হতো, এখন সরকারকে ততটা নিতে হচ্ছে না।

ডয়েচে ব্যাংকের সিনিয়র মার্কিন অর্থনীতিবিদ ব্রেট রায়ান বলেন, এই অর্থের আরও ভালো ব্যবহারের সুযোগ আছে, বিষয়টি এমন নয়। বাজেট ল্যাব অ্যাট ইয়েলের পরিচালক ও বাইডেনের হোয়াইট হাউসের সাবেক অর্থনীতিবিদ আর্নি টেডেস্কির মতে, যদি কংগ্রেস ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে শুল্ক রাজস্ব ‘রিবেট চেক’ আকারে জনগণকে ফেরত দেয়, তাহলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।

বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলি বিল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, এটা এখন অনুসরণ করার মতো নীতি নয়, বরং এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে সিএনএনের প্রশ্নের জবাব দেয়নি হোয়াইট হাউস।

বুমেরাং হতে পারে

কাগজে-কলমে শুল্ক রাজস্বের কল্যাণে সরকারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও এর প্রভাব সব সময় ভালো হয় না। বেশির ভাগ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এখনো বাড়তি খরচ নিজেরা বহন করছে, দাম বাড়াচ্ছে না। সব ব্যবসার ক্ষেত্রে তা আবার প্রযোজ্য নয়। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, খেলনা, ভোক্তা ইলেকট্রনিকসের দাম বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিবিষয়ক মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তা দেখা গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান, যেমন ওয়ালমার্ট ও প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল, আরও দাম বৃদ্ধির সতর্কতা দিয়েছে।

শুল্কসংক্রান্ত অনিশ্চয়তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে। ফলে চাকরির সুযোগ কমছে—এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে বেশ কিছু অর্থনৈতিক জরিপ।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ‘শুল্ক মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ ইয়েল বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে এ বছর ও আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আধা শতাংশ কমে যাবে।

এতে শুল্ক রাজস্বের একটি অংশ হারিয়ে যাবে; কেননা, যদি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম গতিতে হয়, তাহলে শুল্ক রাজস্ব থাকলেও আয়কর ও বেতন কর থেকে পাওয়া অর্থ কমে যাবে।

ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখছে। তাঁদের যুক্তি, সদ্য কার্যকর হওয়া বিশাল কর ছাড় ও ব্যয় বিলের সঙ্গে শুল্ক রাজস্ব মিলিয়ে মার্কিন অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সময়ের পরিক্রমায় তা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ