সরকার গঠন করা পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গেই থাকব: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
Published: 24th, October 2025 GMT
মুখ্য সমন্বয়কের পদ ছাড়ার খবরের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টি গুজব। আমি এনসিপির সঙ্গেই আছি। সরকার গঠন করা পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গেই থাকব।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির সমন্বয় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘মুখ্য সমন্বয়কের পদ ছাড়লেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী’ এমন খবর প্রকাশ করে কয়েকটি গণমাধ্যম। ওই খবরে বলা হয়, ‘এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। দুই সপ্তাহ আগে দলের আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব বরাবর এ পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তবে দল এখনো তাঁর পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই এনসিপির দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত পদত্যাগের খবরটি সঠিক নয় বলে এক বার্তায় জানান। তবে এ বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, সকালে উঠে দেখলাম রাতভর আমার পদত্যাগের গুজব চলেছে। অনেকেই রাতে আমাকে ফোন করেছেন, সকালে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
রাতেই আমাদের দলের দপ্তর সেল থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো, আমি এনসিপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। সরকার গঠন করা পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গেই থাকব।’
এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেবে উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘দেশপ্রেমিক সাংবাদিকদের কাছে আহ্বান রাখব, আপনারা কোনো গুজবে প্রভাবিত হয়ে সংবাদ পরিবেশন করবেন না। একটি সংবাদ কোথাও হলে সেটি যাচাই–বাছাই করে তারপর আরেকটি সংবাদ করবেন। যাঁরা এ ধরনের অপসাংবাদিকতা করেন তাঁদের আহ্বান জানাই, আপনাদের বোধোদয় হোক।
সুস্থ সাংবাদিকতার পথে আমাদের যাত্রা করতে হবে। এমনিতেই গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা চলে যাচ্ছে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হলে মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র ম খ য সমন বয়ক পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমান নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরবেন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খুব শিগগির নির্ধারিত তারিখটি জানতে পারবেন। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরবেন।’
এই প্রথম বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মাসের (নভেম্বর) কথা উল্লেখ করলেন। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্য নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তবে কোনো নেতাই তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। অবশ্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যেকোনো আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এই প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন করবেন কি না। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিন।’
জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের রেজিস্ট্রেশনও বহাল আছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলা এখন পর্যন্ত দায়ের করা হয়নি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তো কোনো রেজিস্ট্রেশন এখন নাই। নির্বাচন কমিশনে মার্কাও নাই এবং তাদের বিরুদ্ধে, তাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং গণহত্যার অপরাধে বিচার চলছে। অনেকেই বাকি আছে। তারাও হয়তো বিচারের আওতায় আসবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হতে পারে শিগরিই।...এখন যদি জাতীয় পার্টি এসে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা।’
আরপিও নিয়ে আপত্তি, সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপিনির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা চিঠি দেবেন।
কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার–সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।’
জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলেও মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো, জানি না।’
চলতি মাসেই ২০০ প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপিচলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজসংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব।’
অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমানের কল পেয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত...এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হওয়াই স্বাভাবিক।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে জোট গঠিত হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে যোগাযোগ আছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।
দুই উপদেষ্টা প্রসঙ্গেঅন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টাকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে—এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা সরকারের অংশ। তাঁরা যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কবে তাঁরা সরকার থেকে সরে আসবেন।
দুজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আরেক প্রশ্নে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁরা তো বলছেন, তাঁরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। কোনো দলের অংশ হিসেবে নয়। সে ক্ষেত্রে যদি তাঁরা কোনো দলে যোগদান না করেন, অথবা নির্বাচন না করতে চান, তখন সে বিষয়টা তখন দেখা যাবে।’