‘আই লাভ ইউ মাম— আই লাভ ইউ’ দর্শক সারি থেকে চিৎকার ভেসে আসছিল। মঞ্চে তখন কালোগাউন, মাথায় গ্রাজুয়েশন ক্যাপ পরা হাস্যোচ্ছ্বল এক মা তার সদ‍্য পাওয়া ডিপ্লোমাটি হাতে ধরে ছবির জন্য পোজ দিচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরসহ অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে। ছেলের চিৎকার তার কানে এলে ত্রিশোর্ধ্ব এই মা নিজেও চিৎকার করে বললেন, ‘আই লাভ ইউ টু’। এরপর গটগট করে এগিয়ে গেলেন অতিথিদের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে। গৌরব,  দৃঢ়তা আর মুগ্ধতার এক মিশেল আবেশ ধরে থাকল গোটা মঞ্চ জুড়ে কিছুক্ষণ। মাস্টার অব দ্য সেরিমনি (এমসি) মঞ্চে ডেকে নিলেন পরবর্তী গ্রাজুয়েটকে। 

ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডব্লিইউএসটি)'র ক্লাস অব ২০২৫ এর কনভোকেশন ছিল এমন অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষণের এক অনুপম বৈকালিক আয়োজন। ২৬৩ জন শিক্ষার্থী তাদের ডিপ্লোমা সংগ্রহ করলেন আলেকজান্দ্রিয়া সিটি হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত কনভোকেশন থেকে। 

তুমুল করতালি, ক্যামেরার ক্লিক, দর্শক সারি থেকে ক্ষণে ক্ষণে ছুঁড়ে দেওয়া দারুণ সব অভিনন্দন বার্তা মন ভরিয়ে রাখল সারাক্ষণ। 

দিনটি ছিল ২১ জুন শনিবার। দুপুর ১২টার পর থেকেই মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। কালো গাউন আর ক্যাপে ছেয়ে যেতে থাকে ক্যাম্পাস। নানা জাতি, নানা বর্ণ, নানা বয়স ও নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষগুলো যেন সকলেই এক আর অভিন্ন। 

তারা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে এখন পা রাখবেন কর্মজগতে। আবার অনেকেই ছিলেন, যারা এরইমধ্যে হয়তো রয়েছেন কাজে নিযুক্ত, তারই মাঝে শেষ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। এটি ছিল সকলেরই আনুষ্ঠানিক সনদ গ্রহণের দিন। 

অনুষ্ঠান শুরু হলো ঘড়ির কাটায় বেলা ২টায়। তার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিরা নীল-কালোর মিশ্রণে কনভোকেশন গাউন পরে গলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডাল আর উত্তরীয় ঝুলিয়ে প্যারেড করে হলে ঢুকলেন। এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাকাডেমিক) ড.

জেফের পিরিমের নেতৃত্বে আসন নিলেন মঞ্চের একদিকে। অন্যদিকে লাল-কালোর মিশেলে বিশেষ সেরিমোনিয়াল রোব পরে প্যারেড শেষে আসন নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরাসহ ঊর্ধ্বতনরা এবং বিশিষ্ট অতিথিরা। এর পরপরই স্কুল অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গ্রাজুয়েটরা প্যারেড করে মঞ্চের বাম দিকের সারিতে বসলেন। একইভাবে প্যারেড শেষে ডান দিকের সারিতে আসন নিলেন স্কুল অব ইনফরমেশন টেকনোলজি'র গ্রাজুয়েটরা। পুরো আয়োজন সমন্বয়ের নেতৃত্ব ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশনস) ড. শ্যান চো।

অতিথিরা আগেই বসেছিলেন দর্শক সারির মাঝের আসনগুলোতে। সহস্রাধিক আসনবিশিষ্ট হলরুম তখন কানায় কানায় পূর্ণ। এরই মধ্যে এমসি'র ঘোষণা এলো জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। সকলে দাঁড়িয়ে ডান হাত বাম বুকে চেপে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান দেখালেন ও কণ্ঠ মেলালেন। 

এরপরর শুরু হলো গ্রাজুয়েশনের বক্তৃতা পর্ব। শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও বোর্ড চেয়ারম্যানের বক্তব্য। মঞ্চে এলেন ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো বাংলাদেশি আমেরিকান, যার হাতে পরিচালিত হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।

পোডিয়ামে এসে প্রথমেই অভিনন্দন জানালেন ক্লাস অব ২০২৫ এর গ্রাজুয়েটদের। বললেন, বিশ্ব আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আপনার নতুন ধারণা, আপনার মূল্যবোধ, আর ভিন্ন কিছু করার সাহসিক পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করছে।  

এরপর বক্তব্যের গোড়ার দিকেই এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিলেন ডব্লিউইএসটির চ্যান্সেলর ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী উদ্যোগে সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় দুই মিলিয়ন ডলারের একটি স্টার্টআপ ফান্ড চালু করছে। 

তিনি বলেন, আজ আমি গর্বের সঙ্গে একটি সাহসী উদ্যোগের কথা ঘোষণা করছি। শিগগিরই আমরা একটি নতুন ইনোভেশন এন্টারপ্রেনারশিপ ইনকিউবেটর চালু করছি। যার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের কেবল পরামর্শই দেবো না— দুই মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত মুলধনেরও যোগান দেব। ছাত্র-শিক্ষক ও অতিথিদের উপস্থিতিতে এই ঘোষণায় উচ্ছ্বাসমুখর হয়ে ওঠে কনভোকেশন অডিটরিয়াম।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার যদি এমন কোনো পণ্য, সেবা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা কনসেপ্ট থাকে যা বাস্তব কোনো সমস্যার সমাধান করবে—তাহলে আমরা নির্বাচিত প্রতিটি কনসেপ্টের জন্য দুই মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, ডব্লিউইউএসটি কেবল আপনার একাডেমিক সক্ষমতা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে না—আপনাকে উদ্যোক্তা হতেও শিখিয়েছে।

আবুবকর হানিপ বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনে প্রভাব রাখাই, আমাদের সকল প্রচেষ্টার লক্ষ্য, আর সেটাই আমাদের অঙ্গীকার। 

অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন সোমা সাঈদ। নিউইয়র্ক সিটি সিভিল কোর্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান বিচারক। নিজের সংগ্রামী জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি নানা কথামালায় সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের অনুপ্রেরণা যোগান।

আইনের অধ্যয়ন থেকে বিচারক হয়ে ওঠার সংগ্রামময় যাত্রার নানাদিক উল্লেখ করে সোমা বলেন, আপনার অধ্যবসায়ই আপনার পথচলাকে দৃঢ়তায় বদলে দেবে।

বিশ্বখ্যাত দার্শনিক কবি রুমি-র একটি উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তুমি সম্ভাবনায় জন্ম নিয়েছো। তোমার ডানা আছে। তা ব্যবহার করা শেখো এবং ওড়ো।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন-এর সংগ্রাম ও সাফল্যের উদাহরণ টেনে শিক্ষার্থীদের যেকোনো চ্যালেঞ্জে অটল থাকার আহ্বান জানান সোমা সাঈদ।

ভার্জিনিয়া স্টেট সিনেটর সাদ্দাম আজলান সেলিম আত্মপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কমিউনিটির উন্নয়নে ভূমিকা রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আপনি যদি একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে পারেন, সেটিই গোটা সমাজকে ধীরে ধীরে বদলে দেবে।

লাউডন কাউন্টির কোষাধ্যক্ষ হেনরি সি. আইকেলবার্গ শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন, নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়ুন।

অ্যাপলায়েড রিসার্চ অ্যান্ড ফোনেটিকস এর প্রেসিডেন্ট ড. আনিস রহমান বলেন, আপনার ডিপ্লোমাটি এক টুকরো কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়, যদি না আপনার সংকল্প, আত্মনিবেদন, বুদ্ধিমত্তা আর আত্মউপলব্ধি সত্যিকারের সম্পদ হয়ে ওঠে।

ডব্লিউইউএসটি'র সিএফও ফারহানা হানিপ গ্রাজুয়েটদের আত্মবিশ্বাস ও নিজের ওপর আস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, আপনার আত্মপ্রয়োজনই হয়ে উঠবে আপনার পথপ্রদর্শক।”

শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও বাঁচার তাগাদা দেন ডব্লিউএসটির বোর্ড সদস্য ও ইউএসপিআইসিসি'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সিদ্দিক শেখ। 

স্কুল অফ প্রফেশনাল স্টাডিজের পরিচালক মাহদী-উজ-জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজস্ব যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব ও স্বকীয়তা দিয়েই নতুন পৃথিবী ও প্রযুক্তির যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

বক্তৃতা পর্ব শেষে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে ডিপ্লোমা হস্তান্তর। স্কুল অব আইটির গ্রাজুয়েটদের হাতে ডিপ্লোমা তুলে দেন এর পরিচালক অধ্যাপক অ্যাপোস্টোলস এলিওপোলস। আর স্কুল অব বিজনেস স্টাডিজের গ্রাজুয়েটরা ডিপ্লোমা নেন এর পরিচালক ড. মার্ক রবিনসনের হাত থেকে। প্রতিটি গ্রাজুয়েট তাদের ডিপ্লোমা হাতে নিয়ে ছবি তোলার সুযোগ পান চ্যান্সেলরসহ মঞ্চে উপবিষ্ট সকলের সঙ্গে। 

সবশেষে ডব্লিউএসটি প্রেসিডেন্ট ড. হাসান কারাবার্ক ক্লাস অব ২০২৫ এর সকল গ্র্যাজুয়েটের গ্রাজুয়েশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। গ্রাজুয়েটরা তাদের হ্যাটের টাসল ডান দিক থেকে বাম দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গ্রাজুয়েশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। এরপর গ্রাজুয়েশন হ্যাট উপরে ছুঁড়ে মেরে নিজেদের সাফল্যের মুহূর্ত উদযাপন করেন। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দের মধ্য দিয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন স ক ল অব পর চ ল র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?

কান  দিয়ে পানি পড়া বা পুঁজ পড়া খুবই কমন একটা সমস্যা বা রোগ। কানে ইনফেকশন, ঠান্ডা লাগা, টনসিলের সমস্যা থেকে কান দিয়ে পানি পড়তে পারে। এ ছাড়া টনসিলে প্রদাহ বা ইনফেকশন হলে এবং ওই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে কান দিয়ে পানি বা পুঁজ বের হতে পারে। যেকোনো কারণে  মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হলে কানের পর্দার ওপর চাপ ফেলে পর্দা ছিদ্র করে ফেলে। ফলে কান দিয়ে পানি পড়ে।

ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান, সহকারী অধ্যাপক, ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একটি পডকাস্টে বলেন, ‘‘কান পাকা রোগীর জন্য আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে যে, কোনোভাবেই কানের মধ্যে পানি প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। তুলার একটি বল বানিয়ে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে, তারপর আবার তেল ফেলে দিতে হবে। এরপর তুলার বলটা কানের ছিদ্র বরাবর রাখলে পানি পড়া বন্ধ হবে।  কান শুকনো রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন বাইরে থেকে কানে পানি না যায়, সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। তারপর নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞকে দেখাতে হবে।’’

এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে, কানে যে ছিদ্রটা হয়েছে সেটার ধরণটা কেমন। সেই ধরণ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র একজন বিশষজ্ঞের কাছ থেকে নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পুঁজ পড়াসহ কান পাকার অন্যান্য লক্ষণ থাকলে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এ ছাড়া কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ, বয়সভেদে নাকের ড্রপ এবং অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়েও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন:

টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টা করে ঘুমালে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাস্থ্য উপকারিতা

ডা. মো. আরিফ মোর্শেদ খান বলেন, ‘‘কানের পানি বা পুঁজের মধ্যে যদি বেশি দুর্গন্ধ থাকে তাহলে প্রয়োজনের সার্জারিও করা লাগতে পারে।’’

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাটুরিয়া লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন, লঞ্চে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ ওঠানামা
  • থমকে গেছে জুলাই যোদ্ধা মিশনের জীবন
  • বিরল নেপালি খুদে ছাতারে 
  • হুমা কুরেশির ভাই খুন
  • ফ্রিজের বরফ দূর করার ৭টি সহজ উপায়
  • প্রথমে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ, এরপর অনুসরণ করে ডাকাতি
  • এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার
  • এনসিএল টি-টোয়েন্টি দিয়ে ফিরবেন তামিম, থাকবেন মুশফিকুর-মাহমুদউল্লা
  • ‘তুমি কাজ করবে নাকি?’, একটা প্রশ্ন বদলে দিল জীবনের গল্প
  • কান দিয়ে পানি পড়লে কী সার্জারির দরকার আছে?