২০২৫-২৬ অর্থবছরে ‘নারী ও শিশু উন্নয়ন’, ‘সমাজকল্যাণ’, ‘স্বাস্থ্য’, ‘শিক্ষা’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ ও ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা গেছে। বাজেটে নারীবান্ধব ৪৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নারীসংশ্লিষ্ট বাজেটের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ২৮ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এটি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই প্রথমবারের মতো নারীদের অবৈতনিক এবং অস্বীকৃত যত্ন এবং গৃহস্থালির কাজের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে যত্নকেন্দ্রে আরও বরাদ্দ হলে ভালো হতো। 
নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম ১ হাজার টাকা করের হার নির্ধারণ, করের ভিত্তি সম্প্রসারণের জন্য একটি স্বাগত উদ্যোগ। তবে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয় স্তর এবং ব্যক্তিগত আয়কর কাঠামোতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যারা গত কয়েক বছর ধরে ক্রয়ক্ষমতার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন।
আগামী বছরে ডিজিটাল কর জমা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। মাসিক থেকে ত্রৈমাসিক রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়ম চালু একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, বিশেষ করে ছোট ব্যবসার জন্য তা উপকারী। তবে অনলাইন পণ্য বিক্রয় কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য পরিচালন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে এবং পরিষেবা গ্রহণকারীদের কাছে অন্তত আংশিকভাবে স্থানান্তরিত করবে।

মানবসৃষ্ট তন্তু এবং তুলা থেকে সুতা উৎপাদন পর্যায়ে নির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হলে স্থানীয় টেক্সটাইল উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর উৎপাদন খরচ বাড়বে। রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার এবং তার কম্প্রেসরের স্থানীয় উৎপানের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার উচ্চমূল্যের আকারে গ্রাহকদের কাছে প্রেরণ করা হবে। জীবাণুমুক্ত অস্ত্রোপচার ক্যাটগাট, অস্ত্রোপচারের সেলাই আমদানির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় বাড়াবে। এলপিজি সিলিন্ডার, লিফট এবং গৃহস্থালির যন্ত্রপাতির ওপর ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস ভোক্তা মূল্য বাড়াবে। তবে ধীরে ধীরে ভ্যাটের ভিত্তি প্রসারিত করবে। 

অর্থ উপদেষ্টা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ঘোষণা করেছেন। সরকার আগামী তিন বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ১৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন, জেলাগুলোতে আঞ্চলিক এসএমই পণ্যমেলার আয়োজন এবং সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরির জন্য ২৫ হাজার এসএমই উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এ ছাড়া সরকার প্রান্তিক সিএমএসএমই খাতের ১০ হাজার উদ্যোক্তাকে (মহিলা উদ্যোক্তাসহ) ১০ বিলিয়ন টাকার ঋণ বিতরণ এবং এ খাতের প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৩ হাজার নারী উদ্যোক্তাকে করপোরেট ক্রেতাদের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্য ধার্য করেছে। 

বাজেটে নারী মালিকানাধীন ব্যবসা থেকে সরকারি ক্রয়ের একটি অংশ সংরক্ষণের বিধান যুক্ত হলে ভালো হতো, যা মোট সরকারি ক্রয়ের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ হতে পারে।
খাদ্য নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের কৃষি ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার ২৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা আরবিএফওয়াই ২৫ এর চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। ২০২৬ অর্থবছরে মোট এএএস বাজেটের ৩৭ শতাংশ কৃষি ভর্তুকি। তবে ২০২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। ভর্তুকি কমানো ও কীভাবে অতিরিক্ত খরচ মেটাতে সাহায্য করতে পারে, তা স্পষ্ট নয়।
ভর্তুকি থেকে কৃষকরা সম্পূর্ণ সুবিধা পাননি। এটি উন্নত তদারকি এবং ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। কৃষিক্ষেত্রে নারীরা মূলত নিয়োজিত এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্যের সময়ে নারীরাই প্রথম ত্যাগ স্বীকার করে। তাই কৃষক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দান এবং কৃষিতে নারীদের অনুকূলে ইনপুট সহায়তা কার্ড প্রদান গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। ভর্তুকি কাঠামো যুক্তিসংগত এবং মহিলা কৃষকের প্রশিক্ষণ ও ভর্তুকি প্রদানের জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা দরকার।  

বাজেটের ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জ
১.

বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের পার্থক্য: অনেক সময় বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা সময়মতো বা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। নারীবান্ধব প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে দুর্বলতা, স্বচ্ছতার অভাব এবং মনিটরিং ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না।
২. লিঙ্গবৈষম্যমূলক ব্যয় বিশ্লেষণের ঘাটতি: যদিও লিঙ্গ-সংবেদনশীল বাজেট চালু রয়েছে, তবে প্রকৃত লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণ অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। এতে প্রকৃতপক্ষে নারী কতটা উপকৃত, তা নির্ণয় করা কঠিন।
৩. শহর বনাম গ্রামীণ বৈষম্য: শহরের শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত নারীরা কিছু সুযোগ পেলেও পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ ও দরিদ্র নারীরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
৪. নারীর সুরক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধে সীমিত বরাদ্দ: নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং সাইবার ক্রাইম রোধে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা, পুনর্বাসন ব্যবস্থার জন্য বাজেটে বরাদ্দ এখনও অপ্রতুল।
৫. অপ্রচলিত খাতে নারীর অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা: প্রযুক্তি, পরিবহন, নির্মাণ ইত্যাদি অপ্রচলিত খাতে নারীদের অংশগ্রহণে সহায়ক নীতিমালা এবং বাজেট সহায়তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।


সুপারিশ
১. বাস্তবায়ন মনিটরিং জোরদার: বাজেট বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে মনিটরিং ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
২. গ্রামীণ নারীদের অগ্রাধিকার: নারীবান্ধব প্রকল্পগুলোতে গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৩. প্রযুক্তিতে নারীর প্রবেশ: তথ্যপ্রযুক্তি ও উদীয়মান খাতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বাজেট সহায়তা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
৪. লিঙ্গ-সংবেদনশীল বিশ্লেষণ: বাজেট প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে লিঙ্গ সংবেদনশীল বিশ্লেষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একক জানালা: ব্যাংকিং ও সরকারি সহায়তা পেতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালু করা দরকার।
৬. নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন গঠনের জন্য সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন, যাতে নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) অত্যন্ত শক্তিশালী স্তম্ভ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বিকাশে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ব্যাপক সম্ভাবনাময় এ খাত প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশে এসএমই কোম্পানির সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ। এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষের। অর্থাৎ শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের ৮৭ শতাংশই এই খাতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিনিয়ত বেকারের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এর বড় অংশই শিক্ষিত। শিক্ষাজীবন শেষ করে শ্রমবাজারে আসার পর তাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান মিলছে না। বর্তমানে দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী ১০০ জনের মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ফলে বেকারত্ব নিরসনে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ খাত নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও কার্যকর উদ্যোগ একেবারেই সীমিত। দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা, ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে এসএমইকে সংযুক্ত, কর কাঠামো ও লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সহায়তায় প্রদর্শনীর আয়োজন করা। 

নাসরীন ফাতেমা আওয়াল: সভাপতি, উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব), পরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশন

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সমত ত দ র জন য র জন য ব ভর ত ক বর দ দ সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে

বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।

সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।

বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।

মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।

সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।

এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বেড়েছে 
  • নভেম্বরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
  • তিন মাসে ওয়ালটনের মুনাফা ২২১ কোটি টাকা
  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা
  • সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে
  • পে স্কেল হচ্ছে না, কী হওয়া দরকার ছিল