বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে শহীদ শিক্ষার্থী নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে ম‌হিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুর‌শিদ বলেছেন, জুলাই আ‌ন্দোলনে আ‌মি নিজেও মা‌ঠে ছিলাম। আমরা দায়িত্ব নি‌য়ে‌ছি এক বছর হ‌লো। এতদি‌নের মধ্যে আমরা তা‌দের কা‌ছে যে‌তে পারিনি। আমরা যতটুকু অনুদান দি‌তে পেরেছি শহীদ না‌ফিসার বাবা তা পেয়েছেন। এখা‌নে আর একজন শহী‌দের বাবা আ‌ছেন তি‌নিও অনুদান পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমা‌দের বিরুদ্ধে অ‌নেক অ‌ভিযোগ থা‌কে, আমরা সময়মতো শহীদ‌দের পা‌রিবা‌রের কা‌ছে পৌঁছাতে পারছি না। অ‌নেক দেরি হলেও আপ্রাণ চেষ্টা কর‌ছি সবার কা‌ছে পৌঁছানোর। নাফিসার বাবা ও জুলাই কন্যাদের দা‌বি হ‌চ্ছে জুলাই সনদ। এখা‌নে শহীদ‌দের সনদ সম্ভাব্য কিন্তু যোদ্ধা‌দের সনদ একটু কঠিন কারণ যোদ্ধা‌দের সংখ্যা অ‌নেক।

শুক্রবার আড়াইটায় উপদেষ্টা গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদ নগর এলাকায় শহীদ না‌ফিসার বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ না‌ফিসার বাবা আবুল হো‌সেন। এসময় তি‌নি ব‌লেন, বেঁচে থাকতে মে‌য়ে হত্যার ন্যায়বিচার দেখে যেতে চাই। খুনিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।

না‌ফিসার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার এবং স্থানীয়রা। মারা যাওয়ার এক বছর পরও তার স্মৃতি আঁকড়ে কাঁদছে তার পরিবার। এ সময় উপদেষ্টাকে পেয়ে সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে নাফিসার মা কুলসুম বেগম পারিবারিক সমস্যার কারণে দুই মেয়েকে নিয়ে সাভারের দক্ষিণ বক্তারপুরে কোর্টবাড়ি এলাকায় চলে আসেন। এরপর তিনি মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশে পাড়ি জমান। নাফিসাকে ভর্তি করা হয় সাভারের বেসরকারি ল্যাবরেটরি কলেজে। প‌রে নাফিসার বাবা আবুল হোসেন নাফিসাকে টঙ্গীতে নিয়ে যান। তিনি নাফিসাকে সাহাজউদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। তবে নাফিসা অধিকাংশ সময়ে সাভারে মামা হযরত আলীর বাসায় থাকতেন। গত ২৮ জুলাই ধামরাইয়ে বড় মামার বাসায় আসেন। পরে ৩০ জুলাই ছোট মামা হযরত আলীর বাসায় যান। এরপর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সাভারে আন্দোলনে অংশ নিতেন।

আগস্টের ৩ তারিখ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নাফিসা। ৫ আগস্ট সকালে মামাকে জানিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে গাবতলীতে যাবেন।

বিষয়টি ভেবে মামা হযরত আলী আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলেন। কিন্তু নাফিস নিষেধ শোনেননি। কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর মামা নাফিসার মুঠোফোনে কল দিলে জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আছেন। তখন মামা তাকে রেডিও কলোনি হয়ে বাসায় ফিরতে বলেন। বেলা ১১টার দিকে আবার কল দিলে আর ফোন ধরেননি নাফিসা।

বেলা আড়াইটার দিকে নাফিসার ছোট বোন সাফা হোসেন কল দিলে অপরিচিত একজন কল ধরে ‘নাফিসা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন’ জানিয়ে ল্যাবজোন হাসপাতালে যেতে বলেন। বিষয়টি জানতে পেরে হযরত আলী ল্যাবজোন হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে নাফিসাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকেরা নাফিসাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে আন্দোলনকারীরাসহ লাশ বাসায় নেওয়ার পথে মুক্তির মোড় এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। এতে হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে বিকেল চারটার দিকে লাশ তার মামার বাসায় নেওয়া হয়।

রাত নয়টার দিকে সাভারে জানাজা শেষে নাফিসার মায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানির বাসায় নাফিসার ছোট ভাইয়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে নাফিসার বাবা টঙ্গীর এরশাদনগরে লাশ নিয়ে নিজ বাড়ির একটি কবরস্থানে দাফন করেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন জ ল ই শহ দ উপদ ষ ট দ র সনদ

এছাড়াও পড়ুন:

ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা

জুলাই পদযাত্রায় অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলার হয়েছে। 

শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মসূচি শেষে পীরগঞ্জে যাওয়ার পথে টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় এ হামলা হয়।

এনসিপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও আর্ট গ্যালারি মসজিদে নামাজ শেষে পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় এনসিপির গাড়িবহর। টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় একটি আন্তঃজেলা বাস এনসিপির বহরের গাড়িকে চাপা দেয়। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে এর কৈফিয়ত চান। তখন এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ৫ থেকে ৬ জন অচেনা মানুষ। এতে গাড়িচালকসহ একজন এনসিপি কর্মী আহত হন।

এনসিপি অভিযোগ করেছে, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। প্রথমে বাস চাপা দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে, তারা সঠিক গাড়ি চিহ্নিত করতে পারেনি। পরে গাড়িতে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরে হামলা করে। 

ঠাকুরগাঁও এনসিপির মুখপাত্র অপু বলেছেন, হামলাকারীরা মূলত নাহিদ বা সারজিসদের টার্গেট করেছিল। প্রথমে যেহেতু বাসচাপা দেওয়া হয়েছে, ধারণা করা যায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি হত্যা। এর সঠিক তদন্ত দাবি করছি।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার হোসেন বলেছেন, বিষয়টি জানামাত্র ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। এনসিপি অভিযোগ করছে, এটি হামলা। প্রাথমিকভাবে একজন হামলাকারীর ভিডিও তারা দেখিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/হিমেল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানির জয়ে ইসলামবিদ্বেষের জ্বালা
  • দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে জাবি ছাত্রদলের ১৫ সদস্যকে অব্যাহতি
  • জারিন তাসনিমার একক চিত্র প্রদর্শনী ‘মাটি, মূর্তি ও মানস’
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১৫ ‘নিষ্ক্রিয়’ নেতাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
  • জারিন তাসনিমের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘মাটি, মূর্তি ও মানস’
  • জুলাই শহীদদের সনদ সম্ভব, যোদ্ধাদের সনদ একটু ক‌ঠিন: উপদেষ্টা শারমীন
  • ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
  • সবুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ধূসর চিত্র
  • জাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণে ছাত্রশিবিরের ৫ দফা