কৃষক মো. নুরুল আমিন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের পরামর্শ গ্রহণ করে মার্চ মাসের শুরুতে বাড়ির পাশে ৩৩ শতক জমিতে চিচিঙ্গা চাষ করেন।
এপ্রিল মাসের শুরুতে তিনি রোপণ করেন উন্নত জাতের চিচিঙ্গার বীজ। রোপণের প্রায় ১৫দিনের মধ্যে চারা গজায়। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে গাছ বড় হয়। প্রায় ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে। বর্তমানে গাছে প্রচুর পরিমাণে চিচিঙ্গা ঝুলছে। প্রায় দুই দিন পরপর গাছ থেকে চিচিঙ্গা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।
কৃষক মো.
আরো পড়ুন:
কালো জাতের আখ চাষে সফল মাসুদ
এক কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ
তিনি জানান, পোকা দমনে ব্যবহার করেন হলুদ ও ফেরোমন ফাঁদ। ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক। চাষাবাদে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত বিক্রি থেকে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বাকী সময়ে আরও লক্ষাধিক টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, তার চাষ করা চিচিঙ্গা দেখতে এসে স্থানীয় কৃষকরা মুগ্ধ হচ্ছেন। স্থানীয় কৃষকরা চিচিঙ্গা চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। চিচিঙ্গা চাষে সফলতা আসার পেছনে অবদান রয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের। তিনি প্রায় সময় জমিতে এসে কোন সমস্যা থাকলে পরামর্শ দিয়ে যান।
মো. নূরুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজে জড়িত রয়েছি। জমি আবাদ করে নানা ফসল চাষ করছি। চিচিঙ্গা চাষ করে ভালোই টাকা আয় করেছি। আমার চাষাবাদ দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন।”
কৃষক আতাউর রহমান বলেন, “কঠোর শ্রম ও চেষ্টায় সঠিক পথ বের হয়। তার সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ। শ্রম ও চেষ্টা এবং পরামর্শ পেয়ে কৃষক মো. নুরুল আমিন চিচিঙ্গা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তার মতো আমরাও চিচিঙ্গা চাষ করতে আগ্রহী।”
ক্ষেতে কৃষক মো. নুরুল আমিনের সঙ্গে দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম।
দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, “চিচিঙ্গা একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি, যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছরই চাষ করা যায়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চিচিঙ্গা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। চিচিঙ্গা চাষের জন্য দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি উপযোগী।”
তিনি বলেন, “এ অঞ্চলের মাটি চিচিঙ্গা চাষের জন্য উপযোগী। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ক্রিপার প্রদর্শনীতে চিচিঙ্গা চাষ করেন কৃষক মো. নুরুল আমিন। তিনি চিচিঙ্গা আবাদ করে সফল। তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছি। তার চিচিঙ্গা চাষে সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এ জাতের চিচিঙ্গা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তারাও আমার কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন। আমি পরামর্শ দিয়েছি। এক কথায় উন্নতজাতের চিচিঙ্গা চাষে কৃষক মো. নুরুল আমিনের বাজিমাত।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, “আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চিচিঙ্গা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পূর্ব শিমুলিয়াম গ্রামে উন্নতজাতের চিচিঙ্গা চাষ করেন কৃষক মো. নুরুল আমিন। তার জমিতে চিচিঙ্গার ফলন ভালো হয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফলত শ ম ম ল হক শ ম ম ন র ল আম ন কর মকর ত চ ষ কর ক ষকর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চা শ্রমিকদের অনুপ্রেরণা ইতি গৌড়
অকালে মাকে হারিয়েছেন ইতি গৌড়। বাবাও অসুস্থ। সংসারে অভাব লেগেই আছে। তবে, এসব বাধা আটকাতে পারেনি ইতির পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্পৃহাকে। চা বাগানের টিলায় দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা ইতি সব বাধা ডিঙিয়ে একের পর এক একাডেমিক সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়ে পৌঁছে গেছেন দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানের সবুজ টিলায় ইতি গৌড়ের বাড়ি। পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ইতি। তার সাফল্যে চা বাগানের বাসিন্দারাও খুশি। ইতির সাফল্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন তারা। তাকে অভিনন্দন জানাতে আসছেন অনেকেই। বরমচাল চা বাগান থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে ইতিই প্রথম।
সরেজমিনে বরমচাল চা বাগানে গেলে কথা হয় সেখানকার অনেক বাসিন্দার সঙ্গে। তবে, ইতি গণমাধ্যমের সামনে আসতে নারাজ।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী গণেশ কানু বলেছেন, “ইতি যে সফলতা অর্জন করেছে, এতে আমরা আনন্দিত। বরমচাল চা বাগানের জন্য সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয়। ইতি গৌড় অবহেলিত স্থান থেকে উঠে এসেছে। সে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সে এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ে সুযোগ পেয়েছিল। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।”
ইতির বাবা শংকর গৌড় বলেন, “আমার মেয়ে অনেক বড় হবে, এটাই আমার স্বপ্ন।”
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, “অভাব-অনটনকে পিছে ফেলে ইতি গৌড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। চা শ্রমিকের সন্তানের জন্য এটি বড় সফলতা।”
চা বাগানের নিয়মিত শ্রমিকের খাতায় ইতির নাম লেখা থাকলেও সে নাম মুছে যাবে মেধার টানে। ইতির নাম এখন দেশের সর্বেচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতায় লেখা হয়ে গেছে।
দুই বছর আগে ইতির মা সুমিত্রা গৌড় মারা যান। বাবা শংকর গৌড় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে অসুস্থ হয়ে আছেন। ইতির মাসি ষষ্ঠী গৌড় পরিবারের দেখাশোনা করেন।
ঢাকা/আজিজ/রফিক