নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বের কার‌ণে বর্তমা‌নে খ‌ণ্ডিত জাতীয় পার্টি জনগ‌ণের প্রত‌্যাশা পূরণ কর‌তে পার‌বে না মন্তব‌্য ক‌রে দ‌লের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম‌্যান হু‌সেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানি‌য়ে‌ছেন জাতীয় পার্টির (রওশন) মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে তি‌নি এ কথা ব‌লেন।

কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, “খণ্ড খণ্ড হয়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না। বারবার বিভক্তির মাধ্যমে সংগঠনের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। স্বৈরাচারী মনোভাব, ব্যক্তি স্বার্থ ও একগুয়েমির কারণে দল বারবার বিভক্ত হচ্ছে।”

আরো পড়ুন:

দেশ সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন নয়: নাহিদ

বাংলাদেশপন্থি মত ধারণ করেই জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে: নাহিদ

তি‌নি ব‌লেন, “আজ দলের নেতৃত্ব সংকট তৈরি হয়েছে। এর থেকে পরিত্রানের উপায় বের করতে হবে আমাদের। সব পক্ষকে এক টেবিলে বসে জাতীয় পার্টিকে নতুন করে সংগঠিত করতে হবে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস ভুলে গিয়েছি। আমরা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য আদর্শ থেকে বিচ্যুত হচ্ছি। কিন্তু দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করার জন্য  যে ব্যাক্তির অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত তিনি তা করছেন না, বরং তার কার্যকলাপ দেখে মনে হয় নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নতুবা দল ধ্বংসের জন্য দায়ীদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা কখনো ক্ষমা করবে না।”

দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ফলে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ছে জা‌নি‌য়ে কাজী মামুন ব‌লেন, “খণ্ডিত জাপা কখনো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না, তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টির কোনো বিকল্প নেই।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট

এছাড়াও পড়ুন:

জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বিরোধীরা

জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যানের বিরোধীরা। দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মুজিবুল হক চুন্নু একযোগে বলেছেন– তারা এখনও স্বপদে বহাল। 
এই তিন নেতা বলেছেন, মহাসচিব পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ অবৈধ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই তিন নেতা। আনিসুল ইসলাম বলেন, গত নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির আড়াই কোটি টাকার হিসাব জি এম কাদের দেননি। দলীয় তহবিলে আসা চাঁদা এবং অনুদানের হিসাবও দেননি। হিসাব চাওয়ায় গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 
গত চার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে অংশ নেওয়া জাপা গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পায় আগেই। অভ্যুত্থানের নেতারা এখন দলটিকে স্বৈরাচারের দোসর বলছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চাপে রয়েছে জাপা। নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের পর সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, মহাসচিব মুজিবুল হককে সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের। 

আনিসুল ইসলাম বলেছেন, প্রেসিডিয়ামের যে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা বলে জি এম কাদের মহাসচিবকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তা অবৈধ। কোরামও পূরণ হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারা অনুযায়ী, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে মহাসচিব প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান এবং আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করবেন। মহাসচিব চুন্নুর অজ্ঞাতে তথাকথিত সভা হয়েছে। গত মে মাসে জাপার প্রেসিডিয়ামে সিদ্ধান্ত হয়, ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বা কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্মেলন হবে। চেয়ারম্যান পদে আনিসুল ইসলাম এবং মহাসচিব পদে রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থিতার ঘোষণা দেন। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের কাছ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা পাওয়া জি এম কাদেরকে সরাতে তৎপর হন জ্যেষ্ঠ নেতারা। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না– এ কারণ দেখিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন জি এম কাদের। কিন্তু ২৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি ছিল না। ক্ষুব্ধ আনিস ও হাওলাদার ২৮ জুনেই কাকরাইলে সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। এটি ঠেকাতে জি এম কাদের একই স্থানে একই দিনে সমাবেশের ডাক দেন। পরে দুই পক্ষই পিছিয়ে যায়। 
গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, জাপা চেয়ারম্যান দলের যে কাউকে যে কোনো সময়ে বহিষ্কার করতে পারেন, পদও দিতে পারেন। এ ধারা বাতিলের দাবি তুলেছিলেন চুন্নু। আনিসুল ইসলাম বলেছেন, যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই জাপার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু জি এম কাদের মৃত্যুপথযাত্রী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে জোর করে সই নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। 

গত বছর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জি এম কাদেরকে ছেড়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দেন জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জি এম কাদের একে একে সবাইকে বের করে দিয়েছেন। 
আক্ষেপ করে চুন্নু বলেন, ‘এমন কী অপরাধ করলাম– প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দিলেন! মহাসচিব থেকে অব্যাহতি নিয়ে আপত্তি নেই। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে জাপায় আছি। 
আনিসুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর কাউকে বাদ দেওয়া, পদ দেওয়ার ক্ষমতা নেই চেয়ারম্যানের। ফলে চুন্নুই মহাসচিব পদে রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীমের নিয়োগ অবৈধ। 
সংবাদ সম্মেলনে রওশনের নেতৃত্বাধীন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাও ছিলেন। ছিলেন প্রেসিডিয়ামের সাবেক ও বর্তমান সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রত্না, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা প্রমুখ। এ ছাড়া ছিলেন জাপার ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পদে থাকা নেতারা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জি এম কাদেরের আদেশ মানবেন না বিরোধীরা