কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের আখড়াবাড়িতে সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সাংবাদিকের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আখড়াবাড়ির সামনে কালী নদীর পাশে লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের স্থায়ী মূল মঞ্চের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত সাংবাদিক ঢাকা পোস্টের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি রাজু আহমেদকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপর তাঁকে দেখতে হাসপাতালে উপস্থিত হন জেলার সাংবাদিকেরা। তাঁরা হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

আগামী শুক্রবার লালন আখড়াবাড়ি চত্বরে লালন তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনের স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবার জাতীয়ভাবে পালনের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সাংবাদিকেরা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেসরকারি টেলিভিশন স্টার নিউজের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জানান, দুপুরে রাজু আহমেদসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক লালন স্মরণোৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতির খবর সংগ্রহের জন্য ছেঁউড়িয়ায় যান। মাঠের একপাশে তাঁরা চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান, মূল মঞ্চের পাশ থেকে রাজু দৌড়ে আসছেন। পেছন থেকে দুই যুবক তেড়ে এসে তাঁকে মারধর করেন। তিনি আরও বলেন, মূল মঞ্চ সাজানো হচ্ছে। ঠিক তার পাশেই কাপড়ঘেরা জায়গায় কয়েকজন মাদক সেবন করছিলেন। সেই দৃশ্য রাজু ধারণ করেছিলেন। হয়তো সে কারণেই তাঁকে মারধরের এ ঘটনা ঘটেছে।

আহত সাংবাদিক রাজু আহমেদ বলেন, ‘লালন স্মরণোৎসবের প্রস্তুতির সংবাদ সংগ্রহের সময় মূল মঞ্চ থেকে প্যান্ডেলের ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলাম। বেলা একটার দিকে হঠাৎ করেই কয়েকজন আমার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী ছিল। হামলায় কানে আঘাত পেয়েছি। হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’

রাজু আরও বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) দুপুরে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন সাংবাদিকদের লালন আখড়াবাড়ির আয়োজন নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে আমি আখড়াবাড়িতে মাদক বিক্রি ও সেবনের বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দিয়েছিলাম। এ জন্যই হয়তো মাদকব্যবসায়ীরা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।’

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ বলেন, লালন আখড়াবাড়ি এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনের বিষয়টি বারবার জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সেখানে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটল। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, হামলায় রাজুর কান দিয়ে সামান্য রক্ত বের হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মারধরের কারণে তিনি আহত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে বিশ্রামে থাকতে এবং মুঠোফোন কানে ধরে কথা না বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দ্রুত তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির আহ্বায়ক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক ফোন করে হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। এটি ফৌজদারি অপরাধ। তাঁকে (রাজু) মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব দ স গ রহ স গ রহ র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা কলেজে রাতে মিছিল, উত্তেজনা

ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দিনভর পক্ষে–বিপক্ষে ব্লকেড কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শেষে রাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ছাত্রদের একটি মিছিল কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসে দিকে যায়। এ সময় উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রদের ইঙ্গিত করে নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এর আগে উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রকে মারধর ও শিক্ষককে হেনস্তার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করেন ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। এতে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীরাও সংহতি জানান। তাঁরা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে মিছিল করেন।

অপর দিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কিছু ছাত্র ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, স্নাতকের (সম্মান) এক ছাত্রকে মারধর করে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।

এদিকে শিক্ষক হেনস্তা ও শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারা দেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা (শিক্ষক)। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে কোনো ক্লাস হয়নি।

ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা বিভাগ ছেড়ে শিক্ষক লাউঞ্জে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ জানান। কলেজের শহীদ মিনারের সামনেও কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তাঁরা। এতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস হোসেনও অংশ নেন।

ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত এই কাঠামো নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুনসায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের১৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ