পিআর পদ্ধ‌তিসহ পাঁচ দফা দা‌বিতে রাজধানীতে মানববন্ধন ক‌রে‌ছে বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামী।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) যাত্রাবা‌ড়ী থে‌কে গাবতলী পর্যন্ত এ কর্মসূ‌চি পালন ক‌রেন দল‌টির নেতাকর্মীরা। মৎস ভব‌নের সাম‌নে মানববন্ধ‌নে যোগ দেন জামায়া‌তের সি‌নিয়র না‌য়ে‌বে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ সি‌নিয়র নেতারা।

আরো পড়ুন:

জামায়াতের ধারণা তারা ক্ষমতায় গেছে: দুলাল

নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে ‘না’, নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকা‌রের প্রতি দৃ‌ষ্টি আকর্ষণ ক‌রে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ব‌লে‌ন, “আমি সরকারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আজ হুঁশিয়ারি দিতে চাই না। আজকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রশাসনের যে অবস্থা এবং যে ষড়যন্ত্র চলছে, এটাকে বন্ধ করুন। নিরপেক্ষ সৎ লোকদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করুন। আর যদি না হয়, কোন কোন উপদেষ্টার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, আমাদের কাছে নাম আছে। তাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে। মিটিংয়ে তারা কী বক্তব্য দেন, এর খবর আছে। আমরা জনগণের কাছে আপনাদের এখন প্রকাশ করছি না। সুযোগ করে দিতে চাই। আপনাদের সংশোধনের জন্য সময় দিতে চাই। যদি সময়মতো সাবধান না হন, তাহলে জনসমক্ষে নাম প্রকাশ করা হবে।”

একটি দলের লোকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে বসিয়ে নীলনকশার নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র চলছে জা‌নি‌য়ে ডা.

তাহের বলেন, “প্রশাসনে একটি দলের অনুগত লোকদের বসিয়ে প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করা হ‌চ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে—কোনো দলের অনুগত ব্যক্তিকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে না। কিন্তু দেখা গেছে, বাস্তব চিত্র তার উল্টো। যাকে জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত একজন ব্যক্তি, যিনি একটি দলের প্রতি সরাসরি অনুগত।”

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তাহের ব‌লেন, “আপনি বিশ্বব্যাপী একজন গ্রহণযোগ্য মানুষ। কিন্তু যারা আপনাকে ব্যবহার করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে, তাদেরকে সরিয়ে দিন। নতুবা আপনার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আপনি যদি তাদেরকে চিহ্নিত করতে না পারেন, আমাদের কাছে তালিকা আছে—আপনি চাইলে আমরা তালিকা দিতে প্রস্তুত আছি। নতুবা আমরা জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে বাধ্য হবো। পরবর্তীতে আপনাকেই এর সব দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। আপনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ও জাতির ভবিষ্যৎ স্থায়ীভাবে শান্তিপূর্ণ করতে ৫ দফা দাবি মেনে নিন। এতে শুধু জামায়াতে ইসলামীর নয়, জাতির মঙ্গল হবে।”

তা‌হের ব‌লেন, “হাজার হাজার মানুষ সড়কে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করার পরও যদি সরকারের কানে না যায়, সরকার যদি জনগণের চোখের ভাষা, মুখের ভাষা না বোঝে, তবে সরকার যেই ভাষা বুঝতে চায়—জনগণের দাবি আদায়ে সেই ভাষায় দাবি আদায় করা হবে।”

তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকার যদি সড়ক অবরোধ চায়, সরকার যদি রাজপথ উত্তাল দেখতে চায়, তবে জামায়াতে ইসলামী ইচ্ছার বিরুদ্ধেও সেই কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।”

জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায় দা‌বি ক‌রে তা‌হের ব‌লেন, “জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তি বা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করে না; দলীয় স্বার্থের রাজনীতি করে না। জামায়াতে ইসলামী গণমানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে। একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই জনগণ তাদের পতন চায়। ৫ আগস্ট পরবর্তী ঐ দল ক্ষমতায় না থেকেও নিজেদেরকে ক্ষমতাসীন মনে করে সারা দেশে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, লুটপাট ও দখলদারিত্ব শুরু করেছে।তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। ঐ দলটি কথায় বলে তারা সংস্কার চায়, কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনে বসলে নানা রকম টালবাহানা করে। দলীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা হাসিনা মার্কা প্রহসনের নির্বাচন চায়। মনে রাখতে হবে, এ দেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। জনগণ এখন সজাগ ও সতর্ক রয়েছে।”

গণভোট জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ হতে পারে জা‌নি‌য়ে তিনি বলেন, “যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় না, মেনে নিতে পারছে না—তারা যুক্তি দেখাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে জনগণ ভোটের প্রতি আস্থা হারাবে, যার প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।”

গণভোটে সমস্যা কারা করবে—প্রশ্ন রেখে ডা. তাহের বলেন, “এজন্যই তো জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হওয়া জরুরি। কারণ যারা সমস্যা সৃষ্টি করবে, তারা জনগণ ও সরকারের কাছে চিহ্নিত হবে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হলেও গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের টেস্ট ম্যাচ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।”

নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দা‌বি জানান তি‌নি।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের পরিচালনায় রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে আরো বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. শামছুর রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দসহ বিভিন্ন সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় এবং মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্বশীল নেতারা।

সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও বিচারের মুখোমুখি করা—গণমানুষের দাবি। সরকার যদি গণমানুষের দাবি উপেক্ষা করে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একদিনে করতে চায়, তাহলে বুঝতে হবে সরকার একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকার গড়িমসি করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করতে জনগণ বাধ্য হতে পারে।”

তাই সরকারকে শান্তিপূর্ণভাবে ৫ দফা দাবি মেনে নিতে তিনি আহ্বান জানান।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট সদস য ও ঢ ক ন উপদ ষ ট সরক র য সরক র র র জন ত ক ষমত গণভ ট ইসল ম ণ করত

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোটে বিভাজনের ঝুঁকি এড়ানোর উপায় কী

রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের ভেতর একধরনের টানাপোড়েন ও আস্থাহীনতার সংকটে ভুগছে, তখন জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে একটি ঐকমত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য আশার আলো দেখায়। প্রস্তাবিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কার, জবাবদিহি এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নপ্রক্রিয়ার জন্য জুলাই সনদ একটি কার্যকর দলিল হিসেবে রাজনৈতিক দল ও জনগণের সামনে থেকে যাবে।

জুলাই সনদ তৈরির অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো দলীয় প্রভাবমুক্ত মানবিক রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা। তাই জুলাই সনদের গুরুত্ব বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে কেন্দ্র করে জনগণের ম্যান্ডেট বা সমর্থন পাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে গণভোটের প্রস্তাব সামনে আসে।

গণভোটের মধ্য দিয়ে যদি জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আসা যায়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর এই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা ভবিষ্যতের জন্য অনেক সহজ হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনযাঁরা গণভোট দেবেন তাঁরা গণভোট নিয়ে কতটা জানেন১০ অক্টোবর ২০২৫

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রতি একভাবে দায়বদ্ধ থাকবে, যেখানে জনগণ বলতে পারবে যে জুলাই সনদকে সরাসরি তারাই বৈধতা দিয়েছে। এতে করে জনগণের অংশগ্রহণ রাষ্ট্রীয় পরিসরে বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থাশীল হতে শুরু করবে যে রাজনৈতিক আস্থা বিগত সময়ে আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনুপস্থিত ছিল।

রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে আস্থা এবং জবাবদিহিমূলক সম্পর্ক তৈরির জন্য গণভোট কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। গণভোট হচ্ছে জনগণের বৈধতা পাওয়া ও আস্থা অর্জন করার একটি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, সেটি আমরা বিগত সময়ে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত কয়েকটি গণভোটে দেখেছি; যদিও এর মধ্যে বিতর্কিত গণভোটের উদাহরণও রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি এটিকে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন যে গণভোটের মাধ্যমে জনমনে আরও বিভাজনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এসব কারণে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের প্রস্তাব সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মহলে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক ও আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা যেমন আসছে, তেমনি গণভোট আয়োজন করার প্রক্রিয়া নিয়েও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যেমন ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছে, তেমনি জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি প্রস্তাব করছে নির্বাচনের আগেই গণভোট করার। যদিও এনসিপি আগে বলেছিল যে তারাও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে।

গণভোটে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন দেশে ‘হ্যাঁ ‘বা ‘না’ বিকল্পের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় এখানে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে দুইয়ের অধিক বিকল্প থেকেও জনগণকে একটি বেছে নিতে হয়। গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে সব সময় মাথায় রাখতে হয়, এটি যেন জনগণের জন্য সহজ ও বোধগম্য হয়। তাই সাধারণত গণভোটের সময় একাধিক প্রশ্নের অবতারণা করা হয় না। কেননা, এটি সব শ্রেণি ও ধরনের ভোটারদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা নিয়ে করা হয়।

তবে এমন তাড়াহুড়া করে গণভোট আয়োজন করা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, সেটি আমাদের সতর্কভাবে ভেবে দেখতে হবে। কেননা, এখানে বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতার বিষয় আমরা উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত, জুলাই সনদ নিয়ে জনগণের মধ্যে যথাযথ জ্ঞান রয়েছে কি না, সেটি মূল্যায়ন করা। জনগণের মধ্যে যদি জুলাই সনদ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তাহলে গণভোট আয়োজনের প্রধান যৌক্তিকতা বিফলে যাবে, যদি জনগণ এই গণভোটকে প্রত্যাখ্যান করে। এতে করে জুলাই সনদে স্থান পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষিত থেকে যেতে পারে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করার জন্য আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। আবার গণভোটের জন্য নির্বাচন পেছানোর যুক্তি নিয়ে এলে দেশ আরও সংকটের মধ্যে পড়বে। তৃতীয়ত, জনগণকে প্রস্তুত না করে ও যথাযথ প্রচার না চালিয়ে গণভোট আয়োজিত হলে ভোটারদের উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে আশঙ্কা থেকে যেতে পারে, যেমনটি এ বছর জুনে ইতালিতে অনুষ্ঠিত শ্রম ও নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তনের গণভোটের সময় দেখা যায় যা গণভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আরও পড়ুনগণভোট অপ্রয়োজনীয়, তবে এরপরও যদি হয়...০৮ অক্টোবর ২০২৫

সে ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের সময় গণভোট আয়োজন করাই অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। কেননা, এতে আলাদা করে গণভোট আয়োজনের খরচ করতে হবে না এবং শ্রম দিতে হবে না। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগের এই সময়ে জুলাই সনদ নিয়ে জনগণকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য কিছুটা হলেও সুযোগ থাকবে, যার প্রভাব তাঁদের সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজন করার বড় সুবিধাটা হলো, যেহেতু সারা দেশের মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ–উদ্দীপনা কাজ করে, ফলে সেখানে ভোটারের উপস্থিতি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। ফলে গণভোটের জন্যও অধিকসংখ্যক জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়াটা সহজ ও যুক্তিসংগত হবে।

জুলাই সনদের মতো সংস্কারমূলক নীতি সাধারণ নাগরিকদের কাছে জটিল বিষয় মনে হতে পারে। কেননা, জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চললেও সাধারণের মধ্যে জুলাই সনদবিষয়ক বিস্তারিত ধ্যানধারণা কতটুকু তৈরি হয়েছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তাই গণভোটের আগে জণগণকে প্রস্তুত করতে হবে এবং তার জন্য সময় প্রয়োজন। তাই জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত হলেই তড়িঘড়ি করে গণভোট করা উচিত হবে না।

আরও পড়ুনসংসদ, পরিষদ না গণভোট— কোন পথে যাবে দেশ২০ আগস্ট ২০২৫

যদি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট করতে হয়, তাহলে গণভোটের আগে এই সনদের বিষয়গুলো নিয়ে জনপরিসরে বিস্তর আলোচনা ‍ও সচেতনতা গড়ে তোলার কিছুটা সময় পাওয়া যাবে, যা খুব জরুরি। তাই গণভোট আয়োজনের আগেই এ বিষয়ে জনগণকে যথাযথভাবে সজাগ করতে হবে। সেটি না করা হলে গণভোটের ন্যায্যতা নিয়ে পরবর্তীকালে প্রশ্ন উঠতে পারে।

গণভোটে বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন দেশে ‘হ্যাঁ ‘বা ‘না’ বিকল্পের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় এখানে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে দুইয়ের অধিক বিকল্প থেকেও জনগণকে একটি বেছে নিতে হয়।

গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে সব সময় মাথায় রাখতে হয়, এটি যেন জনগণের জন্য সহজ ও বোধগম্য হয়। তাই সাধারণত গণভোটের সময় একাধিক প্রশ্নের অবতারণা করা হয় না। কেননা, এটি সব শ্রেণি ও ধরনের ভোটারদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা বিবেচনা নিয়ে করা হয়।

যেহেতু আমাদের দেশের ভোটারদের গণসচেতনতা এবং জুলাই সনদ সম্পর্কে জানাশোনার পরিধি এখনো কম, তাই গণভোট কেবল জুলাই সনদের সঙ্গে একমত হওয়া বিষয়াবলির বাস্তবায়নে তাঁদের একটি ম্যান্ডেট নেওয়ার প্রক্রিয়া যা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না ‘ভোটের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তবে এখানে জটিলতা হলো, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারেনি, সেসব বিষয়কে কীভাবে দেখা হবে, তার রূপরেখা গণভোটের মাধ্যমে তুলে আনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় একটি অসম্ভব বিষয়।

তাই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের বিস্তারিত রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়াই সমীচীন হবে। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংসদে বিশদ আলোচনার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা গড়ে তোলার জন্য সর্বদলীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হবে বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়া। এটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় হওয়ার কারণে জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পাবে। আর সেটি করা গেলে ভবিষ্যতে জনগণের মধ্যে এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিভাজনের ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব হবে।

বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি জনগণের শক্তির উপর আস্থাশীল: ডা. জাহিদ
  • পিআর পদ্ধতি কি রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হবে
  • গণভোটে বিভাজনের ঝুঁকি এড়ানোর উপায় কী
  • আমাদের রাজনীতি হলো জনগণের জন্য : সাখাওয়াত 
  • আগামী নির্বাচনে জনগণ আরেকবার রায় দেবে, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক: মির্জা ফখরুল
  • পর্দায় আড়াল করা নীতি থেকে সরে আসুন
  • সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াত
  • পিআর আন্দোলনের লক্ষ্য নির্বাচন বিলম্বিত করা: মির্জা ফখরুল
  • পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যার দাবি কাবুলের, ১৯ আফগান ফাঁড়ি ‘দখল’ ইসলামাবাদের