এমন কোনো পণ্য নেই যা নকল হয় না: ক্যাব সভাপতি
Published: 14th, October 2025 GMT
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কোনো পণ্য কেনার আগে আমরা ভাবি যে এটি আসল নাকি নকল। বিদেশে গেলে আমরা এমন ভাবি না যে কোনো পণ্য নকল কি না। দেশে এমন কোনো পণ্য নেই, যা নকল হয় না।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ কথা বলেন। এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, একটা শিল্পপ্রতিষ্ঠান করতে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। সেই প্রতিষ্ঠানে যে তার (কেব্ল) ব্যবহার করা হয়, তাতে এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর ও চার নম্বর মানের তার আছে। সেই নকল তারে যখন রাতের বেলা বিদ্যুতের লোড নিতে না পেরে আগুন ধরে যায়, তখন সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা কাজ হারায়।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপউপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান তাঁর বক্তব্য আরও বলেন, দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি হালাল পণ্যের পরীক্ষাগার আছে। আমি নিজে সেই ল্যাব পরিদর্শন করেছি। উপজেলা পর্যায়ের একটা কলেজের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষাগারে যেমন ধুলাবালি পড়ে থাকে, সে রকম একটা পরীক্ষাগার। সেখানে উৎপাদিত পণ্যের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করার ক্ষমতা নেই। তবে বিশ্বের হালাল পণ্যের বাজারে রপ্তানি শুরু করতে পারলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে।
বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, মান শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও সেবার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাস এলেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশি মুনাফা করার প্রবণতা তৈরি হয়। বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম দেশেও পণ্যের মূল্য কমায়, আমরা কমাতে পারি না। আমাদের সেই নৈতিকতা এখনো তৈরি হয়নি। তাঁর মতে, বাজারে নকল কিংবা ভেজাল পণ্য ঠেকাতে আমাদের নজরদারি করার সক্ষমতা সীমিত।
মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তেমনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে ১৪টি প্রধান প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কার্যত লোকসানে রয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, বেসরকারি খাতের পক্ষে উচ্চমূল্যের যন্ত্রপাতি কিনে পণ্যের মান সনদ দেওয়া সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে সরকার জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশি হালাল পণ্যের স্বীকৃতি এখনো সীমিত। তাই বেসরকারি ও সরকারি খাতকে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের হালাল সনদপ্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-স্ত্রী ছিলেন কারখানায়, আগুন লাগার পর দুজনই নিখোঁজ
ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়ির আরএন ফ্যাশনস ভবনে আগুন নেভাতে যখন ফায়ার সার্ভিস কাজ করছিল, তখন বাইরে আরও অনেকের সঙ্গে আহাজারি করছিলেন ইয়াসমিন বেগম। তার হাতে মেয়ে মার্জিয়া সুলতানা ও জামাতা মোহাম্মদ জয়ের ছবি।
পাঁচতলা ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নিয়ে ছিল আরএন ফ্যাশন। সেখানে একসঙ্গে কাজ করতেন জয় ও মার্জিয়া। জয় অপারেটর, আর মার্জিয়া হেলপার।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে আহাজারি করতে দেখা যায় মার্জিয়ার মা ইয়াসমিন বেগমকে। তিনি বলছিলেন, ‘আল্লারে তুমি আমার মাইয়া আর তার জামাইডারে বাঁচাই দাও আল্লাহ। তাগো তুমি রক্ষা কইরো আল্লাহ।’
প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় মার্জিয়ার বাবা মোহাম্মদ সুলতানের। তিনি বলেন, দুপুর ১২টার একটু আগে আগুন লাগার খবর শুনে প্রথমে তিনি ফোন করেন মেয়েজামাই জয়কে। কিন্তু জয় ফোন ধরেননি। পরে মেয়ে মার্জিয়াকে ফোন করেন। মেয়ে ফোন ধরলেও বিস্তারিত বলতে পারেননি।
সুলতান বলেন, ‘মেয়েরে জিগাইলাম, আম্মু তুমি কই? আগুন নাকি লাগসে? মেয়ে কানতে কানতে কইল, আগুন লাগসে অফিসে। বের হতে পারছি না। অনেক ধোঁয়া, অন্ধকার। বের হওয়া পথ পাচ্ছি না।’
মেয়ের সঙ্গে এটুকুই কথা হয় সুলতানের। এরপর দৌড়ে গার্মেন্টেসের কাছে চলে আসেন। এসে দেখেন, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এর পর থেকে মেয়ে আর জামাতার মুঠোফোনে কল করে গেলেও তা বন্ধই পাচ্ছেন।
সুলতান জানান, জয় আর মার্জিয়ার বিয়ে হয় ছয় মাস আগে। এই কারখানায় কাজের সুবাদেই দুজনের পরিচয় হয়, তা থেকে পরিণয়। স্বামী-স্ত্রী দুজন একসঙ্গে কারখানায় আসা-যাওয়া করতেন।
মেয়ে ও জামাতার খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ নিয়ে কারখানার সামনে অপেক্ষায় ছিলেন সুলতান।
ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকাণ্ডের পর ১৬টি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। তবে দেহগুলো এতটাই পুড়েছে যে কোনো লাশই শনাক্ত করা যায়নি।
ভবনটিতে আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। তবে ছাদের গেট বন্ধ থাকায় অনেকে আটকা পড়েন। তাঁদের অনেকের খোঁজ এখনো মেলেনি।