সরকারের উদ্যোগে দেশজুড়ে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে টাইফয়েডের টিকা, তার সঙ্গে নানা গুজবও ছড়াচ্ছে। এই টিকা নিলে মেয়েরা ভবিষ্যতে মা হতে পারবে না, ছেলেশিশুরা হারাবে পুরুষত্ব, এই টিকার পেছনে বৈশ্বিক বাণিজ্যের খেলা আছে, বাংলাদেশ গরিব দেশ বলে শিশুদের গিনিপিগ বানানো হচ্ছে—এমন সব গুজবে অভিভাবকেরা হয়ে পড়েছেন বিভ্রান্তিতে।

এমন গুজব নতুন নয়। কোভিড টিকা নিয়েও তেমন গুজব ছড়ানোর দিকটি দেখিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাহমিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলতে গেলে বাংলাদেশে তেমন কিছুই হয়নি; যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে নেতিবাচক প্রচারে হইচই পড়ে গিয়েছিল। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন বন্দুকের মতো যন্ত্র দিয়ে কলেরার টিকা দেওয়া হতো। তখনো গুজব ছিল, এ টিকা নিলে মেয়েদের আর বাচ্চা হবে না। এগুলো সবই ভুল তথ্য।’

১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফরও বলেছিলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত ও অনুমোদিত এ টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। বাংলাদেশে এ টিকা পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এটি প্রোটিন ও শর্করা উপাদানে গঠিত, যা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করে। এতে শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো উপকরণ নেই।’

দেশে ২০২১ সালে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার, এদের ৬৮ শতাংশ ছিল শিশু।

টাইফয়েডের এই টিকা সৌদি হালাল সেন্টারের হালাল সনদপ্রাপ্ত জানিয়ে কোনো ধরনের গুজব বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সহায়তায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআাই) নেতৃত্বে দেশব্যাপী শিশুদের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বে অষ্টম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ধরনের ক্যাম্পেইন চালু করল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ভারতের বায়োলজিক্যাল ই কোম্পানির তৈরি টিকাটি সরকার পেয়েছে গ্যাভির কাছ থেকে। এর আগে পাকিস্তান, নেপালসহ নানা দেশে শিশুদের এ টিকা দেওয়া হয়।

এই টিকাদান শুরুর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে শুরু করে শহর–গ্রামে পারিবারিক আড্ডা কিংবা আলোচনায় তা উঠে আসে আলোচনায়। এর মধ্যে গুজব ছড়ানোয় অনেক অভিভাবক দোটানায় রয়েছেন সন্তানদের এই টিকা দেওয়াবেন কি না?

এবার ক্যাম্পেইনে ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন অব্যাহত আছে। ১৮ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২ কোটির বেশি শিশু নিবন্ধনের আওতায় আসে। এর মধ্যে টিকা নিয়েছে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি শিশু। ক্যাম্পেইন চলবে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত।

বগুড়ার ধুনটের মাঠপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লতিফা সুকন্যা প্রথম আলোকে বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। টিকা নিলে সন্তান হবে না, ক্যানসার হবে, করোনার টিকা নেওয়ার পর অনেকের নাকি অ্যালার্জি হয়েছিল, তাই এ টিকা নেওয়া যাবে না, এমন অনেক কথা বলছিলেন অভিভাবকেরা। তাই টিকা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রচার আরও বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল।

প্রতিরোধযোগ্য মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে টাইফয়েড জ্বর অন্যতম। ‘সালমোনেলা টাইফি’ নামে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগ হয়। দূষিত পানি, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাব ও খাবারের মাধ্যমে টাইফয়েড ছড়ায়।

টিকা নেওয়ার সময় পাশে সহপাঠীরা। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ইফয় ড এই ট ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ আটক

জাতীয় প্রেসক্লাব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি সাংবাদিক শওকত মাহমুদকে আজ রোববার আটক করা হয়েছে। তাঁর বাসার সামনে থেকে তাঁকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শওকত মাহমুদকে কোথা থেকে কোন মামলায় আটক করা হয়েছে, তা একটু পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত এপ্রিলে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। দলটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব শওকত মাহমুদ। তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ