বরগুনায় বন উজাড় করে মাছের ঘের, ঝুঁকিতে উপকূল রক্ষা বাঁধ
Published: 28th, July 2025 GMT
ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো নানা দুর্যোগ মোকাবিলায় উপকূলে ঢাল হিসেবে কাজ করে শ্বাসমূলীয় (ম্যানগ্রোভ) বন। বরগুনার তালতলী উপজেলায় সেই জীবন্ত রক্ষাকবচ নিজেই এখন বিপন্ন। আন্ধারমানিক নদের দুই তীরে প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধের ঢালে শ্বাসমূলীয় প্রজাতির সৃজিত বনাঞ্চল সাবাড় করে গড়ে তোলা হয়েছে অর্ধশতাধিক মাছের ঘের, এতে বাঁধটি হুমকিতে পড়েছে।
স্থানীয় ব্যক্তি ও পরিবেশকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একটি–দুটি করে ঘের গড়ে তোলা হলেও সম্প্রতি ঘের তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। বনের ওপর এমন অনাচারের মাধ্যমে শুধু বনভূমির পরিমাণই কমছে না, হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং উপকূলীয় এলাকার বাঁধ। এসব ঘেরের পাড়ে বাঁধের ওপর নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে বাঁধের নিরাপত্তায় নদের পাড় (রিভার সাইড) ও অভ্যন্তরের (কান্ট্রি সাইড) ২০ ফুটের মধ্যে পুকুর-দিঘি বা ঘের খনন নিষিদ্ধ হলেও এই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না এসব ঘেরমালিকেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঁধঘেঁষা এলাকায় ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে খনন বা জলাধার তৈরি করাও বাঁধের গঠনগত ভারসাম্য বিনষ্ট করে, যা ভবিষ্যৎ দুর্যোগের সময় ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
সম্প্রতি সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তালতলীর শারিকখালী ইউনিয়নের নিওপাড়া থেকে চাউলাপাড়া পর্যন্ত আন্ধারমানিক নদের তীরের ২০ কিলোমটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে চরে সৃজিত শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল কেটে মাছের ঘের তৈরি করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। নতুন করে আরও কয়েক ব্যক্তিকে গাছপালা কেটে খননযন্ত্র দিয়ে ঘেরের জলাধার নির্মাণ করতে দেখা যায়। এতে একদিকে যেমন বনাঞ্চল সাবাড় হয়েছে, তেমনি বাঁধ ঘেঁষে এমন জলাধার খনন করায় বাঁধের স্থায়িত্ব হুমকিতে পড়েছে।
ওই এলাকার আঙ্গারপাড়া গ্রামে দেখা যায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেঁষে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। সেখানে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি কেটে ঘেরের জলাধার নির্মাণ করা হচ্ছে।
আবদুল খালেক মিয়া নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা এই ঘের বানাচ্ছেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। জানতে চাইলে আবদুল খালেক মিয়া বলেন, ‘এই জমি আমার রেকর্ডীয়। এখানে সরকারি জমি নেই।’ নদের চরের জমি কীভাবে ব্যক্তিমালিকানার হয়, এমন প্রশ্নে বলেন, ‘একসময় আমাদের জমি নদে ভেঙে যায়। বহু বছর পর পুনরায় চর জেগে ওঠে।’ তবে গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি।
বনাঞ্চল সাবাড় হয়েছে, তেমনি বাঁধ ঘেঁষে এমন জলাধার খনন করায় বাঁধের স্থায়িত্ব হুমকিতে পড়েছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জল ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহাসড়কে নির্মাণকাজের সময় গ্যাস লাইনে ছিদ্র, সরবরাহ বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে গ্রাহক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার লেন মহাসড়কের নির্মাণকাজের সময় এক্সকাভেটরের (খননযন্ত্র) আঘাতে গ্যাসের সংযোগ লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ। এতে জেলা শহরের প্রায় ১৫ হাজার আবাসিক-বাণিজ্যিক গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে শহরের উলচাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করেছে বিজিডিসিএলের কারিগরি দল। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গেছে।
বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপমহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল চারটার দিকে শহরের ভাদুঘর থেকে উলচাপাড়া রোডের গ্যাস সঞ্চালনের ৬ ইঞ্চি লাইন ছিদ্র হয়ে যায়। গ্যাসের সঞ্চালন লাইন সচল রেখে মেরামত করলে ওই স্থানে আগুন ধরে যাবে। তাই সদর উপজেলার ঘাটুরা অংশ থেকে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দক্ষিণ দিকে জেলা শহরের সব আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা ভেবে কারিগরি দল দ্রুত মেরামতকাজ শুরু করেছে। ২০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে শহরের মধ্যেই প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।
বাখরাবাদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। আজ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উলচাপাড়া অংশে খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছিল। সে সময় ওই যন্ত্রের আঘাতে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ৬ ইঞ্চি পাইপ ছিদ্র হয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। বিষয়টি বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তাদের কারিগরি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। গ্যাসের সংযোগ লাইন মেরামত করতে সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকায় থাকা গ্যাস সঞ্চালন লাইন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরসহ পৌর এলাকায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
কালাইশ্রীপাড়ার মনির হোসেন বলেন, ‘বিকেল চারটার পর থেকে গ্যাস নেই। রান্নার কাজ বন্ধ রয়েছে। শিশুদের জন্য কোনো খাবার রান্না করতে পারছেন না আমার স্ত্রী।’
কাজীপাড়ার বাসিন্দা তমালিকা দেবনাথ বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার নাশতা বানাতে রান্নাঘরে যাই। গিয়ে দেখি চুলায় গ্যাস আসছে না। কবে আসবে জানি না। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। ছোট বাচ্চারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে।’
বিজিডিসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার রাজস্ব বিভাগের উপব্যবস্থাপক গোলাম মোক্তাদির প্রথম আলোকে বলেন, ‘উলচাপাড়ায় গ্যাসের লাইন ছিদ্র হয়ে গেছে। তাই ঘাটুরা থেকে গ্যাসের সঞ্চালন লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পুরো শহরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের কারিগরি দল কাজ শুরু করেছে।’