৭ জুলাই, বেলা দেড়টা। মিরপুর-২ নম্বর, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ফুটপাত। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। মাঝবয়সী এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে জেব্রা ক্রসিং ধরে চওড়া রাস্তাটা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে নাম বললেন, শরিফুল ইসলাম।
মাঝবয়সী মানুষটি পেশায় চাকরিজীবী। গত সোমবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এসেছিলেন নিয়মিত চেকআপ করাতে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। প্রায় ১০ মিনিট ধরে জেব্রা ক্রসিং পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কেউ থামছে না। এই শহরে যারা গাড়ি চালায়, তাদের জানা উচিত, জেব্রা ক্রসিং নামে একটা কিছু আছে, যেখানে পথচারীর জটলা দেখলে থামতে হয়।’
ঢাকার রাস্তায় উল্টোপথে যানবাহন চলাচল বেড়ে গেছে। যানবাহনের চালকেরা নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না। ছোটখাটো থেকে শুরু করে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। গত ২৯ জুন এক দিনেই রাজধানীর উত্তরা ও তেজগাঁওয়ে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন মারা যান।
আমরা যারা নিয়মিত রাস্তায় চলাচল করি, তারাও কিন্তু ট্রাফিক আইন মানছি না। ঢাকার রাস্তায় কেউ আসলে শৃঙ্খলা মানছে না। কামরুল হাসান, চাকরিজীবীগত ৩০ জুন বেলা দেড়টায় মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে দেখা যায়, চারটি সিগন্যালের প্রতিটি প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট বিরতিতে ছাড়া হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন সূত্রে জানা যায়, ঢাকার ট্রাফিক সার্জেন্টরা সাধারণত ‘ইনকামিং’ ও ‘আউটগোয়িং’ (অ্যানালগ) ব্যবস্থার মাধ্যমে সিগন্যালগুলো পরিচালনা করেন। এ ক্ষেত্রে নগরবাসী যখন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকালবেলা মূল শহরে প্রবেশ করেন, তখন ‘ইনকামিং’ সিগন্যাল সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মিনিট বন্ধ রাখা হয়। আবার বিকেলবেলা যখন মূল শহর থেকে প্রান্তে চলে যায়, তখন ‘আউটগোয়িং’ সিগন্যালগুলোর বিরতি কমতে থাকে।
এ ব্যবস্থা ঢাকার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালে অনুসরণ করা হয়। ভিআইপি মুভমেন্ট ছাড়া দুপুর কিংবা রাতে সিগন্যালগুলো প্রায় সমান অনুপাতে বন্ধ ও খোলা থাকে। কিন্তু মিরপুর-১০ গোলচত্বরে এ নিয়ম কাজে আসছে না।
গোলচত্বরে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক সিগন্যালের দায়িত্ব পালন করছিলেন সার্জেন্ট আবদুল আজিজ। তিনি বলেন, ‘মিরপুর-১০ গোলচত্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক পয়েন্ট। বৃহত্তর মিরপুরের লাখো মানুষ এই সিগন্যাল ব্যবহার করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। কিন্তু দেখেন, কেউ ট্রাফিক আইন মানছেন না। বিশেষ করে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে উল্টো ও বেপরোয়া চলাচলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়েছে।’
মিরপুর সিগন্যাল ঘিরে প্রতিটি রাস্তাতেই দোকানের ছড়াছড়ি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর-১ ও ১৩ নম্বরমুখী রাস্তায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজার বসে। এর মধ্যে গোদের উপর বিষফোড়া হচ্ছে অটোরিকশার উৎপাত। তাই মিরপুর-১০ গোলচত্বরে দিনের শুরু থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত লম্বা বিরতিতে প্রতিটি সিগন্যাল ছাড়ে।
মিরপুর-১০ থেকে পশ্চিমমুখী রাস্তাটি দিয়ে নগরবাসী মিরপুর ১৩, ১৪, ভাষানটেক, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করে। সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ সিগন্যাল পেরোনো গাড়িগুলো ১৩ নম্বরের দিকে যেতে পারছিল না। কারণ, অটোরিকশা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান জটলা পাকিয়ে মূল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল।
এই পথ ব্যবহার করে প্রায় প্রতিদিন মিরপুর-১৪ যাতায়াত করেন চাকরিজীবী কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা নিয়মিত রাস্তায় চলাচল করি, তারাও কিন্তু ট্রাফিক আইন মানছি না। ঢাকার রাস্তায় কেউ আসলে শৃঙ্খলা মানছে না। দেখুন, এত বড় ওভারব্রিজ রয়েছে। কিন্তু অল্প কিছু মানুষ এর ব্যবহার করছে। সবাই যদি রাস্তা দিয়ে হাঁটে, তবে গাড়ি চলবে কীভাবে?’
ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে গত ২৯ জুন ভোররাতে ঢাকা নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একই পরিবারের ছিলেন তিনজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০২৪ সালে সারা দেশে ৮ হাজার ৫৪৩ জন মানুষ সড়কে প্রাণ হারিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। এই মৃত্যুর ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঘটেছে কেবল ঢাকা মহানগরে।
রাজধানীতে সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ব যবস থ আইন ম
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে গত ১২ দিন ধরে কিশোরী আনিশা রানী নিখোঁজ
বন্দরে ভাড়াটিয়া বাসা থেকে বের হয়ে গত ১২ দিন ধরে আনিশা রানী দাস (১৬) নামে এক কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ কিশোরী আনিশা রানী দাস সুদূর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসরিননগর থানার কান্দিপাড়া এলাকার ভক্ত দাসের মেয়ে। ব
র্তমানে তারা বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের কেওঢালাস্থ মধু মিয়ার বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিল।
অনেক স্থানে খোঁজাখুঁজি করে নিখোঁজ কিশোরী কোন হদিস না পেয়ে এ ব্যাপারে নিখোঁজের পিতা ভক্তদাস বাদী হয়ে বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে বন্দর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি এন্ট্রি করেছেন।
এর আগে গত শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ৫টায় উল্লেখিত ভাড়াটিয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়। পুলিশ জিডি পেয়ে নিখোঁজ কিশোরীকে সন্ধান পাওয়ার জন্য উদ্ধার অভিযান অব্যহত রেখেছে।