মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে হত্যা মামলার আসামিকে গুলি করে হত্যা, গুলিবিদ্ধ আরও ৬
Published: 28th, July 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মান্নান (৪৫) নামের এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বড় কালীপুরা গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের দাবি, বালুমহালের দ্বন্দ্বের জেরে ‘নৌ ডাকাত’ নয়ন ও পিয়াসের পক্ষের হামলায় আবদুল মান্নান নিহত হয়েছেন। মান্নান নিজেও হত্যা, মাদকসহ ৬ মামলার আসামি ছিলেন। তিনি একই উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের জৈষ্ঠীতলা এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে। আহত ব্যক্তিরা হলেন হৃদয় (২৮), আতিকুর (৩০), হাসিব (৩৪), শ্যামল (৩০), নয়ন (২৫) ও হামীম (৩২)। হতাহত সবাই মান্নানের সহযোগী। ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক। হৃদয়কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে মেঘনা নদীর বড় কালীপুরা এলাকায় বালুমহালের পাশে কয়েকজন যুবক সশস্ত্র ও হেলমেট পরা অবস্থায় একটি স্পিডবোটে পাহারা দিচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টা-১০টার মধ্যে ৬–৭ জনকে একটি ট্রলারে নিয়ে ওই এলাকায় যান মান্নান। ওই সময় মান্নান ও তাঁর লোকদের ধাওয়া দেন সশস্ত্র যুবকেরা। একপর্যায়ে মান্নানের পক্ষের লোকজনকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ট্রলারের ওপর লুটিয়ে পড়েন মান্নান। পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন হৃদয়। বাকিরা ট্রলার থেকে লাফিয়ে পড়েন। তবে তাঁদের গায়ে ছররা গুলি লাগে।
আরও পড়ুনমেঘনা নদীতে ‘বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে’ প্রতিপক্ষের গুলিতে দুজন নিহত৩০ জানুয়ারি ২০২৫নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, গজারিয়ার ষোলআনি ও কালীপুরা এলাকায় বৈধ বালুমহাল আছে। সেখান থেকে মান্নান প্রায় সময় লোকজন নিয়ে টাকাপয়সা আনতেন। গুয়াগাছিয়া কালীপুরা এলাকায় রাতে অবৈধভাবে বালু তুলত নয়ন ও পিয়াসদের একটি দল। সেখানেও টাকা চাইতেন মান্নান। অবৈধ মহালের কারণে বৈধ বালুমহালে কম বিক্রি হতো। সব মিলিয়ে বৈধ মহাল, অবৈধ মহাল ও আবদুল মান্নান পক্ষের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চলছিল।
এদিকে মান্নানকে কয়েক দিন ধরে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে জানান তাঁর স্ত্রী সুমি বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মান্নান আমাকে বলেছিল, কারা যেন তাকে মেরে ফেলতে চায়। আজ সকালে আমরা খবর পেলাম, মান্নানকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, স্থানীয় সৈকত হোসেন, জুয়েল ও গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের কুখ্যাত ডাকাত নয়ন-পিয়াস বাহিনীর লোকজন ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’
আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মান্নানের বুকে দুটি গুলির চিহ্ন আছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসাও উদ্ধার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, মান্নান গজারিয়া উপজেলার একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৬টি মামলা আছে। বালু ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাটি হতে পারে। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
আরও পড়ুনমুন্সিগঞ্জে মেঘনার তীর ঘেঁষে অবৈধ বালু উত্তোলন, গ্রামবাসীর ধাওয়া১৯ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫