হালদা ও কর্ণফুলীর পানি বেড়ে ডুবেছে রাউজানের ৫০টি গ্রাম
Published: 28th, July 2025 GMT
প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানি ৬ থেকে ৮ ফুট বেড়েছে। এর ফলে জেলার রাউজানে এই দুই নদীর তীরে অবস্থিত ৫০টি গ্রাম ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার শিকার ওই সব গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। রাস্তা ও বসতঘরের পাশাপাশি তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা, মাছের পুকুর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতির শিকার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, সামমাহালদারপাড়া, ছামিদর কোয়াং, কচুখাইন, দক্ষিণ নোয়াপাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম, সওদাগরপাড়া, সুজারপাড়া, পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনা ও বৈইজ্জাখালি। এসব গ্রামে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ির পাশাপাশি আমন ফসল ও মাছের কয়েক শ পুকুর ভেসে গেছে।
আজ সোমবার বিকেলে হালদা নদীর তীরবর্তী নোয়াপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ নোয়াপাড়া, মোকামীপাড়া, কচুখাইন, সামমাহালদারপাড়া, পশ্চিম নোয়াপাড়া ও উরকিরচরে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকা এবং বের হওয়ার সব সড়ক কোমর থেকে বুকসমান পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামগুলোর বেশির ভাগ পরিবার ঘরবন্দী সময় কাটাচ্ছে। শত শত একর কৃষিজমি ডুবে আছে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার পানিতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, হালদা নদীর হাটহাজারীর অংশে বেড়িবাঁধ দেওয়া হলেও রাউজান অংশে তা দেওয়া হয়নি। এ কারণে অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে। গত তিন দিনে বৃষ্টি থাকায় পানি আরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা। নদীপাড়ের শত শত কৃষিজমি এ কারণে অরক্ষিত। বর্ষায় পানি বাড়লেই চাষ করা জমিগুলো ১০ থেকে ১২ ফুট পানিতে ডুবে থাকে।
মোকামীপাড়া গ্রামের তরুণ মৎস্য খামারি কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, তাঁদের গ্রামটি হালদাতীরবর্তী। তবে বেড়িবাঁধ হয়নি। কর্ণফুলী ও হালদার পানি বাড়লেই রাউজানের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। এ কারণে বছরের ছয় মাস তাঁদের পানিবন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইসমাইল নামের এক কৃষক বলেন, তিনি এবার ১০ শতক জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু এসব খেতে হালদার পানি ঢুকে পড়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
রাউজান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম কবির প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নানা প্রস্তুতি থাকে ফসল রক্ষার। তবে নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে জোয়ারের পানি ঢুকে ফসল নষ্ট করেছে। পানি কমলে কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতির তালিকা করবেন।
আব্দুল শুক্কুর নামের মৎস্যচাষি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কয়েকজন মিলে চারটি বড় পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন। এসব পুকুরের একটিতেও কোনো মাছ অবশিষ্ট নেই। সব মাছ ৫ থেকে ৬ ফুট পানির স্রোতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তবে তাঁরা হাত জাল ফেলে কিছু মাছ ধরতে পেরেছেন।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতি হওয়ার খবর তাঁদের কাছে আসছে। পাশাপাশি মাছের ঘের এবং ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা তালিকা করে সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বরাদ্দ চাইব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিনা মূল্যে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস শনাক্তকরণ কর্মসুচি
ছবি: সংগৃহীত